গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
সরু ঘিঞ্জি গলি পেরিয়ে ঢুকতে-বেরোতে হয় নার্সিংহোমে।
কোথাও নেই অগ্নি নির্বাপণের ন্যূনতম ব্যবস্থা।
জেলার সদর হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও সিলিন্ডার ‘রিফিল’ করা হয়নি।
এ ভাবেই চলছে বড় শহর চুঁচুড়ার নার্সিংহোম-সরকারি হাসপাতালগুলি। গড়পড়তা চিত্রটা সব জায়গায় প্রায় একই রকম।
ইমামবাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই নোটিস ধরিয়েছে দমকল কর্তৃপক্ষ। শুধু সদর হাসপাতাল নয়, চুঁচুড়ায় একটি নার্সিংহোমের মালিককেও দমকলের পক্ষ থেকে নোটিস ধরানো হয়েছে। মহকুমাশাসক জলি চৌধুরী বলেন, “দমকল, পূর্ত দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কী ভাবে ঢেলে সাজা যায়, সেই লক্ষে কাজ শুরু হয়েছে।”
হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি হাসপাতাল ছাড়া সদর মহকুমায় মোট ২১টি নার্সিংহোম রয়েছে। যে সমস্ত নার্সিংহোমে ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নার্সিংহোমগুলির নির্মাণ ন্যাশানাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী করা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের অদূরেই এমন একটি নার্সিংহোম রয়েছে, যেটি চার ফুট সরু গলির মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। কোনও ভাবে আগুন লাগলে সে ক্ষেত্রে দমকলের গাড়ি কোনও মতেই সেখানে ঢুকতে পারবে না। অপরিসর গলিতে আগুন প্রতিরোধে যাওয়ার ন্যূনতম কোনও সুযোগ থাকবে না দমকল কর্মীদের। ওই নার্সিংহোমের অন্যতম মালিক দেবাশিস নাগ অবশ্য বলেন, “আমরা নার্সিংহোমের পিছনে একটি চওড়া জমি কিনেছি রাস্তা নির্মাণের জন্য। শীঘ্রই সেই কাজ শুরু হবে।” |
শুধু নার্সিংহোম বা হাসপাতাল নয়, শহরের শপিং মল, সিনেমা হল, হোটেল, বহুতলগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অগ্নি বিধি আদৌ মানা হয় না। অথচ প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ সেখানে ভিড় জমান। কোনও ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তা বহু মানুষের প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে হতে পারে। বস্তুত, এই সব ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ আছে কিনা, তা প্রশাসনের দিক থেকে এত দিন কোনও নজরদারির ব্যবস্থা ছিল না। কার্যত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। চুঁচুড়া শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নার্সিংহোম, শপিং মল, বহুতল বা সিনেমা হলগুলির মালিকেরা বহু রোজগার করেন। কিন্তু মানুষের সুরক্ষার জন্য তাঁরা এতটুকু ভাবিত নন।
কলকাতায় আমরির ঘটনার পর দেরিতে হলেও প্রশাসনের চোখ খুলে দিয়েছে। এই সব অরক্ষিত ক্ষেত্রগুলিতে এ বার অগ্নিবিধি লাগু করার লক্ষ্যে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে। চুঁচুড়া দমকল কেন্দ্রের ওসি বরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহরের নার্সিংহোমগুলি যাতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে মেনে চলে, সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে পর্যায়ক্রমে নোটিস দেওয়া হবে। তারপর আমাদের অফিসারেরা সরাসরি সেখানে গিয়ে খতিয়ে দেখবেন, আদৌ নার্সিংহোমগুলিতে কী ব্যবস্থা রয়েছে। যে ক্ষেত্রে তা থাকবে না, সেই ক্ষেত্রে ঠিক কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তার নির্দেশ দেওয়া হবে। আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আগুন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিরও একটি বড় ভূমিকা থাকে। কারণ শহরে নার্সিংহোম, শপিং মল, সিনেমা হল, নার্মিংহোমগুলিকে প্রাথমিক ভাবে পুরসভার অনুমতি নিতে হয়। সেই সব অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভা কড়া ব্যবস্থা নিলে অনেক সময় বিপদ এড়ানো যায়। এই বিষয়ে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “হুগলি ও চুঁচুড়া শহরের স্কুল, কলেজ, নার্সিংহোম, সিনেমা হল, শপিং মল এবং যেখানে মানুষের জমায়েত হয় সেই সব ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে পুরসভা একটি কমিটি তৈরি করেছে। ওই কমিটি আগামী রবিবার থেকে পরিদশর্নের কাজে তদন্তে নামবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্তক করবে। যে সব ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি তা-ও নেবে।” এ দিকে, দমকল কর্তৃপক্ষ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার তদন্তের জন্য নোটিস ধরালেও জেলা সদর চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের সুপার শ্যামল চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, “আগুনের সম্ভাব্য বিপদ রুখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে দিয়েছে।” |