জেলা জুড়ে এখনও দেদার বিকোচ্ছে ‘ভিটামিন টনিক’
ন্ধ্যা হলেই ‘ডাক্তারখানা’য় ছোটেন রতন বা রহিম। তারপর ‘ভিটামিন টনিক’ খেয়ে টলোমলো পায়ে নিত্য বাড়ি ফেরা। কেউ দিন মজুর, কেউ ইটভাটার শ্রমিক, কেউ রিকশা চালান।
স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের ধারে, গ্রামের হাটে, মাছের বাজারের পিছনে, রাস্তার মোড়ে, অন্ধকার বটতলায় রোজ দিন ‘ডাক্তারখানা’ খুলে বসেন ‘ডাক্তারবাবু’। পাশে বস্তা বোঝাই ছোট ছোট প্যাকেট ভর্তি ‘ভিটামিন টনিক’। ডাক্তারবাবুকে ঘিরে গোটা বা আধলা ইটের বলয়। সেখানেই বসেন অন্যেরা। লম্ফর টিমটিমে আলোয় বিক্রি হয় মুরগির চাট দেওয়া ঝালঝাল তরকারি। ছোলা সেদ্ধ। কাঁচা লঙ্কা। তাই দিয়েই খেতে হয় ‘ভিটামিন টনিক’। যার অর্থ চোলাই বা চুল্লু।
এই দৃশ্য রোজকার। কল্যাণী থেকে পলাশি--নদিয়ার বিভিন্ন ছোট-বড় শহরের নানা কোণে দেখা যায়। তবে এক এক জায়গায় তার এক এক রকম নাম। কোথাও ‘পেপসি’, কোথাও ‘ভিটামিন টনিক’। তবে ঠিক কোথায় কোথায় পাওয়া যায়, তা জানতে হবে। কোথাও মুদির দোকানে, কোথাও চায়ের দোকানে, কোথাও মনোহারি দোকানে। কোথাও কোথাও রয়েছে মোবাইল নম্বরও। তাতে ফোন করে দিলেই হাতে চলে আসবে চোলাইয়ের পাউচ।
কিন্তু এই বিশাল চোলাই ব্যবসার প্রতি প্রশাসন এক রকম চোখ বুজেই রয়েছে। প্রতিদিন ভাটিখানাগুলি থেকে কয়েক হাজার চোলাই মদ তৈরি হয়। তারপর ব্যারেলে ভরে তা কখনও বাসে, কখনও ট্রেনে কখনও যন্ত্রচালিত ভ্যানে বা গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে নানা অন্ধকার কোণে। সেখানে আবার প্রয়োজন মতো, নেশার তীব্রতা বাড়াতে মেশানো হয় নানা রাসায়নিক। পায়রাডাঙাতে এমনই মদের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিলেন ৯ জন।
কোথাও কোথাও গ্রামবাসীরা সমবেত চেষ্টায় ভাটি ভেঙেও ফেলেছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় জেলায় মদ বিক্রি বন্ধ করা যায়নি। ২০০১ সালেই কৃষ্ণনগর শহরে মদ খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২১ জনের। চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল অন্যদের। কিন্তু তারপরেও শহরে চোলাই বিক্রি হচ্ছে। পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা বলেন, “২০০১ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা হয়নি।এখনও বিভিন্ন জায়গায় রমরমিয়ে চোলাই বিক্রি হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে বারবার বলেছি। কিন্তু পুলিশ সক্রিয় না হলে কোনও ভাবেই মদ বিক্রি বন্ধ করা যাবে না।”
আবগারি দফতরের সুপার লালসিংহ জাগরাই বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় একটার পর একটা অভিযান চালিয়েছি। মদ তৈরির ভাটিগুলো বন্ধ করতে পেরেছি। প্রচুর মদ ও মদ তৈরির উপকরণ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে বহু বিক্রেতা। চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রি বন্ধ করতে আমরা সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” তবে তাঁর দাবি, “আমাদের জেলায় মদ তৈরি হয় না। হুগলি থেকে জল ও সড়ক পথে ঢোকার চেষ্টা করে।” আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১২৯টি মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ১৭০ জন। ৬৩ হাজার একশো বারো লিটার চোলাই ও ৭৫ হাজার আটশো ২৫ লিটার মদ তৈরির উপকরণ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৩টি গাড়িও। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতেও আমরা বিশেষ অভিযান চালিয়েছি। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭ শো লিটার চোলাই মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। থানাগুলিকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এরপরেও কোথাও এই মদ বিক্রি করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.