চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হল হুগলি জেলাতেও
হুগলির শ্রীরামপুর এবং চন্দননগর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে শুক্রবার থেকে যৌথ ভাবে অভিযানে নামল আবগারি দফতর এবং পুলিশ। এ দিন জেলা পুলিশ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার লিটার চোলাই তৈরির উপকরণ নষ্ট করে। শ্রীরামপুর মহকুমায় অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন এসডিপিও রাজরানায়ণ মুখোপাধ্যায়। চন্দননগর মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় অভিযানের নেতৃত্ব দেন এসডিপিও তথাগত বসু। জেলা পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন থেকে দিনে-রাতে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।”
বস্তুত, পুলিশ এবং আবগারি দফতর এ দিন থেকে আসরে নামলেও দুই মহকুমার কয়েকটি অংশে দীর্ঘদিন ধরেই চোলাইয়ের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। আবগারি দফতর এবং পুলিশ তা দেখেও দেখে না। চলতি বছরের গোড়ায় বিষমদে জাঙ্গিপাড়ায় অন্তত ছ’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার পর আবগারি এবং পুলিশের তৎপরতা কিছুটা বেড়েছিল। দিন কতক যেতে না যেতেই অবস্থা যে কে সেই। শ্রীরামপুর মহকুমার জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা এবং ডানকুনির বেশ কিছু এলাকায় চোলাইয়ের ব্যবসা রমরমিয়ে চলে। চণ্ডীতলার কাপাসহাড়িয়া, বেগমপুর, পাঁচঘরা, বারুইপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চোলাইয়ের ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত। জাঙ্গিপাড়ার সীতাপুর, দিলাকাশেরও বেশ কিছু এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে এই ব্যবসা।
অভিযানের পরে পরিত্যক্ত ভাটি। শুক্রবার নসিপুরে দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি।
শুধু শ্রীরামপুর মহকুমা নয় চন্দননগর মহকুমার সিঙ্গুর, দিয়াড়া, নসিবপুর, বড়ার বেশ কিছু অংশে চোলাই ব্যবসার শিকড় অনেক গভীরে। এক শ্রেণির নিম্নবিত্ত মানুষের রুটিরুজির অন্যতম ভরসা এই ব্যবসা। প্রত্যন্ত এই সব গ্রামীণ এলাকা থেকে প্রতি দিন ট্রেন ও সড়ক পথে দূরতম খদ্দেরদের হাতে হাতে নিখুঁত নেটওয়ার্কে পৌঁছে যাচ্ছে চোলাইয়ের পাউচ। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার বেগমপুর স্টেশন হয়ে লিলুয়া, বালি, বেলুড়ে চলে যাচ্ছে এই পানীয়। সড়ক পথে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, দিল্লি রোড, অহল্যাবাঈ রোড হয়ে রীতিমতো গাড়িতে করে কলকাতার বাগুইআটি, বরাহনগর, উল্টোডাঙ্গায় পৌঁছে যাচ্ছে এই চোলাই। হাওড়ার ইছাপুর, দাসনগর, বালটিকুটিকুরিতেও চোলাইয়ের অন্যতম বড় জোগানদার এই হুগলি জেলা।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চোলাইয়ের এই রমরমার জন্য সাধারণ মানুষ দুষছেন পুলিশ ও আবগারি দফতরকেই। সিঙ্গুররে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই চোলাইয়ের উৎপাদন ক্ষেত্র। সেখানকার রায়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণচরণ সাঁতরা বলেন, “পুলিশ এবং আবগারি দফতরের মদত ছাড়া এই ব্যবসার এতটা বাড়বাড়ন্ত সম্ভব নয়।” গ্রামবাসীরা আবগারি দফতরকে দুষলেও, জেলার আবগারি দফতরের অন্যতম কর্তা সমীরণ দালালের মতে, দফতরে কর্মী অত্যন্ত কম। ফলে, প্রয়োজন মতো নজরদারি চালাতে সমস্যা হয়। তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ব্যবসায়ীরা চোলাই তৈরি করছে মানুষ তাতে আসক্ত বলে। মানুষের সচেতনতা বাড়লে এই ব্যবসাও কমতে বাধ্য।”
পুলিশ ও আবগারি দফতর যখন এ দিন অভিযান চালাচ্ছে, তখন চোলাই ব্যবসায় যুক্ত পল্লব চক্রবর্তী রীতিমতো চিন্তায়। তিনি বলেন, “দিনে ১০০ টাকা দিন মজুরিতে কাজ করতাম দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কাছে ভাটিতে। অন্য কাজে রোজ কাজ জোটে না। কিন্তু এই ব্যবসায় কাজের অভাব নেই। এখন সেটাও গেল। অন্য কাজ খুঁজতে হবে।”
এই যখন বাস্তব চিত্র, পুলিশ ও আবগারি দফতরের অভিযান থিতিয়ে গেলে পরিস্থিতি কোনও দিকে যায়, তা সময়ই বলবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.