নদী পাড় ছুঁয়ে গিয়েছে ছোট চা বাগান। তিরতির করে বয়ে চলা জলের ধারা আটকে তৈরি হয়েছে বোরো ধানের বীজতলা। চা বাগান থেকে গড়িয়ে আসা কীটনাশক ও বীজতলায় ছড়ানো রাসায়নিক সারের বিষক্রিয়ায় জলে ভাসছে কাঁকড়া, কুঁচো মাছ থেকে অনেক কিছু। ময়নাগুড়ির জরদা ও ধরলা নদীর ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তার। তাঁরা দূষণের মাত্রা জানতে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে পাঠিয়ে দেন। বিপদ এড়াতে বুধবার কৃষি ও ভূমি দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন তাঁরা। ময়নাগুড়ির বিডিও সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, “নদীতে ধান চাষ করতে দেওয়া হবে না। চা বাগান কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করা হবে। জলের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কৃষি, ভূমি দফতরের কর্তা এবং পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত অভিযান শুরু হবে।” গত সোমবার নদী সংস্কারের কাজ ঘুরে দেখার সময় মাছ ভেসে ওঠার ঘটনা ময়নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তাদের প্রথম নজরে আসে। উদ্বিগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ বিডিও-কে খবর দেন। বিডিও এলাকা ঘুরে দেখে ঘটনাস্থল থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন। নির্মাণ সহায়ক বলেন, “চিংড়ি ও কাঁকড়া ভেসেছিল জলে। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান মাঝেমধ্যে এমনটা হচ্ছে।” প্রশাসনের কর্তারা জানান, ওই নদী বক্ষে প্রচুর ধানের বীজতলা তৈরি হয়েছে। নদী পাড়ে গড়ে উঠেছে চা বাগান। সেখানে ব্যবহার করা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের কারণে এমনটা হতে পারে। জলের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে দূষণের কারণ আরও স্পষ্ট হবে। কিন্তু সেই অপেক্ষায় না থেকে নদী বক্ষ থেকে ধান খেত তুলে ফেলার কাজ শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। বুধবার ওই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযানের পরিকল্পনা ঠিক করেন বিডিও। ময়নাগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব দাস বলেন, “নদী বক্ষে তৈরি বীজতলায় অনেকে এমন কিছু কীটনাশক ব্যবহার করছেন যা কখনও উচিত নয়।” ধরলার পুরোটা ধানের বীজতলা। নদীপাড় দখল করে চলছে সবজি ও ধান চাষ। একই হাল জরদা নদীর। বাগজান ও কলাখাওয়া নামে দুটি নদী ময়নাগুড়ি নতুন বাজারের কাছে মিলে জরদা নাম নিয়েছে। বাগজান নদী এলাকায় তৈরি হয়েছে প্রচুর ছোট চা বাগান। এমনকী নদী পাড়ও ছাড় পায়নি। প্রশাসনের কর্তারা জানান, চা বাগানে ছড়ানো কীটনাশক সহজে বৃষ্টির জলে ধুয়ে মিশছে জরদার জলে। শীতের মরশুমে বিষক্রিয়ার মাত্রা অনেকটা বেড়ে যায় নদী বক্ষে ছড়িয়ে থাকা বোরো ধান খেতে ছড়ানো রাসায়নিক সার থেকে। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার বলেন, “দুটি নদীর পরিস্থিতি উদ্বেগ জনক। জরদায় আবর্জনা সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ধরলাতেও ওই ব্যবস্থা নিতে হবে।” |