পূর্ব কলকাতা
অর্থাভাব
ভূগর্ভ নকশাহীন
ষোলো বছর পার করেও ভূগর্ভের পাইপলাইনের অবস্থান সম্পর্কে অন্ধকারে বিধাননগর পুরসভা। হাতে গোনা কয়েক জন পুরকর্মী ছাড়া জল সরবরাহকারী পাইপলাইন সম্পর্কে কারও সম্পূর্ণ ধারণা নেই। আগেও অত্যাধুনিক পদ্ধতি মেনে নতুন করে ভূগর্ভে জল সরবরাহকারী পাইপলাইনের নকশা তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুরবোর্ডের বক্তব্য, অর্থের অভাবেই পরিকল্পনা কার্যকর করা যাচ্ছে না।
আশারাম ও বনমালী। বিধাননগরের কোথাও যদি পাইপলাইনে মেরামতির প্রয়োজন হয়, ডাক পড়বে ওই দু’জনের। ওঁরাই যে সবচেয়ে ভাল জানেন কোথায় কী ভাবে মাটির তলায় জলের পাইপলাইন আছে। কোনও কারণে এঁরা যদি অনুপস্থিত থাকেন, তা হলে জল সরবরাহকারী পাইপলাইনের মেরামতি বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমান শাসকদল এই অবস্থার জন্য বামফ্রন্ট পরিচালিত আগের পুরবোর্ডকেই দায়ী করেছে।
অগত্যা জিপিআরএস পদ্ধতিতে বিধাননগরে জল সরবরাহের পাইপলাইনের নকশা তৈরির পরিকল্পনা করেছে বিধাননগর পুরসভা। যদিও সে পরিকল্পনাও অর্থাভাবে বিশ বাঁও জলে। বিকল্প পথও নেই বলেই স্বীকার করেছেন পুরকর্তৃপক্ষ।
কিন্তু কেন এই অবস্থা?
পুরসভা সূত্রে খবর, ষাটের দশকে বিধাননগর উপনগরী তৈরির পরে সল্টলেক নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিল। নগরোন্নয়ন দফতর ও নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটির কাছেই এই নকশা ছিল। আগের বাম পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান পারিষদ তপন তালুকদার জানান, ১৯৯৫-এ পুরসভা গঠনের সময় থেকেই নকশা ছিল না পুরসভার কাছে। এই নিয়ে অনেক বারই নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু উত্তর পাওয়া যায়নি। যাঁরা সে সময়ে মেরামতির কাজ করতেন, তাঁরা অন্তত কিছুটা জানতেন। নতুন করে নকশা তৈরির প্রধান বাধা অর্থ।
বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের ইলা নন্দী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বরাবরই সমস্যা ছিল। নকশা হলে ভালই। কিন্তু কোষাগারের যা অবস্থা তাতে কতটা কার্যকর ব্যবস্থা করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”
কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইতিমধ্যেই নিকাশি ও পয়ঃপ্রণালীর নকশা জোগাড় করতে সমর্থ হয়েছে তৃণমূল পুরবোর্ড। কিন্তু জল সরবরাহের পাইপলাইন সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অবস্থা। পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “ম্যাপ নেই, তবে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারেরা মাটির তলার পাইপলাইনের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। এর ফলে একটা খসড়া নকশাও হবে। এর সঙ্গে নগরোন্নয়ন দফতর থেকে যদি পুরনো ম্যাপ পাওয়া যায় তা হলে ভাল হয়।” যদিও রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি দেবাশিস সেন বলেন, “পুরসভার তরফে এ রকম কোনও প্রস্তাব পাইনি। বিষয়টি শুনলাম। প্রস্তাব পেলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.