মহকুমা হাসপাতালের ‘হাল’ দেখে স্তম্ভিত দমকল-কর্তা
বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ঢোকা-বেরোনোর দরজা মোটে একটি। প্রসূতি বিভাগ, আইসোলেশন ওয়ার্ডেরও একই অবস্থা। রান্নাঘরে মাটির উনুনের পাশেই মজুত তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার। অপারেশন থিয়েটারের বৈদ্যুতিক সংযোগও ত্রুটিপূর্ণ। বেসমেন্টেই স্টোররুম। পরিত্যক্ত সরঞ্জামের ‘পাহাড়’। রয়েছে দাহ্য বস্তুও। পাশেই আবার সার সার অক্সিজেন সিলিন্ডার। বেশ কয়েক জায়গায় ঝুলছে বিদ্যুতের খোলা তার। সব মিলিয়ে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রয়েছে মোটে ১৬টি। এই হাল খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের! আমরি-কাণ্ডের পর জেলায় জেলায় হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করেছে দমকল ও পূর্ত দফতর। বৃহস্পতিবার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের হাল দেখে দমকল-কর্তা রবীন্দ্রনাথ সর্দারের বক্তব্য, “হাসপাতালে এমন পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। বেশ কিছু ঘাটতি রয়েছে। রান্নাঘরে মাটির উনুনের পাশে গ্যাস সিলিন্ডার থাকবে কেন? কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
আমরি-র ঘটনার পরে বুধবার খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরির দফতরে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানেই ঠিক হয়, মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করে দমকল ও পূর্ত দফতরের যৌথ দল রিপোর্ট দেবে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন দমকল ও পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা। প্রথমে হাসপাতাল সুপার দেবাশিস পালের অফিসে আলোচনা করেন তাঁরা। তার পর প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পরিদর্শন। পরিদর্শন শেষে এমন কিছু ঘাটতি ধরা পড়েছে, যা মহকুমা হাসপাতালে থাকা উচিত নয়। যৌথ দলের এক সদস্যের কথায়, “হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পরিত্যক্ত সরঞ্জাম পড়ে রয়েছে। হঠাৎ আগুন লাগলে এই সব সরঞ্জাম থেকেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এখন এখানে ২৭৬টি শয্যা রয়েছে। সব সময়েই আড়াইশোর কাছাকাছি রোগী ভর্তি থাকেন। কখনও সংখ্যাটা ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। তখন অনেক রোগীর ঠাঁই হয় মেঝেতে। জেলা হাসপাতালে উন্নীত হলে আরও অন্তত ১০০ শয্যা বাড়বে। তবে, তার আগে পরিকাঠামো ঢেলে সাজা জরুরি। বৃহস্পতিবারের পরিদর্শনের পরে আরও অনেক ফাঁকফোকরই বেরিয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সুপারের সঙ্গে বৈঠক সেরেই প্রথমে হাসপাতালের রান্নাঘরে যায় যৌথ দল। দেখে, মাটির উনুন জ্বলছে। পাশেই তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার। ঢোকা-বেরোনোর জন্য একটি মাত্র দরজা। আশপাশে বেশ কিছু পরিত্যক্ত সরঞ্জাম। পাশেই আবার জেনারেটর রুম। এই অবস্থা দেখে পূর্ত দফতরের খড়্গপুর ডিভিসনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার-২ গৌরহরি মালাকার বলেন, “এখানে অন্য একটি দরজা থাকা উচিত। না-হলে সমস্যা হবে।” রান্নাঘর ও জেনারেটর রুমের জন্য বরাদ্দ হয়েছে একটি মাত্র ফায়ার এক্সটিংগুইশার। যা দেখে দমকলের ওসি রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এমন জায়গায় একটি সিলিন্ডার থাকবে কেন? অন্তত দু’টি সিলিন্ডার লাগান।” এর পর একে একে মেল সার্জিক্যাল, ফিমেল সার্জিক্যাল, প্রসূতি ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার, নার্স-হস্টেল, স্টোররুম, বেসমেন্ট, আইসোলেশন ওয়ার্ড ঘুরে দেখে যৌথ দল। পরিদর্শনের সময়েই দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ‘লুজ ওয়ারিং’। ‘অচল’ বৈদ্যুতিক তার এ দিকে-সে দিকে ঝুলে রয়েছে। বেসমেন্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেই স্টোররুম তৈরি করা হয়েছে। আশপাশে পরিত্যক্ত সরঞ্জামের ‘পাহাড়’। দমকলের ওসি হাসপাতাল সুপারকে পরামর্শ দেন, “দ্রুত অন্য জায়গায় স্টোররুম তৈরির করার ব্যবস্থা করুন।” হাসপাতালের মধ্যে একটি চায়ের দোকান চলছে দেখেও চমকে ওঠেন সবাই।
পরিদর্শন শেষে হাসপাতাল সুপার বলেন, “কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। কিছু ওয়ার্ডে ঢোকা-বেরোনোর জন্য আরও একটি করে দরজা তৈরি করতে হবে। কিছু জায়গায় লুজ ওয়্যারিং রয়েছে। এগুলি দ্রুত মেরামত করা হবে। ওঁরা (যৌথ দল) যে ভাবে বলবেন, সেই মতোই কাজ হবে।”
এ দিন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালও পরিদর্শন করে দমকলের একটি দল। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখে তারা। খতিয়ে দেখে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। বেশ কিছু ঘাটতি ধরা পড়ে। মেয়াদ-উত্তীর্ণের পরেও ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছেতা-ও ধরা পড়ে। হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় দাহ্য বস্তু মজুত রয়েছে দেখে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন দমকল আধিকারিকেরা। ঘাটাল হাসপাতালের সুপার অনুরাধা দেব বলেন, “দমকলের পরামর্শ মতোই পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হবে।”

অগ্নিসুরক্ষায় কোথায় গলদ
• রান্নাঘরে উনুনের পাশে গ্যাস সিলিন্ডার।
• বেসমেন্টেই স্টোররুম, পাশে অক্সিজেন সিলিন্ডার।
• বিভিন্ন জায়গায় পরিত্যক্ত সরঞ্জাম, দাহ্য বস্তু।
• অপারেশন থিয়েটারেও লুজ ওয়্যারিং।
• রান্নাঘর ও জেনারেটর রুমে একটি মাত্র ফায়ার এক্সটিংগুইশার।
• প্রসূতি-সহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ঢোকা-বেরোনোর একটিই দরজা।


ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.