পরিবর্তনের হাওয়া, না ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই? আজ, শনিবার মুর্শিদাবাদে কলেজ ভোট নিয়ে ছাত্র সংগঠনিগুলির সঙ্গে সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলগুলিতেও তৎপরতা তুঙ্গে। প্রশাসনও প্রস্তুত। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শনিবার দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলিও। সেই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলই আশ্বাস দিয়েছে, প্রশাসনের জারি করা সমস্ত বিধি নিষেধ নিরপেক্ষ ভাবে কার্যকরী করা হলে, কোথাও কোনও অশান্তি হবে না।
মুর্শিদাবাদ জেলায় শনিবার ১৫টি কলেজে নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে নির্বাচন হবে প্রকৃতপক্ষে ১২টি কলেজে। তিনটি কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব গুলি আসনেই জয়ী হয়েছে ছাত্র পরিষদ। বাকি কলেজগুলিতে কারা জিতবেন, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সংখ্যা ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে যাব না আমরা। তবে কলেজ রাজনীতির পরিস্থিতি দেখে বলছি, এ বারও ছাত্র পরিষদের থেকে বেশি ভোট পাবে এসএফআই-ই। প্রশাসন ও পুলিশ যদি ছাত্রছাত্রীদের সুষ্ঠু ভাবে ভোট দানের সুযোগ করে দিতে পারে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ কলেজ আসবে বামেদের নিয়ন্ত্রণেই।” |
মুর্শিদাবাদে রাজ্যের শাসক জোট তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হচ্ছে না স্কুল ভোটেও। কলেজ ভোটেও তারই ছায়া পড়েছে। কলেজ নির্বাচনে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আলাদা করে লড়ছে। দুই সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে কয়েকবার বিভিন্ন কলেজে। সেই সুযোগটা এসএফআইয়ের পাওয়ার কথা। তবে মোস্তাফিজুরের অভিযোগ, “গত কয়েকদিন থেকে ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকেরা বাড়ি বাড়ি ছাত্র ছাত্রীদের হুমকি দিচ্ছে, যাতে তাঁরা ভয়ে কলেজে ভোট দিতে না যায়। তাই অভিভাবকেরা চিন্তিত। প্রশাসনকে বলেছি ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। যাতে ছাত্রছাত্রীরা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে।” তাঁর কথায়, “তবে দলের কর্মীদের বলেছি, কোথাও যেন কোনও অশান্তিতে তাঁরা না যায়। কারণ তা হলে ভোট পণ্ড হবে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আর ভোট দিতে আসবেন না।”
ছাত্র পরিষদ জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান বলেন, “আমরা তিনটি কলেজে জিতেই গিয়েছি। আরও অন্তত ৫-৭টি কলেজ পাব।” তিনি অভিযোগ করেছেন, “কয়েকটি কলেজে তৃণমূল এসএফআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়ছে। তাঁরা যে কোনও অজুহাতে গণ্ডগোল শুরু করে দিতে পারে। তবে আমাদের কোনও কর্মীকে কোনও প্ররোচনায় পা দিতে বারণ করেছি।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পার্থসারথী পালের বক্তব্য, “ছাত্র পরিষদ সর্বত্র ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। কান্দিতে তৃণমূল প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি হুমকি দেওয়ায় অভিভাবকদের চাপ এড়াতে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে আমাদের। তা সত্ত্বেও পাঁচথুপি, ডোমকল, বহরমপুর ও লালবাগের ৪টি কলেজে ভাল ফল করবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।” তাঁর কথায়, “মানুষের মনে পরিবর্তনের হাওয়া পড়বে কলেজের ভোটেও। তবে কর্মীদের বলছি, কোনও ভাবেই কোনও অশান্তিতে না যেতে।”
বাম শরিক আরএসপি’র কিছু ছাত্র সংগঠনের জেলার কয়েকটি কলেজে ভাল প্রভাব রয়েছে। পিএসইউ-র জেলা সভাপতি আরাফৎ শেখ বলেন, “জেলা প্রশাসন যে সব বিধি নিষেধ জারি করেছেন, তার বাস্তব রূপায়ণ হলে শনিবারের ভোটে কোনও কলেজেই গোলমালের আশঙ্কা নেই।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক অজয় ঘোষ বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে কলেজ ভোট করার সব বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন প্রস্তুত। সব ছাত্র সংগঠনও আশ্বাস দিয়েছে সহযোগিতার।” |