|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা
আমতলা |
যন্ত্রণার মোড় |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
কে বলবে, এটা জাতীয় সড়ক!
প্রায় আধ কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা জুড়ে আলু-পেঁয়াজ থেকে শুরু করে হরেক সব্জি এবং মাছ-মাংসের পাইকারি বাজার বসেছে। লরি ও ম্যাটাডর বোঝাই করে শাক-সব্জি ঢুকতে শুরু করে গভীর রাত থেকেই। ভোর ৪টে থেকে শুরু হয়ে বেলা ৮টা পর্যন্ত চলে পাইকারি কেনাবেচা। আর তার পর থেকে দিনভর চলে খুচরো কেনাবেচা। ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে বসা এই বাজারের জন্য নাভিশ্বাস উঠছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার।
জাতীয় সড়কের উপরে নিয়মিত বসা এই পাইকারি বাজারের জন্য আমতলা মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজনে কেউ কলকাতা শহরে আসতে চাইলে দুর্ভোগে পড়বেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর আমতলা মোড়ে দীর্ঘ দিন ধরে পাইকারি এই বাজারকে ভিতরের রাস্তায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও সফল না হওয়ায় রীতিমতো অসুবিধায় পড়ছেন বহু মানুষ। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন বাসিন্দারা।
গত ৫০-৬০ বছর ধরে রাত থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, ক্যানিং, লক্ষ্মীকান্তপুর, মল্লিকপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে চাষিরা গাড়িতে সব্জি এনে ভিড় করেন এই আমতলা মোড়ে। বসে পাইকারি সব্জিবাজার। এখান থেকেই বেহালা, ঠাকুরপুকুর, কলকাতার বিভিন্ন এলাকার বাজারে সব্জি নিয়ে যান খুচরো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু রাস্তা জুড়ে এমন ভাবে সব্জিবাজার বসে যে ওই সময়ে আধ কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই লেগে যায় ঘণ্টাখানেক।
|
|
আমতলা চারমাথা মোড়ের এক দিকে কলকাতা, অন্য দিকে ডায়মন্ড হারবার রোড। আর এর মাঝ থেকে এক দিকে চলে গিয়েছে নিবারণ দত্ত রোড এবং অন্য দিকে বারুইপুর রোড। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, ক্যানিং, কাকদ্বীপ, ফলতা প্রভৃতি এলাকা থেকে কলকাতায় আসার প্রধান জাতীয় সড়কের উপর নিয়মিত পাইকারি বাজার বসায় সমস্যায় পড়ে দূরপাল্লার বাসগুলিও।
আমতলারই নিবারণ দত্ত রোডের এক বাসিন্দার কথায়: “সকালবেলায় আমরা স্থানীয় লোকেরাই মোড়টা পেরোতে পারি না। ওই সময় যদি কোনও রোগীকে নিয়ে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি কলকাতায় যেতে চায় তা হলে সমস্যায় পড়বে। কেননা, ডায়মন্ড হারবার রোডের দু’ধারে বিভিন্ন দখলদারির জন্য রাস্তাটি এমনিতেই সরু হয়ে গিয়েছে। তার উপর রাত থেকে সব্জি আর মাছবোঝাই একটার পর একটা লরি আর ম্যাটাডর এসে ভিড় জমায়। রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় পাইকারি বাজারের কেনাবেচা।” বস্তুত, জাতীয় সড়কের দু’ধারে ফুটপাথ বলতে দেড় ফুট। কিছু জায়গায় রেলিং দিয়ে ঘেরা, কোথাও আবার রেলিং নেই। এখানেই রাত থেকে ফুটপাথ-সহ রাস্তার অর্ধেক অংশ চলে যায় পাইকারি চাষি এবং ফড়েদের দখলে।
আমতলা মোড়ের এই জায়গাটি বিষ্ণুপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত। সমিতির এক সদস্যের কথায়, পাইকারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা অক্ষুণ্ণ রেখে এই বাজারকে ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে নিবারণ দত্ত রোডে ঢোকানোর জন্য বাসিন্দারা জেলা সভাধিপতিকে বলেন। ২০১০ সালের এই প্রস্তাব বিবেচনা করে বাজারটি সরানোর কথা ভাবা হলেও পরে অবশ্য তা বাস্তবায়িত হয়নি। |
|
বিষ্ণপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোহনচন্দ্র নস্কর বলেন, “আমতলা থানার পিছনে বাজারটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা সভাধিপতিকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল। ওখানে প্রায় দেড় বিঘে জায়গা আছে। বাজারটি ওখানে স্থানান্তর করতে পারলে সব সমস্যার সমাধান হত। কিন্তু জেলা পরিষদ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” যদিও জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, “ওই জায়গায় বাজার সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ওখানে যেতে রাজি হননি।”
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, “আমতলা মোড়ের কাছে চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সমিতির প্রায় সাত কাঠা জায়গা আছে। জায়গাটি উঁচু-নিচু ছিল। ইতিমধ্যেই সমিতির পক্ষ থেকে জায়গাটিতে মাটি ফেলে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। ওই জায়গায় পুরো বাজারটি সরানো না গেলেও ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে সরিয়ে জাতীয় সড়কটি যান চলাচলের জন্য মুক্ত করার চেষ্টা করছি। জেলা সভাধিপতিকেও জানানো হয়েছে।” পঞ্চায়েত সমিতির এই প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, “বাজারটি কবে ওখানে স্থানান্তরিত হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে, ওই জায়গাতেই আমরা বাজারটি নিয়ে যাব বলে ঠিক হয়েছে।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|