তিন পয়েন্ট এনে দিয়েও আউট হয়ে বিরক্তিতে শূন্যে ব্যাট ঝাঁকানো। ৫৪২ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৮৭ করে ফেরার সময় অবশেষে হেলমেট খোলা। বাংলাকে না বাঁচালে শিরস্ত্রাণ না খোলার ধর্নুভাঙা পণ ছিল যে! ম্যাচ শেষে মনোজ তিওয়ারির গলায় রসিকতা, “আসলে তখন ক্লাবহাউসের দিকে পিঠ করে ব্যাট করছিলাম তো। আপনাদের দেখা যাচ্ছিল না। প্রেসবক্সটা হাইকোর্টের দিকে হলে হেলমেট খুলতাম!”
এমন অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেও পরিচিত আগ্রাসন সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এই মনোজ সংযমী, বিনয়ী ও আত্মবিশ্বাসী। আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা এত উর্ধ্বমুখী যে প্রকাশ্যে বলছেন, “একুশ বছর পরে আমরা জাতীয় স্তরে একটা ট্রফি জিতেছি এ বছর। সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি। রঞ্জিটা এ বার হয়তো হল না। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই রঞ্জি ট্রফিটা জিতব। ব্যাপারটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।” এই ১৮৭-কে জীবনের সেরা ইনিংস বলবেন? মনোজ বলছেন, “বাংলার হয়ে খেলা সেরা তিনটে ইনিংসের একটা। রঞ্জি ফাইনালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে চার বছর আগে ৯৪, মুম্বইয়ের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরিটা আর এইটা। এক একটা ইনিংসের আলাদা আলাদা দাম। তবে এই ইনিংসটা কোনও দামই পেত না, যদি আমরা তিন পয়েন্ট না পেতাম।” অস্ট্রেলিয়ার জন্য ক্যাম্বিস বলে প্র্যাক্টিস এখনই নয়, আপাতত শনি-রবি শুধুই ছুটি কাটাতে চান মনোজ। “উফ, যা একটা ম্যাচ গেল। কাল-পরশু আর ক্রিকেট নয়। শুধুই ছুটি।” |
অবশেষে খুললেন হেলমেট। ১৮৭ করে ফেরার পথে মনোজ। উপহার হাতে বীরপ্রতাপ। |
মনোজ যখন ম্যাচ শেষে সকালে ক্রিজে দেড় ঘণ্টা মরণপণ যুদ্ধের গল্প বলছেন, ড্রেসিংরুমে তখন অভিনীত হচ্ছে অন্য দৃশ্য। সেখানে তরুণ পেস বোলারের ১০১ মিনিট ক্রিজে থাকার পুরস্কার হিসেবে তাঁর হাতে নিজের একটা ব্যাট তুলে দিচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। জীবনের প্রথম রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নামা বীরপ্রতাপ বিকেলে আবেগাপ্লুত গলায় বলছিলেন, “আমি বোলার। ব্যাটসম্যান নই। দাদা এসে আমাকে বললেন, তোমার ব্যাটটা মন দিয়ে করা উচিত। শুধু পিঠ চাপড়েই দেননি, একটা ব্যাট উপহার দিলেন। কোনও দিন ভাবিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ব্যাট পাব।” আর স্বয়ং সৌরভ? সকালের দেড় ঘণ্টা যিনি স্বভাবসিদ্ধ টেনশনে ডুবে থেকে নখ খেয়েছেন? তিন পয়েন্টের অক্সিজেন পেয়ে তৃপ্ত বাংলা অধিনায়ক সন্ধেয় আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “মনোজ তো দুর্দান্ত। অসম্ভব দামি একটা ইনিংস খেলেছে বীরপ্রতাপ। ব্যাটটা ওর প্রাপ্য ছিল।” আগেই বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজের টিকিট মনোজের পাওয়া উচিত। আর এ দিন নতুন করে বলছেন, “আমি তো বলব, ওয়ান ডে আর টি টোয়েন্টি তো বটেই, টেস্টের জন্যও মনোজ তৈরি। অবিশ্বাস্য ফর্মে আছে।” স্বীকার করে নিচ্ছেন, লিড পাওয়ার আগে যথেষ্ট টেনশনে ছিলেন। “আমি কেন, সবাই টেনশনে ছিল। আজ সকালে মনোজ আর বীর যে ব্যাটিংটা করেছে, ব্রিলিয়ান্ট।” |
শুক্রবারের সকালে ইডেনে নায়ক যদি মনোজ হন, তা হলে পার্শ্বনায়ক অবশ্যই বীরপ্রতাপ সিংহ। মনোজ বলছিলেন, “প্রতি ওভারের পর বীরের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওকে বলাই ছিল, তুই শুধু সোজা খেলবি। আর কিছু করতে হবে না। ও না থাকলে কিন্তু রানটা হত না।” শেষ মুহূর্তে রণদেব বসুর জায়গায় বীরপ্রতাপকে নিয়েছিলেন সৌরভ। চার বছর আগে বিহার থেকে কলকাতায় এসে সৌরভের ভিডিওকন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়েছিলেন বীর। তখনই চোখে পড়েন সৌরভের। আর এই বছরে ২০ বছর বয়সি বীর অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর ছিলেন চেন্নাইয়ে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ডেনিস লিলির ছাত্র হিসেবে। বীরপ্রতাপ জানাচ্ছেন, লিলির কোচিংই তাঁকে বদলে দিয়েছে। “বোলিংয়ের অনেক খুঁটিনাটি উনি আমাকে শিখিয়েছেন। এখন আমার বোলিং অনেক নিয়ন্ত্রিত।’’
|