সরকারি প্রতিনিধিদের ঠুঁটো রেখেই বৈঠক হত আমরির
ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের পরিচালন সমিতিতে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের যে প্রতিনিধিরা ছিলেন, কার্যত তাঁদের কোনও সক্রিয় ভূমিকা ছিল না বলে দাবি করলেন ওই সমিতিতে থাকা প্রাক্তন সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, শেয়ার হোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালের পরিকাঠামো-পরিষেবা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করতেন না আমরি-কর্তারা।
জমি দেওয়ার বিনিময়ে ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের শেয়ার হোল্ডার ছিল স্বাস্থ্য দফতর। তাই হাসপাতালের পরিচালন সমিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। প্রথমে সমিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের চার জন প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে রাজ্য সরকারের শেয়ার কমে গেলে সরকারের তরফে সদস্যসংখ্যা কমে দুই হয়ে যায়। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের ভূমিকাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের পরিচালন সমিতিতে থাকা রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্যেই এমন কথা উঠে এসেছে।
বছরে চার বার করে পরিচালন সমিতির বৈঠক হত। প্রাক্তন সদস্যদের অনেকেরই মত হল, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা সেখানে ছিলেন কার্যত ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। হাসপাতাল কী কী ভাল কাজ করেছে, কী কী নতুন যন্ত্র বসেছে এ সব নিয়েই মূলত আলোচনা হত। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও প্রস্তাব দিলে তা রূপায়ণ হত না। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অনেক সময় তাঁদের সই নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি আমরি-কর্তৃপক্ষ।
প্রাক্তন সদস্যদের এই বয়ানের সঙ্গে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের পাওয়া তথ্যেরও মিল রয়েছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেনের বক্তব্য, “আমরির পরিচালন সমিতিতে এমন কিছু সদস্য রয়েছেন, যাঁদের শুধু সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাঁদের সব সময়ে জানানো হত না। ওঁরা কিছু বললে সেটাও গ্রাহ্য করা হত না। সরকারি প্রতিনিধিদের অবস্থাটা ছিল সে রকমই।” তা সত্ত্বেও কেন আমরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন।
পরিচালন সমিতিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের ভূমিকা কেমন ছিল? রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা (২০০১-২০০৫) চিত্তরঞ্জন মাইতি বলেন, “আমরা কিছু জানতে চাইলে তোদিরা এড়িয়ে যেতেন। হাসপাতাল পরিচালনা নিয়ে কিচ্ছু আলোচনা করতে চাইতেন না।” আমরি ঢাকুরিয়া-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর মণি ছেত্রীই সর্বেসর্বা ছিলেন বলে চিত্তরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “অনেক বার বৈঠকে ছেত্রী সাহেবকে বলেছি পরিকাঠামো নিয়ে, রোগী পরিষেবা নিয়ে আলোচনা করুন। শোনা হয়নি।” স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্যকে আমল না দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের কি কিছুই করার ছিল না? চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “বিরক্ত হয়ে আমি নিজেই আমরিতে একাধিক বার পরিদর্শনে গিয়েছি। দেখেছি দুই শয্যার মধ্যে যে দূরত্ব রাখা দরকার, তা নেই। সেন্ট্রাল এসি করতে বারণ করেছিলাম। শোনেনি।” রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা পদত্যাগ করলেন না কেন? আমরিকে সতর্ক করেনি কেন স্বাস্থ্য দফতর? চিত্তরঞ্জনবাবুর উত্তর, “ওদের অনেক উঁচু মহলে যোগাযোগ ছিল। চুক্তি হয়েছে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। আমরা তো সাধারণ সরকারি কর্মচারী। মহাকরণের নির্দেশ মানতেই হত।”
প্রাক্তন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এক সময় আমরির পরিচালন সমিতিতে ছিলেন। তাঁর কথায়, “প্রতিটি বৈঠকেই আমাদের ডাকা হত। কিন্তু মতামত নেওয়া হত না। কত রোগী ভর্তি হয়েছে, কত অস্ত্রোপচার হয়েছে, ক’টা সেমিনার-ওয়র্কশপ হয়েছে, এই সব হিসেব দেখানো হত। কিন্তু রোগী নিরাপত্তা, পরিকাঠামো, গরিবদের চিকিৎসার বিষয় উঠত না।” কেন তাঁরা চুপচাপ থাকতেন? সৌমেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এর জবাব দিতে পারব না। আমাদের কখনও কেউ কিছু বলেনি। আমিও তুলিনি।”
এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব সুকুমার ভট্টাচার্য ওই পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন। ২০১১ সালের মার্চ-এপ্রিল থেকে তিনি পরিচালন সমিতির সদস্য। এখনও পর্যন্ত দু’টি বৈঠকে হাজির ছিলেন তিনি। তিনিও মেনে নিয়েছেন, “ওরা শুধু ডাক্তারি নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করে। হাসপাতাল পরিচালনা ও পরিকাঠামো নিয়ে খোলাখুলি কথা হলে হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা হত না।”
কী বলছেন আমরির ম্যানেজিং ডিরেক্টর, প্রবীণ চিকিৎসক মণি ছেত্রী? তাঁর বক্তব্য, “আমি রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারটা দেখতাম। পরিকাঠামো বা আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কেমন আছে জানতে চাইলে, তোদিরা বলত সব ঠিক আছে। ওই বিষয়ে আর আলোচনা করত না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.