|
|
|
|
নিয়মের গেরো |
আন্তর্জাতিক সেমিনারে যেতে ব্যর্থ গবেষক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্য গবেষকদের আর্থিক সহায়তা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ ব্যাপারে ইউজিসি-র একটি নিজস্ব নিয়মও রয়েছে। সেই নিয়মের বাইরেও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আরও একটি নিয়ম তৈরি করেছে। যে নিয়মের গেরোয় সমস্যায় পড়েছেন গবেষকেরা। এমনকী ওই নিয়মের গেরোয় উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষক অমল মণ্ডলের আম্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেওয়াও আটকে গেল।
এর ফলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-মহলে। অমলবাবুর মন্তব্য, “আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্য ইউজিসি আমাদের অর্থ সাহায্য করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের যাঁতাকলে আমরা প্রাপ্য অর্থের অনেক কম পাচ্ছি। ফলে একাধিক সেমিনারে যোগ দিতে পারছি না। আমি অস্ট্রেলিয়ায় একটা সেমিনারে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। খরচ হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। কলম্বোয় ফের সেমিনার রয়েছে। আগের সেমিনারে যোগ দিতেই ঋণ করতে হয়েছে। তাই এ বার কলম্বো যাওয়া বাতিল করতে বাধ্য হলাম।” |
|
অমল মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র। |
বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনও (ভুটা) ক্ষুব্ধ। সংগঠনের পক্ষে ইন্দ্রানী দত্ত চৌধুরীর বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই উজ্জ্বল হয়। সে জন্য ইউজিসি বরাদ্দ করা সত্ত্বেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা দেবেন না? আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাইব। এমন চলতে থাকলে গবেষকদের মনোবল ভেঙে যাবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রণজিৎ ধরের অবশ্য বক্তব্য, “ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়কে এককালীন একটা থোক টাকা দিয়ে দেয়। সেই টাকা থেকেই অনেককে দেওয়া হয়। এক জনের জন্য অতিরিক্ত খরচ করলে অন্যকে বঞ্চিত করা হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিয়ম করেছে। সব শেষে টাকা থাকলে সেই অতিরিক্ত টাকা ফের ভাগ করে দেওয়া হবে।”
ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী কোনও গবেষক ৬ বছর অন্তর আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিলে তাঁর সম্পূর্ণ খরচ দেবে ইউজিসি। ৪ বছর অন্তর গেলে খরচের ৭৫ শতাংশ এবং ৩ বছর অন্তর গেলে খরচের ৫০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ম হল, ইউজিসি-র থেকে পাওয়া টাকা পদের নিরিখে ভাগ করা। প্রফেসরের জন্য ৬০ হাজার, রিডারের জন্য ৫০ হাজার ও লেকচারের জন্য ৪০ হাজার টাকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অমলবাবু এই বছরই প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল কোড অব বটানিক্যাল নোমেনক্লেচার’-এ যোগ দিতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন। ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী, তাঁর সম্পূর্ণ খরচই পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি রিডার হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়েরই তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ সালে ‘ট্রাভেল অ্যাসিস্ট্যান্স’ খাতে ৮ লক্ষ টাকা পেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। তার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্রই ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৩১৭ টাকা। ৬ লক্ষ টাকা খরচই করা যায়নি! ২০০৭-০৮ সালেও এই খাতে ৪ লক্ষ টাকা পেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। তার মধ্যে মাত্র ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৬১ টাকা খরচ করা গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তা হলে অমলবাবুকে খরচের পুরোটা দিতে কোথায় আটকাচ্ছে? সদুত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
অর্থ-সঙ্কটে অমলবাবু কলম্বোর যে সেমিনারে যেতে পারছেন না, সেখানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় নিদ্রাহীনতায় গাছের গুণাগুণ নিয়ে বক্তব্য রাখার কথা ছিল তাঁর। এই গবেষকের কথায়, “এ বার বড় জোর ৩৩ হাজার টাকা খরচ হবে। কিন্তু যেহেতু ৪ মাস আগেই আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছি, তাই ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে কোনও অর্থ সাহায্য পাব না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সম্পূর্ণ খরচ পেলে এ বার নিজের খরচেই যেতে পারতাম। আগেই অনেক ধার হয়ে গিয়েছে। তাই এ বার আর ঋণ নেওয়ার অবস্থাও নেই।” |
|
|
|
|
|