মূল ‘বিল্ডিং প্ল্যান’-এর বাইরে গিয়ে অনেক হাসপাতাল পরে প্রায়ই সেই নকশার হেরফের ঘটায়। এ বার থেকে তা করলে তার আইনি ছাড়পত্র বাতিল করা হবে বলে বৃহস্পতিবার মহাকরণে জানান রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ। তিনি বলেন, “কোনও হাসপাতাল ইতিমধ্যে এ-রকম কিছু করে থাকলে মূল নকশায় যা ছিল, সেখানেই ফিরে যেতে হবে।” বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য যে-সব বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়, তার মধ্যে কোন কোন ভবন নিরাপদ নয়, তা-ও প্রকাশ্যে জানিয়ে দেবে কলকাতা পুরসভা।
মুখ্যসচিব বলেন, আপাতত জানুয়ারি পর্যন্ত আগামী এক-দেড় মাস মূলত কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা এবং সেই সংক্রান্ত সমস্ত সতর্কতা বলবৎ করাই রাজ্য সরকারের প্রথম লক্ষ্য। ওই সব হাসপাতালে কী কী ন্যূনতম ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে, দু’দিনের মধ্যে তা ঘোষণা করবে রাজ্য সরকার। দমকল, পুলিশ, কলকাতা পুরসভা, বিপর্যয় মোকাবিলা, স্বাস্থ্য ছাড়াও পূর্ত দফতরের বৈদ্যুতিন শাখার অফিসারেরা মিলে ওই ‘ন্যূনতম মাপকাঠি’র তালিকা তৈরি করবেন। তার দু’-এক দিনের মধ্যে ওই সব দফতরের প্রতিনিধিরা মিলে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনে বেরোবেন। প্রথম দফার পরিদর্শনে কার কী ঘাটতি আছে, প্রতিটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। ১৫ দিন পরে আবার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা হবে, তারা নতুন ব্যবস্থা কতটা মেনেছে। এর পরেও বড় ধরনের গাফিলতি চোখে পড়লে সেই সব হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সর্বত্র ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’ (এনবিসি) বা জাতীয় ভবন বিধি এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা মানা সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তার ন্যূনতম মাপকাঠি মানতেই হবে।
মুখ্যসচিব বলেন, কলকাতা পুলিশ, পুরসভা এবং দমকলকে নিয়ে গড়া পরিদর্শকদলটি শপিং মল, সিনেমা হল ও বিয়েবাড়ি ঘুরে দেখবে। যে-সব বিয়েবাড়ি যথেষ্ট নিরাপদ নয়, কলকাতা পুরসভার মাধ্যমে সেগুলি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। মূলত কলকাতার হাসপাতাল দিয়েই এই অভিযান শুরু হবে। জেলাগুলিকেও একই রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে বহুতল আবাসন এবং বাণিজ্যিক ভবনগুলিতেও একই ধরনের নজরদারি চালানো হবে। তবে ইতিমধ্যে বহুতল আবাসনের বাসিন্দাদের উদ্দেশে একটি সাধারণ নিরাপত্তা বিধি জারি করা হবে।
দমকল বিধি না-মানায় গত মঙ্গলবার শেক্সপিয়র সরণির ‘নাইটিঙ্গেল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেয়ার সেন্টার’ হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এ দিন বিকেলে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়ে হাসপাতালটিকে এক মাস সময় দেন দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান। এ দিন মহাকরণে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন নাইটিঙ্গেলের কর্তা শ্যামলেন্দু ঘোষাল। তিনি বলেন, “চল্লিশ বছরের পুরনো ভবন। তার সব কিছু বদলানো যাবে না। মন্ত্রীকে বলেছি, ১৯ বার আমাদের লাইসেন্স নবীকরণ হয়েছে। কোনও বার কেউ আপত্তি তোলেনি। এ বারেই প্রথম আপত্তি জানানো হল।” মন্ত্রী জানান, অবস্থা শুধরে নিতে নাইটিঙ্গেল হাসপাতালকে এক মাস সময় দিয়েছে রাজ্য সরকার। এক মাসের মধ্যে তারা সব ঠিকঠাক করেছে কি না, দমকল বিধি মেনেছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে দমকল দফতরের পরিদর্শকদল। অবস্থা ঠিক থাকলে তাদের লাইসেন্স নবীকরণ হবে। |