|
|
|
|
জোড়া অস্বস্তির মুখে রাজ্য সরকার |
জমি বিল পিছোচ্ছে,
নয়া
জটিলতা জিটিএ নিয়েও
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
|
রাজ্য সরকারের নতুন জমি-নীতি নিয়ে প্রস্তাবিত বিল সোমবার বিধানসভায় আসছে না। ভূমি দফতরের মন্ত্রী হিসাবে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই এই দিন বিলটি বিধানসভায় পেশ করা কথা ছিল। ওই বিল পিছিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এর মধ্যেই বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাক্ট বা জিটিএ বিল নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘনের ‘গুরুতর’ অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি সূত্রের খবর, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন, রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসেট্লমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১১’ শীর্ষক বিলটি এখনই বিধানসভায় আনার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্রের। যে কারণে তা রাজ্যপালের বিধিবদ্ধ স্বাক্ষরের জন্যও পাঠানো হয়নি। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ১৮৯৪ সালের আইনটি সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত বিলটি এখনও সংসদে পাশ হয়নি। অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ, মূল বিলটি সংসদে পাশ হলে তবেই রাজ্যে এই সংক্রান্ত বিল আনা ‘বাঞ্ছনীয়’। নচেৎ ১৮৯৪ সালের কেন্দ্রীয় আইনটির সঙ্গে ‘সংঘাত’ বেধে নতুন ‘জটিলতা’ দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভার চলতি অধিবেশনে প্রস্তাবিত বিলটি আদৌ পেশ হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে সোমবার যে বিলটি আসছে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। ঘটনাচক্রে, কেন্দ্রের বিলটি আটকে থাকার পিছনে তৃণমূলের আপত্তিও অন্যতম কারণ।
জমি-আন্দোলনে ভর করে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর সরকারের নতুন জমি-নীতি ঠিক করতে প্রাক্তন ভূমি আমলা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দুই সদস্যের কমিটি গড়েছিলেন। পনেরো দিনের মধ্যে সেই কমিটি তাদের সুপারিশ জমা দেয়। সামগ্রিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়েই দেবব্রতবাবুরা সুপারিশ করেছিলেন, দো-ফসলি, বহু ফসলি, বনাঞ্চলের জমিতে যাতে কোনও শিল্প গড়ে উঠতে না-পারে, সে জন্য সেগুলিকে ‘নো-ইন্ড্রাস্ট্রি জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। এই সুপারিশ যায় সাত সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে যার নেতৃত্ব ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কমিটিতে ছিলেন বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং মণীশ গুপ্তের মতো প্রাক্তন আমলা এবং অধুনা মন্ত্রীও।
মোটের উপরে দেবব্রতবাবুদের সুপারিশের সঙ্গে মন্ত্রিগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তের বিশেষ তফাত নেই। তবে দেবব্রতবাবুরা বলেছিলেন, বেসরকারি শিল্পের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। মন্ত্রিগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত, শুধু বেসরকারি শিল্পই নয়, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রেও জমি অধিগ্রহণ করবে না সরকার। একমাত্র রাস্তা, সেতু, বাঁধ বা রেলের মতো সরকারি কাজে অধিগ্রহণ করা হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অভ্যন্তরীণ রিাপত্তার মতো কোনও আপৎকালীন কারণেও অধিগ্রহণ করা যাবে। তবে সবটাই জমি মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে, সহমতের ভিত্তিতে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মন্ত্রিগোষ্ঠীর জমি-নীতির কয়েকটি বিষয়ে তাঁর আপত্তি জানিয়ে সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে ‘নোট’ দিয়েছিলেন দেবব্রতবাবু। সেই ‘নোটে’র কথাও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এমনকী, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের হাতেও সেই লিখিত আপত্তি পৌঁছে গিয়েছে বলে সরকার পক্ষ খবর পেয়েছে! বস্তুত, তাঁদের কাছে যে ওই ‘নোট’টি রয়েছে, তা রাজ্য মন্ত্রিসভার এক প্রথমসারির সদস্যকে জানিয়েছেন বিরোধী শিবিরের এক প্রথমসারির নেতাই। সার্বিক ভাবেই তাই রাজ্যের প্রস্তাবিত বিলটির ভবিষ্যৎ ‘অনিশ্চিত’।
আইনি আপত্তির পাশাপাশিই বিলটি পেশের আগে বিধানসভার রীতি সংক্রান্ত কিছু ‘জটিলতা’ও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’দিন আগে ভূমি সংক্রান্ত একটি সংশোধনী বিল আকারে পেশ করার পর মন্ত্রী সুব্রতবাবু জানিয়েছিলেন, ভূমিমন্ত্রী মমতা নিজেই মূল বিলটি পেশ করবেন। সেই মতো তাঁর কাছে সময়ও চাওয়া হয়েছিল। মমতা নিজেই সোমবার সময় নির্দিষ্ট করেন। যে হেতু সপ্তাহের ওই দিনটি তাঁর প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত বিলটির প্রতিলিপি বিধায়কদের মধ্যে বিলি করা হয়নি। শনি এবং রবিবার বিধানসভা
ছুটি থাকায় বিলের প্রতিলিপি বিলি করার অবকাশও নেই। বিলে মুখ্যমন্ত্রী তথা ভূমিমন্ত্রীর সইও হয়নি। সম্ভবত অ্যাডভোকেট জেনারেলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতেই। মমতা শুক্রবার রাত পর্যন্ত দিল্লিতে ছিলেন। তাই ওই বিলে তাঁর সই হয়নি। ফলে সেটি বিধায়কদের মধ্যে বিলিও হয়নি। শনি এবং রবিবার বিধানসভা ছুটি থাকায় বিলের প্রতিলিপি বিলি করার অবকাশও নেই। বিলে মুখ্যমন্ত্রী তথা ভূমিমন্ত্রীর সইও হয়নি। সম্ভবত অ্যাডভোকেট জেনারেলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতেই। মমতা শুক্রবার রাত পর্যন্ত দিল্লিতে ছিলেন। তাই ওই বিলে তাঁর সই হয়নি। ফলে সেটি বিধায়কদের মধ্যে বিলিও হয়নি। সে কথা তাঁকে কে জানাবেন, তা-ই নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে এ দিন টানাপোড়েন দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত এক বর্ষীয়ান মন্ত্রী এসএমএস করে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানান। সোমবারের আগে এ দিনই ছিল বিধানসভায় কাজের শেষ দিন। এই ধরনের বিল অন্তত পাঁচ দিন আগে বিধানসভায় বিলি করতে হয়। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী সই করে দিলেও সে দিনই ওই বিল পেশে তীব্র আপত্তি করবে বিরোধীরা। সব মিলিয়ে তাই বিলটি সোমবার আনা হবে না বলে সরকারি তরফে সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো এ দিন সোমবারের যে কার্যসূচি মন্ত্রী এবং বিধায়কদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে, তাতেও বিলটির কথা রাখা হয়নি।
মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “বিলটি সরকারের কাছ থেকে এখনও বিধানসভায় এসে পৌঁছয়নি। এসে পৌঁছলেই নির্দিষ্ট সময়ে তা সভায় পেশ করা হবে।” চলতি অধিবেশনেই কি তা পেশ হবে? শোভনদেববাবু বলেন, “সেটা বলতে পারছি না।” বিরোধী শিবিরের এক প্রথম সারির নেতার অবশ্য বক্তব্য, “বিলের প্রতিলিপিই তো আসেনি! এই সরকার যে ভাবে চলছে, কবে প্রতিলিপি দেবে আর কবে পেশ করবে, বোঝা সম্ভব নয়!”
অন্য দিকে, পাশ হয়ে-যাওয়া গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসন (জিটিএ) বিলটিতে সাংবিধানিক বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে এ দিনই রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে অভিযোগ করে তাঁকে ওই বিলে স্বাক্ষর না-করতে আর্জি জানিয়েছেন বামফ্রন্টের পরিষদীয় নেতৃত্ব। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর কথায়, “নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা এবং বিভ্রান্তির মধ্যে জিটিএ বিল বিধানসভায় পাশ করানো হয়েছিল। সরকার পক্ষই ৫৪টা সংশোধনী দিয়েছিল! আমরা ১৪টা। কিন্তু সংশোধনীগুলি তৈরি হয়ে আসার পরে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী যেগুলি মেনে নেওয়ার কথা বলেছিলেন, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যা ঘোষণা করেছিলেন, ভোটে যা পাশ হয়েছিল, সেগুলি গৃহীতই হয়নি! ভারতের কোনও রাজ্যে অতীতে এমন ঘটনা ঘটেনি।”
দৃষ্টান্ত দিয়ে বামেদের বক্তব্য, সংশোধনী ১, ৫, ১৪ মুখ্যমন্ত্রী ‘গৃহীত হল’ বলার পরে গৃহীত হয়নি। বিলের ৩৬ নম্বর ধারায় জেলা পরিষদের কথা রেখে দেওয়া হয়েছে, দার্জিলিঙের পাহাড়ে সাংবিধানিক ভাবেই যার অস্তিত্বই নেই!
|
জমি তত্ত্ব |
• বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নয়
• যৌথ উদ্যোগের জন্যও অধিগ্রহণ নয়
• রাস্তা-সেতু-বাঁধ-রেলের জন্য অধিগ্রহণ
• পরিবার পিছু এক জনের চাকরি
• চাকরি করার কেউ না থাকলে এককালীন ন্যূনতম ২ লক্ষ
• ২০ বছর ধরে মাসিক পেনশন
• জমির দাম গ্রামে বাজারদরের চার গুণ, শহরে দ্বিগুণ
• জমির দামের ১০০ শতাংশ সোলাসিয়াম |
|
|
|
|
|
|