বসতবাড়িতেই চলছে নার্সিংহোম
রামবাগের নার্সিং হোমগুলির একটিতেও অগ্নি সুরক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা নেই। দমকল দফতরের বৈধ ছাড়পত্রও নেই কারও। খান তিনেক নার্সিংহোমে একটি করে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ‘রিসেপশন’ লেখা কাউন্টারের গায়ে ঝুলিয়ে রাখলেও তা ব্যবহারের কায়দা-কানুন যে কারও জানা নেই, তা স্বীকার করতেও দ্বিধা করেননি তাঁরা।
আরামবাগ শহরে মোট ১৬টি নার্সিংহোম। এগুলির মধ্যে মাত্র তিনটির নার্সিংহোম হিসাবে নকশা অনুমোদন করানো হয়েছে পুরসভা থেকে। বাকিগুলি সব বসবাসের বাড়ি, পরবর্তীকালে যা নার্সিংহোমে রূপান্তরিত হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। সেগুলির নার্সিংহোম হিসাবে প্ল্যান অনুমোদন হয়েছি কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুরসভা। পুরপ্রধান গোপাল কচ জানান, ‘‘নার্সিংহোম হিসাবে কতগুলি প্ল্যান পাস করানো হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।’’
দমকল দফতরের বৈধ ছাড়পত্র ছাড়াই নার্সিং হোমগুলি চলছে, তা স্বীকার করে আরামবাগ মহকুমা নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের সম্পাদক তথা চিকিৎসক নিমাই কুণ্ডু জানান, ‘আমাদের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা-সহ অনেক রকম ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। অতীতে স্বাস্থ্য দফতর বা অন্য কোনও স্তর থেকে কোনও নির্দেশ ছিল না। আমরির ঘটনা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে আমরা সংগঠনের তরফে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পনেরো দিনের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নার্সিংহোমগুলির ত্রুটি-বিচ্যুতি কি রকম?
নার্সিংহোমের অপরিসর প্রবেশ পথ। ছবি: মোহন দাস।
অধিকাংশের রান্নাঘর একই ছাদের তলায়। বিদ্যুতের লাইনও জবরজং। জেনারেটরের ঘর এক কোণে। বের হওয়ার পথ নীচের তলায় দু’টি থাকলেও একটি অত্যন্ত অপরিসর। দোতলা বা তিনতলা থেকে নামার একটাই মাত্র সিঁড়ি। ঘরগুলি ঘিঞ্জি। দু’দিকে ঘরের মাঝে সরু বারান্দায় এক সঙ্গে একের বেশি মানুষের হাঁটা দায়। এ ছাড়া, কোনও নার্সিংহোম হয় তো ১০ বা ৩০ শয্যার অনুমতি নিয়েছে, সেগুলিতে রোগী রাখা হয় দ্বিগুণেরও বেশি। সারাক্ষণের চিকিৎসক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স না থাকার ঘটনাও স্বাস্থ্য দফতর এবং আরামবাগ পুরসভার অজানা নয়। আর অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার তো অধিকাংশেরই নেই।
এ সব অনিয়ম সত্ত্বেও নার্সিং হোমগুলির বিরুদ্ধে কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, ‘নার্সিংহোমগুলিতে নজরদারির ঘাটতি ছিল। গত মঙ্গলবারই সর্বত্র নোটিস পাঠিয়ে নিয়মমাফিক পরিকাঠামো তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রকৃত পক্ষে বাড়ি নির্মাণের সময়েই দমকলের ছাড়পত্র নিতে হয়। সেই ছাড়পত্র তিনি আদৌ পেয়েছেন কিনা, আগে তা আমরা খতিয়ে দেখিনি এটা বাস্তব। এ বার তা দেখা হবে।’’ বাড়ি নির্মাণের সময় দমকলের ছাড়পত্র যে দেখা হয়নি তা মেনে নিয়ে আরামবাগের পুরপ্রধান গোপাল কচ বলেন, ‘আগে আগুন সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও অনেক গলতি রয়েছে। সে সব নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।”
আরামবাগের নার্সিংহোমগুলির মধ্যে কোর্ট মোড়ের উপরে পর পর দু’টি নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা গেল, একটিতে দমকলের গাড়িই ঢুকবে না। অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারও নেই। রোগীদের থাকার ছোট ছোট খুপড়িগুলোর পাশেই টিনের চালা বানিয়ে রান্নাঘর করা হয়েছে। নার্সিংহোমের মালিক তথা চিকিৎসক কালীদাস ঘোষ থাকেন উপরতলায়। আগুন লাগলে কী করবেন? কালীদাসবাবুর নির্বিকার উত্তর, ‘‘বালতি করে জল দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’
একটু তফাতেই নার্সিংহোমটিতে ২০০৮ সালের পরে আর আগুন নেভাবার সিলিন্ডার রাখাই হয়নি। সেখানেও রান্নার ব্যবস্থা নার্সিংহোম থেকে বের হবার দ্বিতীয় বিকল্প পথের গায়েই। উপরে ওঠার সিঁড়ির পাশ দিয়ে ওই পথটি অন্ধকার। মাথা অনেকটা হেঁট করে বের হতে হবে। এখানে বিপদ ঘটলে দমকল বাহিনীর জলের পাইপ নিয়ে নড়াচড়ার উপায় নেই। এত আঁকাবাঁকা এবং অপরিসর করিডর। আবার লিংক রোডের হাসপাতাল মোড়ের কাছাকাছি একটি নার্সিংহোম তিনতলা। নার্সিংহোমের নীচে বেশ কিছু দোকানঘরের মধ্যে একটি ত্রিপলের দোকান আছে। জেনারেটর দেখা যাচ্ছে নার্সিংহোমের নীচে। তিনতলা নার্সিংহোমে একটি মাত্র ছোট অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার রিসেপশন কাউন্টারের কাছে ঝুলছে। মালিক শেখ সিরাজুল আলম জানান, ‘দমকল দফতরে আমরা নিজেরাই ফোন করে তাদের নির্দেশিকা পেয়েছি। সব অনিয়ম শুধরে নেওয়া হবে।’
এত অনিয়মের ভিড়েও বেনেপুকুর রোডের উপরে একটি নার্সিংহোম কিংবা মিঞাপাড়ার একটি নার্সিংহোম বেশ কিছু নিয়ম মানার চেষ্টা করেছে। বেনেপুকুর রোডের নার্সিংহোমটিতে তিনটি বের হওয়ার পথ। তিন দিক থেকেই দমকল সহজে ঢুকে যাবে। রান্নাঘর, জেনারেটর, পাম্পসেট বাইরে। এঁদের দু’টি অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। নার্সিংহোমের মালিক মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘‘আমরা চাইছি দমকলের সমীক্ষা দ্রুত হোক। তাদের পরামর্শ চাইছি আমরা।’’ প্রথমেই মিঞাপাড়ার নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নিজেরাই দমকল দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন। নার্সিংহোমের মালিক শেখ সেলিম বলেন, ‘‘দমকল থেকে এখনও কেউ আসেনি। তবে আমাদের দড়ির মই রাখার পরামর্শ দিয়েছে, জানালা ভেঙে যাতে সহজে নামা যায়।’’
আগুন-সংক্রান্ত সমীক্ষা কেন একদিন হয়েই বন্ধ হল?
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, ‘‘বন্ধ হয়নি। কোথায় কোন কোন ক্ষেত্রে সমীক্ষা হবে সেই সব তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা তৈরি হচ্ছে। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ছিলেন না। তিনি ফিরেছেন। এ সপ্তাহের মধ্যেই সমীক্ষার কাজ শুরু হবে। প্রথম দফায় নার্সিংহোমগুলি দেখা হবে। পাঠাগার, বাজার, হাট, লজ, হোটেল সব দেখা হবে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.