মনোজ-বীরের প্রতাপে বেঁচে থাকার তিন পয়েন্ট
জ পর্যন্ত একক দক্ষতায় ক’জন ক্রিকেটার বাঁচিয়েছেন বাংলাকে? নিশ্চিত মৃত্যুর মঞ্চে দাঁড়িয়ে জীবনের ছবিই বা এঁকেছেন ক’জন?
পঙ্কজ রায় থেকে মনোজ তিওয়ারি, ম্যাচ বাঁচানো বা জেতানোর উদাহরণ অসংখ্য। কিন্তু মনে রাখার মতো ইনিংস হাতে গোণা। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে হেলমেট ছাড়া পঙ্কজ রায়ের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির ‘মিথ’ যেমন আছে, তেমনই আছে রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে ভাঙা পা নিয়ে স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের ১১৬, যা শ্রীনাথ-প্রসাদের কর্নাটকের বিরুদ্ধে বাঁচিয়ে দিয়েছিল বাংলাকে।
শুক্রবার, সকাল সাড়ে দশটায় বাংলা ক্রিকেটের ইতিহাসের এই সরণিতে ঢুকে পড়লেন আরও একজন। ইনি মনোজ তিওয়ারি, সম্পূর্ণ একক যুদ্ধে ৫৪২ মিনিট ক্রিজে থেকে যিনি প্রায় অসম্ভব পরিস্থিতি থেকে বাংলাকে এনে দিলেন স্বস্তির তিন পয়েন্ট। ভাঙা পা নিয়ে তাঁকে বাংলাকে বাঁচাতে হয়নি ঠিকই, কিন্তু টানা দু’দিন ধরে এমন মরণপণ, হার না মানা যুদ্ধই বা ক’টা দেখেছে বাংলা ক্রিকেট? ক্রিজে তো পড়ে ছিলেন একা মনোজ এবং দু’এক জন!
আর এই দু’এক জন কারা? না, বীরপ্রতাপ সিংহ। টিমের দশ নম্বর ব্যাট। যাঁর আবার এই ম্যাচে অভিষেক। তিনি গেলে আসবেন এগারো, অর্থাৎ অশোক দিন্দা। এ দিন সকালে হিসেবটা ছিল: তিন পয়েন্ট তুলতে বাংলার চাই ৩৫, দিল্লি পেসারদের দরকার দু’টো বল। একে তো বীরপ্রতাপকে যতটা পারা যায় আড়াল করে রানটা তুলতে হবে মনোজকে, সঙ্গে শট বাছাইয়ে হতে হবে নিষ্ঠুর। লোভের ফাঁদে পা দিলেই মৃত্যু।
পা দেনওনি মনোজ। ন’ঘণ্টা দু’মিনিটের ম্যারাথন ইনিংসে এক সেকেন্ডের জন্যও ধৈর্যচ্যুতি নেই। অন্য দিন হলে যে শর্ট বলগুলোর জবাব ‘পুল’ হত, সেগুলোই আজ ছাড়ছেন মাথা নীচু করে। সিঙ্গলস নিচ্ছেন, কিন্তু ওভারের চতুর্থ বা পঞ্চম বলে। কী করা যাবে, বীরকে পেলেই তো ঘিরে ফেলছে দিল্লি।

রঞ্জিতে বাংলার স্মরণীয় ৫ ইনিংস
১১৮ ও ১১২ বনাম হায়দরাবাদ, ’৬২-’৬৩ সেমিফাইনাল।
৫২ ন.আ. বনাম দিল্লি, ’৮৯-’৯০ ফাইনাল।
১১৬ ন.আ. বনাম কর্নাটক, ’৯০-’৯১ কোয়ার্টার ফাইনাল।
১৮৭ বনাম দিল্লি, ২০১১ গ্রুপ লিগ।
১১৬ বনাম মধ্যপ্রদেশ, ২০০৫ গ্রুপ লিগ।

আর মনোজ? নবাগত তরুণকে সামলে খেলে চলেছেন একের পর এক ওভার, চলেছেন লক্ষ্যের দিকে। শেষমেষ ৩৯২-এর লক্ষ্য পার করলেন বীরপ্রতাপই। তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে বল বাউন্ডারিতে ছুটল আর মনোজ ভাসলেন শিশুর উচ্ছ্বাসে। মুঠো ঝাঁকাচ্ছেন। ব্যাট তুলছেন। ইডেন জুড়ে আবেগের টুকরো-টুকরো ছবি। ১৮৭ করে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে আরা সৌরভ জড়িয়ে ধরলেন মনোজকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যাঁর এ দিন চার হাজার রানও হয়ে গেল। আর চলতি মরসুমে? ৩ ম্যাচে ৫৮৬। গড় ১৯৫.৩৩!
তবে মনোজের এমন অবিশ্বাস্য ইনিংসের পরেও অবনমনের ফাঁড়া পুরো কাটেনি। বাংলা আপাতত ৫ ম্যাচে ৮। লিগ টেবিলের যা ওঠাপড়া, তাতে সম্ভবত ১১ পয়েন্টে বাঁচবে অবনমন। মানে, বরোদার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে তিন পয়েন্ট চাই। পারবে বাংলা? পারাই উচিত। মনোজ ‘ম্যারাথন’ তিওয়ারি আছেন তো!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: দিল্লি ৩৯২ ও ১৮৬-৩, বাংলা ৩৯৭-৯ (মনোজ ১৮৭, বীর ন:আ: ১৫, সঙ্গওয়ান ৫-১০৭)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.