কেউ সমস্যায় পড়লেন শ্মশানে সৎকার করতে গিয়ে।
কেউ কেউ ঝামেলায় পড়লেন ডিসপোজাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে অন্য কাগজপত্র সংগ্রহ করার সময়ে।
ওঁদের সমস্যাটা কীসের?
ওঁদের নিকটজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে।
অথচ এসএসকেএম হাসপাতালে ময়না-তদন্ত করে যখন ডিসপোজাল সার্টিফিকেট দেওয়া হল, তাতে লিখে দেওয়া হল, মৃত্যু হয়েছে এসএসকেএমে!
ডিসপোজাল সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার সময় তাতে কী লেখা আছে, সেটা পড়ে দেখার মতো মনের অবস্থা ছিল না মৃতের পরিজনদের। এর থেকে যে সমস্যা হতে পারে, তা-ও জানা ছিল না তাঁদের। ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। সেই টাকা পেতেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে হবে মৃতের পরিবারকে। কিন্তু ময়না-তদন্তের পরে ডিসপোজাল সার্টিফিকেটে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু দেখানোয় ক্ষতিপূরণ পেতে সমস্যা হবে কি না, মৃতের আত্মীয়েরা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মৃতদের পরিবারের কেউ চাকরির জন্য আবেদন করলেও তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে, তাঁর পরিজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকুরিয়ার আমরিতে।
বিশ্বনাথ কাহালি |
বুধবার থেকেই মৃতদের পরিজনেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে তাঁদের সমস্যার কোনও সুরাহা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। কেউ কেউ স্বাস্থ্য দফতরে তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়ে আবেদনও করেছেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই ধরনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে। মনে হচ্ছে, খুব তাড়াহুড়ো করে এত মৃতদেহের ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা করতে গিয়েই এই ভুলটা হয়ে গিয়েছে। সেগুলি অবিলম্বে সংশোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু কে করবে সংশোধন?
এসএসকেএম হাসপাতাল কিংবা ভবানীপুর থানা মৃতের পরিজনদের কোনও দিশা দেখাতে পারেনি।
আমরির অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো তপনকুমার দে-র বাড়ির লোককে যে-ডিসপোজাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল, সেটি তাঁরা তখন খুঁটিয়ে দেখেননি। পরে দেখেন, মৃত্যুর জায়গা হিসেবে লেখা রয়েছে ‘এসএসকেএম’। তাঁর মেয়ে তনুকা দে-র বক্তব্য, মৃত হিসেবে ঘোষণা করেই ময়না-তদন্তের জন্য মৃতদেহটি এসএসকেএমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমরি-কর্তৃপক্ষ। এ বার এই একটি ‘ভুল’ তথ্যের জন্য জীবন বিমা থেকে শুরু করে আমরি-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্তব্য ক্ষতিপূরণের টাকা পর্যন্ত সবই আটকে যেতে পারে।
তপনবাবুর পরিবারের আশঙ্কা, ডিসপোজাল সার্টিফিকেট যখন এমন ‘ভুল’ রয়েছে, তখন ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও হয়তো ভুল তথ্য থেকে যেতে পারে। ফলে ওই দুর্ঘটনাতেই যে তপনবাবু প্রাণ হারিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে সেটা প্রমাণ করতেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে তাঁদের।
স্কুলশিক্ষিকা পরমা চক্রবর্তীর ডিসপোজাল সার্টিফিকেটেও ‘রেসিডেন্স অ্যাট দ্য টাইম অফ ডেথ’-এর জায়গায় এসএসকেএম লেখা। তাঁর দিদি সোমা গুহরায় বলেন, “মৃতদেহ নেওয়ার সময় আমাদের মানসিক অবস্থা এমনই বিপর্যস্ত ছিল যে, ভাল করে সব দেখে নেওয়ার কথা মনে হয়নি। এখন কোথায় যাব, কী করব, বুঝতে পারছি না।” একই সমস্যায় পড়েছেন জয়রামবাটীর প্রাকৃতা পালের স্বজনেরাও। তার বাবা ধনঞ্জয় পাল জানান, সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় ‘ভুল’-এর বিষয়টি খেয়াল করেননি তাঁরা। ধনঞ্জয় পাল, তনুকা দে কিংবা সোমা গুহরায়কে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে কে?
এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার প্রভাস চক্রবর্তী বলেন, “ভুলটা তো আমাদের নয়। পুলিশ ‘প্লেস অফ ডেথ’ হিসেবে এসএসকেএম লিখেছে। তাই এখন যা করার ওদেরই করতে হবে।” ভবানীপুর থানার অফিসারেরা বলছেন, যে-হেতু মৃতদেহগুলি তাঁরা প্রথমে এসএসকেএমেই নিয়ে যান। তাই এসএসকেএম লেখা হয়েছে।
কিন্তু বেশ কিছু ডিসপোজাল সার্টিফিকেটে মৃত্যুর স্থান হিসেবে আমরির নামও লেখা। সেটা কি তা হলে ভুল হয়েছে? ভবানীপুর থানা এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
তা হলে সমস্যাটা মেটাবে কে?
স্বাস্থ্য ভবন বলছে, এ ক্ষেত্রে যা করার, তা করতে হবে ওই দিনের ময়না-তদন্তকারী অফিসারকেই। এসএসকেএমের ফরেন্সিক ও স্টেট মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহালিকেই ডিসপোজাল সার্টিফিকেটের সব ভুল শুধরে দিতে হবে। বিশ্বনাথবাবুর অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাই তিনি এখন ছুটিতে। তিনি কাজে ফিরে যা করার করবেন।
অসুস্থ বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “পুলিশ কিছু ক্ষেত্রে আমরি লিখলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসএসকেএম লিখেছে। মৃতের পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে ভর্তি থাকার কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা করব।”
মৃতদের পরিবারের অভিযোগ, যাঁরা আমরিতে মারা গিয়েছেন, তাঁদের অনেকের সব কাগজপত্রও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাঁরা কী ভাবে কাগজপত্র পেশ করবেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। বিশ্বনাথবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ভর্তির সময়ে বা তার পরে হাতে পাওয়া যে-কোনও কাগজ এবং নাম-ঠিকানার প্রমাণপত্র নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি এই সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। |