|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
ধ্বস্ত বাংলাদেশের নিবিড় সালতামামি |
হাসান আজিজুল হক-এর ‘বিধবাদের কথা’ ঢাকা থেকে প্রথমে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়, পরে গ্রন্থিত হয় বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প গ্রন্থে। এ বার ডানা পাবলিশার্স (৪৪/১এ, বেনিয়াটোলা লেন) থেকে বই হয়ে বেরিয়েছে: পাঠে-আন্তর্পাঠে/ বিধবাদের কথা (১০০.০০)। ‘এটিকে বড়ো গল্প, নভলেট বা উপন্যাস কোন অভিধায় চিহ্নিত করা হবে তা নিয়ে পাঠক/ সমালোচকদের মধ্যে প্রবল মতদ্বৈধ আছে।... স্বাধীনতার পর তিনটি দশক পেরিয়ে এসে এ যেন ধ্বস্ত বাংলাদেশের নিবিড় সালতামামি...’, কথামুখ-এ জানিয়েছেন বইটির সম্পাদক সুশীল সাহা মধুবন্তী সোম। মূল আখ্যানটির সঙ্গে রয়েছে প্রাসঙ্গিক আলোচনা, একটিতে অশ্রুকুমার সিকদার লিখছেন “আকারে-ছোটো কিন্তু ভাববিস্তারে বড় উপন্যাস ‘বিধবাদের কথা’ পড়ে এই লেখকের প্রতি আমার অনুরাগ আরও বেড়ে গেল।” আর রয়েছে আখ্যানটির অননুকরণীয় গদ্য: ‘ডানা ভাঙা পাখির মতো ঘাড় গুঁজে পড়ে আছে জানালাটা, ঘর ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে। কোনোরকমে জানালাটা ঠেস দিয়ে লাগিয়ে অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে মেঝেয় পড়ে থাকা জিনিসগুলো খুঁজে খুঁজে বেড়ায় দুবোন। রাহেলা সালেহা, দুবছরের ছোটো-বড়ো, ফর্শা-কালো, অবিকল একরকম দেখতে দুবোন।’
চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা অজানা, কম জানা অথচ প্রয়োজনীয় তথ্যের সংকলন সোমা মুখোপাধ্যায়ের চিকিৎসার অধিকার (গাঙচিল, ১২৫.০০), যা চিকিৎসক বা হাসপাতালের দ্বারস্থ হওয়ার সময় দিশা হতে পারে। ‘উৎসমুখ’-এ সোমা জানিয়েছেন ‘অর্থের বিনিময়ে অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা কিনলেও বহু ক্ষেত্রেই ন্যূনতম সম্মানটুকু পান না।... যে যে পরিষেবা প্রাপ্য হিসেবে, অধিকার হিসেবে বুঝে নিতে পেরেছি, অন্যদের মধ্যে সেই অধিকারের বোধ জাগিয়ে তোলাটা জরুরি মনে হয়েছে।’ ‘মার্ক্সবাদের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, যুক্তিনিষ্ঠ সত্যনির্ভর মনোভাব অথচ কারো প্রতি স্তাবকতা প্রদর্শন বা অন্ধ আনুগত্য নয় এমনভাবে তত্ত্ব ও বাস্তবের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে সত্যানুসন্ধান করাই ছিল তাঁর সারা জীবনের ব্রত।’ সত্যেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে যে সত্যানুসন্ধান (মনীষা, ১২৫.০০), তাতে সম্পাদকীয় লিখেছেন ভানুদেব দত্ত। সত্যেন্দ্রনারায়ণকে নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের সঙ্গে বইটিতে ঠাঁই পেয়েছে তাঁর কয়েকটি প্রবন্ধ ও ভাষণ। সর্বোপরি তাঁর রচনাপঞ্জিও, সংকলক তমোনাশ ভট্টাচার্য।
বিগত দিনের ঘটনাবলি এবং বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্যলাভের ছবিগুলি যেন স্মৃতির অ্যালবাম থেকে মাঝে মাঝে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে এসেছে সিতাংশুশেখর চক্রবর্তীর গদ্যে প্রণাম করে যাই (পত্রলেখা, ১২০.০০)। তাঁর এই স্মৃতিকথন একইসঙ্গে যেমন ব্যক্তিগত, তেমনই গত শতকের নৈর্ব্যক্তিক সময়-আলেখ্য। ‘আমার কোনো দিনলিপি নেই। স্মৃতি-ভাণ্ডার মন্থন করে ঘটনাগুলি লিপিবদ্ধ করেছি।’ জানিয়েছেন লেখক।
প্রায় একটি দুরূহ চেষ্টা সেরে ফেলেছেন সোমা সেন, অবনীন্দ্রনাথের শিল্পীজীবনের বৃত্তান্ত লিখে: অবনঠাকুরের কথা (ডি এম লাইব্রেরি, ১৫০.০০)। অবন ঠাকুরের কথা সংবলিত নানা বইয়ের প্রতি ‘ঋণ স্বীকার’ করে বইটির শেষে সোমা জানিয়েছেন ‘ছড়িয়ে থাকা সেইসব লেখা দিয়েই অবনীন্দ্রনাথের স্মৃতিচিত্র গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই লেখা শুরু হয়। যিনি চিরদিন সব হিসেবের ঊর্ধ্বে তাঁর জীবনকে সময়ের ছাঁচে কে ফেলতে পারে।’ আছে অবন ঠাকুরের বংশ লতিকা, তাঁর সম্পর্কিত বইয়ের তালিকা, এবং তাঁর ‘জীবনের অঙ্কচিত্র’। ‘মানুষের প্রতি তাঁহার ভালবাসা সত্যের প্রতি তাঁহার নিষ্ঠাকে কিছুমাত্র দুর্ব্বল করিতে পারে নাই।’ শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘ আলোচনার এই অংশটুকু পড়লেই একটা ধারণা তৈরি হতে বাধ্য। পূর্বোক্ত এই সংযোজন-সহ তাঁর সম্পর্কে আবার জানবার সুযোগ এনে দিল সম্প্রতি চিরায়ত প্রকাশন থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা হেমলতা দেবী প্রণীত পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর জীবন-চরিত-এর (সংকলন ও পরিচায়িকা: নিমাইচন্দ্র পাল, ১৬০.০০) পুনঃপ্রকাশে (প্রথম প্রকাশ ১৯২১)। এ-বইয়ে বাড়তি পাওনা সে সময়ের দুর্লভ কিছু স্থিরচিত্র।
কেতকী সর্বাধিকারীর নানা সুরের রবীন্দ্রনাথ (পুস্তক বিপণি, ১২০.০০) কবিপ্রতিভার অধরা কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা। লেখিকা জানাচ্ছেন বইটিতে ‘কবির ঋতুভাবনার সঙ্গে, নারীর জন্যে তাঁর চিন্তা-ভাবনার কয়েকটি রূপ তুলে ধরা হয়েছে।’
১৯০৫-এর যে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন, তার যেন আরশি হয়ে উঠেছিল ‘ভাণ্ডার’ পত্রিকা। যদিও ‘ভাণ্ডার’ চলেছিল দু’বছর তিন মাস (বৈশাখ ১৩১২-আষাঢ় ১৩১৪), কিন্তু সেই স্বল্প আয়ুষ্কালেই এ-পত্রের সম্পাদক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ফলত বঙ্গভঙ্গজনিত নানা প্রশ্ন-পরামর্শ-প্রস্তাব-মন্তব্য এবং ভাবনা-মতামত ঠাঁই পেত পত্রিকাটিতে। লিখতেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন দাশ, অশ্বিনী দত্ত, বিপিনচন্দ্র পাল, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, প্রমথ চৌধুরী, উপেন্দ্রকিশোর, অবনীন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রমুখ। নেতাজি ইনস্টিট্যুট ফর এশিয়ান স্টাডিজ থেকে প্রকাশ পেয়েছে সে পত্রের সংকলন: বঙ্গভঙ্গে জিজ্ঞাসা ও জনমত/ ভাণ্ডার-সংকলন (২৫০.০০), সম্পাদক হীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। |
|
|
|
|
|