চলছে স্কুল স্পোর্টস। তাই নির্ধারিত সময়ে যুবভারতীতে পৌঁছেও মিনিট পঁয়তাল্লিশ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল স্পোটিং ক্লুব দ্য গোয়াকে।
শুক্রবার দুপুর দুটোয় যুবভারতীতে ঢুকেই অবাক গোয়া কোচ একেন্দ্র সিংহ। মাঠে নামবেন কী, সেখানে তো তখন স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভিড়! দাঁড়িয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। চলছে পুরস্কার বিতরণের প্রস্তুতিও।
ম্যাচের উদ্যোক্তা মোহনবাগানের কোনও কর্তার কোথাও দেখা নেই। জনা দু’য়েক অচেনা কর্মী নিজেদের পরিচয় দিলেন ক্লাব কর্মী হিসাবে। পরিস্থিতি দেখে তাঁরা দিশাহারা। স্পোর্টিং ম্যানেজার তাঁদের কাছে জানতে চাইলেন কখন পাওয়া যাবে মাঠ? শেষ পর্যন্ত যখন মোগা-কালুরা মাঠে নামলেন তখন ঘড়ির কাঁটা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে। আগের দিন রাত থেকেই স্পোর্টিং ম্যানেজার অ্যাঞ্জেলো আলবুকার্ক পরিস্থিতি দেখে বিরক্ত ছিলেন। তাঁর বিরক্তির আরও কারণ বৃহস্পতিবার রাতে বিমানবন্দর থেকে হোটেলে পৌঁছতে প্রচুর দেরি হয়ে যাওয়া। তাঁর অভিযোগ, “বিমানবন্দরে যিনি আমাদের নিতে গিয়েছিলেন, তিনি হোটেলের রাস্তাই চিনতেন না। আট বছর ধরে কলকাতায় আসছি বলে আমিই চিনিয়ে নিয়ে যাই।” মোহন সচিব অঞ্জন মিত্র অনুশীলনে দেরি হওয়ার ব্যাপারটিকে খুব গুরুত্ব দিতে চাইলেন না। শান্তিনিকেতন থেকে ফোনে বললেন, “মাঠ আমাদের নিজস্ব নয়। রাজ্য সরকারের। আমাদের হাতে তো সবটা নেই।”
|
সেরা অস্ত্রকে শেষ মুহূর্তের টিপস সুব্রতর। ছবি: উৎপল সরকার |
স্পোর্টিং ক্লুব ব্যবস্থাপনা দেখে বিরক্ত। মোহনবাগান টিডি সুব্রত ভট্টাচার্য বিরক্ত টিমের সমস্যা নিয়ে। তাঁর চারিদিকে শুধু নেই আর নেই। হোসে ব্যারেটো নেই। অসীম বিশ্বাস নেই। সুনীল ছেত্রী নেই। শিবরাত্রির সলতে হয়ে শুধু জ্বলছেন দু’কোটির ওডাফা। গোয়ার ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করে যুদ্ধ জেতানোর দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই। কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় যা ইঙ্গিত দিলেন তাতে ওডাফাকেই একমাত্র স্ট্রাইকার রেখে দল নামাতে চলেছে মোহনবাগান। আর তা দিয়েই ক্লুবকে বধ করার স্বপ্ন দেখছে সবুজ-মেরুন জার্সি। একেন্দ্র সিংহের দলের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের ফর্মেশন হতে পারে ৪-১-৪-১। যেখানে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসাবে খেলতে পারেন রাকেশ মাসি। সামনে চার মিডফিল্ডার হতে পারেন মনীশ, জুয়েল, প্রদীপ এবং স্নেহাশিস। দুই স্টপার আনোয়ার-কিংশুকই। রাইট ব্যাক সুরকুমার। ব্যারেটো-জেলেনি-লিমা না থাকায় তাই ওডাফাই একমাত্র বিদেশি এ দিন সুব্রতর একাদশে। তাতে অবশ্য কাঁপছেন না গোলমেশিন। বললেন, “এটাই কলকাতা! গোল করলে লোক মাথায় তুলে নাচবে। আর না করতে পারলেই সমালোচনা হবে।”
আই লিগে নিজের প্রথম মরসুমেই অবশ্য ওডাফাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন স্পোর্টিং ক্লুবের দক্ষিণ সুদানি স্ট্রাইকার জেমস সইদ মোগা। সাত গোল হয়ে গিয়েছে তাঁর। এই প্রথম কলকাতায় খেলবেন ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা ফেরত মোগা। গোলের মধ্যে থাকা স্পোর্টিং স্ট্রাইকার ওডাফাদের ঘুরিয়ে চ্যালেঞ্জও জানিয়ে রাখলেন। “আমার কাজ গোল করে দলকে জেতানো। সেটা এখানে করতে পারলে খুশি হব।” মাত্র পাঁচ মাস আগে স্বাধীন হয়েছে তাঁর দেশ দক্ষিণ সুদান। সেই নুন আনতে পান্তা ফুরনো দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কতটা তা জানা যায় মোগার জীবনেরই এক ঘটনায়। ৯ জুলাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পরদিনই দক্ষিণ সুদান তা সেলিব্রেট করেছিল ফুটবল ম্যাচ খেলে। কেনিয়ার প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব টাস্কারের কাছে ১-৩ হারলেও সেই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছিলেন মোগা। মোগা ছাড়া স্পোর্টিংয়ের আর এক বিদেশি ওডাফার এক সময়ের সতীর্থ কালু ওগবা।
দেখার বিষয়, মোগা-কালু বনাম ওডাফা ম্যাজিকের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জেতে?
|
শনিবার
আই লিগে
মোহনবাগান : স্পোর্টিং ক্লুব (যুবভারতী, ২-০০),
প্রয়াগ ইউনাইটেড : চিরাগ কেরল (তিরুঅনন্তপুরম),
চার্চিল : শিলং লাজং (মারগাও) |