দক্ষিণ কলকাতা
প্রদীপের নীচে
বেআইনের পার্কিং
রাস্তার দু’ধারে কোনও পার্কিং জোন নেই। অথচ পরপর গাড়ি এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ ছবি নিউ মার্কেট সংলগ্ন লিন্ডসে স্ট্রিটের। অথচ, একটু দূরেই রয়েছে পুরসভা এবং বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি পার্কিং জোন। কিন্তু সেখানে গাড়ি পার্ক করা ও ফেরত পাওয়া সময়সাপেক্ষ বলে অনেকেই এখানে গাড়ি না পার্ক করে রাস্তার ধারেই গাড়ি পার্ক করান বলে অভিযোগ। লিন্ডসে স্ট্রিটে পুরসভার পার্কিং জোন না থাকা সত্ত্বেও এ ভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছে অবৈধ পার্কিং জোন। অথচ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ নিউ মার্কেটের বেশ কিছু ব্যবসায়ীর।
পুরসভা সূত্রে খবর, নিউ মার্কেট সংলগ্ন বেরট্রাম স্ট্রিট এবং নেলি সেনগুপ্ত সরণিতে পুরসভার পার্কিং জোন থাকলেও লিন্ডসে স্ট্রিটে কোনও পার্কিং জোন নেই। কিন্তু বেরট্রাম স্ট্রিটেও নিউ মার্কেটের পাশে রাস্তার একধারে যে পার্কিং জোন রয়েছে তা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন নিউ মার্কেটের কিছু ব্যবসায়ী। তাঁদের অভিযোগ, পাশে যৌথ উদ্যোগে ভূগর্ভস্থ এত বড় পার্কিং জোন করার পরেও পুরসভা আলাদা করে রাস্তার উপর পার্কিং জোন করল কেন? এতে ব্যবসায়ীদের যেমন অসুবিধা হয়, তেমনই নিউ মার্কেটে আসা মানুষেরও নানা সমস্যা হয়। কেননা, বেরট্রাম স্ট্রিটে পর পর গাড়ির পাশেই রয়েছে হকারদের দোকানপাট। আর তার পাশ দিয়ে অনবরত চলেছে গাড়ির সারি। ফলে যাঁরা নিউ মার্কেটে আসেন তাঁদের গাড়ির পাশ দিয়েই হাঁটাচলা করতে হয়।
নিউ মার্কেটের পাশে, অর্থাৎ পুরসভার ঠিক উল্টো দিকে চার্লি চ্যাপলিন স্কোয়্যারের মুখ থেকে বেরট্রাম স্ট্রিটের একধারে রয়েছে পুরসভার পার্কিং জোন। এই পার্কিং জোন শেষ হয়েছে লিন্ডসে স্ট্রিটের মুখে। এখানে আলাদা আলাদা দু’টি পার্কিং জোন রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেখানেও বেআইনি ভাবে দু’সারিতে গাড়ি পার্ক করানো হচ্ছে। অভিযোগ, এই রাস্তায় যত সংখ্যক গাড়ি রাখার কথা তার চেয়ে বেশি গাড়ি পার্ক করানো হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, বেরট্রাম স্ট্রিটের মুখ থেকে লিন্ডসে স্ট্রিট শুরু পর্যন্ত মোট ৬০টি গাড়ি রাখার অনুমতি রয়েছে।
পাশাপাশি, পুরসভার নির্ধারিত পার্কিং ফি-র থেকে অনেক বেশি পার্কিং ফি নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। নিউ মার্কেটে আসা অনেকেরই অভিযোগ, এখানে গাড়ি রাখলেই বাড়িয়ে পার্কিং ফি চাওয়া হয়। মানা হয় না পুরসভার নির্ধারিত ফি। কলকাতায় পুরসভা নির্ধারিত পার্কিং ফি ঘণ্টায় দশ টাকা। অথচ এখানে দিনের বেলাতেই ঘণ্টায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত পার্কিং ফি চাওয়া হয়। আবার সন্ধ্যার পরে এই ‘রেট’ও অনেক বেড়ে যায়। শোভাবাজার থেকে নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা সপ্তর্ষি দত্তের কথায়: “এক এক দিন এক এক রকমের পার্কিং ফি চাওয়া হয়। প্রথম প্রথম ঘণ্টায় ৪০ টাকাও চাওয়া হত। অথচ কলকাতায় ঘণ্টা প্রতি গাড়ি পার্কিং ফি দশ টাকা।”
পুরসভার পার্কিং বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিক এই অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে বলেন, “কলকাতার অনেক জায়গাতেই বেশি টাকা নেওয়ার কথা কানে এলেও কেউ লিখিত অভিযোগ না জানানোয় পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না।” এ ব্যাপারে মেয়র পারিষদ (পার্কিং) রাজীব দেব বলেন, “নো-পার্কিং জোনে গাড়ি রাখাটাই বেআইনি। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেব। তবে, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি গাড়ি পার্কিং নিয়ে প্রায়ই অভিযান চালাই।” পার্কিং ফি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য: “পার্কিং ফি নিয়ে কারও অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে লিখিত জানান। অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
বেআইনি পার্কিং নিয়ে কলকাতা পুলিশের ডি সি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নো পার্কিং জোনে আমরা রোজই অভিযান চালাই। প্রচুর কেসও দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও মানুষ যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্ক করান। দু’টি সারিতে গাড়ি রাখলেও নো পার্কিংয়ের কেস দেওয়া হয়।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.