ছ’বছর ধরে দমকলের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে কসবা শিল্পতালুক। নেই ট্রেড লাইসেন্সও। বাইপাসের কসবা কানেক্টরে এই শিল্পতালুকের ঢিল-ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে দু’টি হাসপাতাল ও বেশ কিছু আবাসন। শিল্পতালুকে কাজ করেন প্রায় তিন হাজার কর্মী।
সেখানকার কারখানা-মালিকদের অভিযোগ, মাথার উপরে অনিশ্চয়তার এই খাঁড়া ঝুলিয়ে কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। সরকারের দ্বারস্থ হয়েও সমস্যা মেটেনি। ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগম, দমকল ও কলকাতা পুরসভার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই তাদের এই বেহাল দশা বলে অভিযোগ মালিকদের।
অভিযোগ অস্বীকার করেননি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তাঁর দাবি, সমাধানসূত্র খুঁজতে দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও তিনি বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, “দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সমস্যাটি নজরে আসে। নয়ের দশকে তৈরি এই শিল্পতালুকে পরিকাঠামোগত সমস্যা অনেক রয়েছে। আমরি-কাণ্ডের পরে দ্রুত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি।”
শুধু নির্দেশে যে কাজ হবে না, তা জানেন মন্ত্রীও। পুরসভা ও দমকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ না করলে শিল্পতালুকের পরিস্থিতি বদলাবে না। মানসবাবুর দাবি, আগামী সপ্তাহে মেয়র এ বিষয়ে বৈঠক করার আশ্বাস দিয়েছেন।
সমস্যার সূত্রপাত প্রকল্পের গোড়া থেকেই। তিনটি পর্যায়ে তৈরি হয়েছে এই শিল্পতালুক। সব মিলিয়ে ৩০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০টি কারখানা। শহরে খাটাল রাখা চলবে না। সেই কারণে আটের দশকে কসবায় তৈরি হয় খাটাল। সেই খাটালই পরে রূপান্তরিত হয় শিল্পতালুকে। চটজলদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জায়গা করে দিতে প্রায় পরিকল্পনাহীন ভাবে এই শিল্পতালুক গড়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। ছোট ছোট প্লট থাকার ফলে খাপছাড়া ভাবে তৈরি হয়েছে কারখানা। রাস্তাঘাটও অপরিসর।
পরিকল্পনা ছাড়া এগোনোর দাম এখনও চোকাতে হচ্ছে শিল্পোদ্যোগীদের। এই শিল্পতালুকের কারখানা-মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক সোমনাথ সেনগুপ্তের অভিযোগ, ‘বিল্ডিং প্ল্যান’ অনুমোদন করেছিল খোদ ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগম। সেই অনুযায়ী কারখানা তৈরি হয়েছে। তখন ট্রেড লাইসেন্সও দিয়ে দেওয়া হয় বলে তাঁর দাবি। এর পরেই বিল্ডিং প্ল্যান ও ফায়ার লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অধিকাংশ সংস্থার ট্রেড লাইসেন্স আটকে যায়। তিনি বলেন, “আইন মেনেই আমরা ব্যবসা করতে চাই। দু’মাস আগে দমকল দফতরের প্রতিনিধিদল সরেজমিন গোটা তালুক দেখে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও সুরাহা হয়নি।” সোমনাথবাবুর অভিযোগ, সম্পত্তিকর নিলেও পুরসভা এখনও জলের সংযোগ দেয়নি। দমকল ও কলকাতা পুরসভার বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। শিল্পতালুকের কর্মীদের আশা, আমরি-কাণ্ড থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে হয়তো লাল ফিতের ফাঁস আলগা হবে। কিছু ঠিক হওয়ার আগে পর্যন্ত বিপদের কথা জেনেও আসতে হবে কাজে। |