নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ‘অ্যানেক্স বিল্ডিং’-এ আগুন লেগেছিল ৮ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাত ৩টে ২০ মিনিটে। অথচ আগুন লাগার খবর রাত ৩টে ৫০ মিনিট পর্যন্ত পাননি ওই রাতে ডিউটিতে থাকা আমরির টেলিফোন অপারেটরই!
পুলিশি সূত্রের খবর, ঘটনার রাতে আমরিতে কর্তব্যরত টেলিফোন অপারেটরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য মিলেছে। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানান, রাত ৩টে ৫০ মিনিটে নিরাপত্তাকর্মীরা একটি নির্দিষ্ট কোড মারফত ওই অপারেটরকে আগুন লাগার কথা জানান। তার ১০ মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালের টেলিফোন লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক পুলিশকর্তা বলেন, “টেলিফোন অপারেটর আগুন লাগার খবর পেলেও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি দমকলকে খবর দিতে পারেননি। তাঁকে আগে থেকে নির্দেশ দেওয়া ছিল, আগুনের খবর পেলে প্রথমে হাসপাতালেরই নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি বিভাগে তা জানাতে হবে।” পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে রাতে এক জন টেলিফোন অপারেটর ডিউটিতে থাকতেন। এবং ঢাকুরিয়ায় আমরির মূল ভবনেই বসতেন তিনি।
৮ ডিসেম্বর রাতে বেসমেন্টের আগুন নেভানো বা রোগীদের বার করার বিষয়টিকে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন? তা জানতে লালবাজারের তদন্তকারী দল ঘটনার রাতে আমরিতে কতর্ব্যরত ফোন অপারেটরের সঙ্গে কথা বলেন। ওই অপারেটর রাতে কাকে কাকে ফোন করেছিলেন, পুলিশ তা পরীক্ষা করছে। পুলিশি সূত্রের খবর, ওই অপারেটর আগুনের খবর পাওয়ার ১০ মিনিট পরে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পরে তিনি নিজের মোবাইল থেকেই কয়েক জনকে ফোন করে খবর দেন। কাদের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেন, কলরেকর্ড ঘেঁটে তা যাচাই করছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তার কথায়, “হাসপাতালের রোগী, আত্মীয়, কর্মী, ওখানকার বাসিন্দা মারফত জেনেছি, রাত সওয়া ২টো নাগাদ বেসমেন্টে আগুন লাগে। কিন্তু ফোন অপারেটরকেই খবর জানানো হয় অনেক পরে।” আগুন ঠিক কখন লাগে, তার জবাবের জন্য ভরসা এখন বিচার বিভাগীয় তদন্তই। আমরি-কাণ্ডে সরকার যে কড়া ব্যবস্থা নিতে চায়, সেই ইঙ্গিত দিয়ে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেই বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় তিনি জানান, আমরি-কাণ্ডের তদন্ত করবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তপন মুখোপাধ্যায়। মমতা বলেন, “লজ্জাজনক, মর্মান্তিক ঘটনা। দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান এ দিন মহাকরণে বলেন, “এখনও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট পাইনি। সব রিপোর্ট মিলিয়েই আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে চূড়ান্ত মত দেওয়া হবে।” আমরি-কাণ্ডে দমকলের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জাভেদ বলেন, “রিপোর্ট বলছে, হাসপাতালের বেসমেন্টে প্রচুর ডিজেল, ইথার, ওষুধ, রাসায়নিক পদার্থ, লোহার ছাঁট, কাপড় পড়ে ছিল।” দমকলকর্তাদের সঙ্গে পুলিশও কথা বলছে। পুলিশের বক্তব্য, সে-রাতে ওই হাসপাতালে বিপদঘন্টি, ধোঁয়া-সঙ্কেত যন্ত্র বা স্প্রিংকলার কী অবস্থায় রাখা ছিল, বিপদের সময় সেগুলো কেন কাজ করল না —তার রিপোর্ট তৈরি করা হবে দমকলের সঙ্গে কথা বলেই।
এ দিনই বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ আমরিতে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করতে থাকে। দমকলকর্মীরা দ্রুত পরিস্থিতি সামলান। |