নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
একই সঙ্গে ডুয়ার্সের আট জন চা শ্রমিকের রক্তে চিকনগুনিয়ার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে তিনজন ডেঙ্গিতেও আক্রান্ত। জলপাইগুড়ি জেলার মাদারিহাট ব্লকের গেঁদাপাড়া, সিংহানিয়া এবং দলমোড় বাগানে জ্বরে আক্রান্ত দশ জন চা শ্রমিকের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করতে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে তার মধ্যে আট জনের রক্তে চিকনগুনিয়ার জীবাণু পাওয়ার কথা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। চিকনগুনিয়ার সঙ্গে ডেঙ্গিরও জীবাণু পাওয়া যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ বলে স্বাস্থ্য দফতর মনে করছে। চিকনগুনিয়ায় না হলেও ডেঙ্গিতে মৃত্যু হার বেশি বলে স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানানো হয়েছে। নভেম্বর মাসে ডুয়ার্সের তুলসিপাড়া চা বাগানে সুজিত ওঁরাও নামে এক বাসিন্দার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। তাঁর রক্তেও চিকনগুনিয়ার জীবাণু পাওয়া যায়। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, চিকনগুনিয়ায় নয়, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে অপুষ্টিজনিত রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শুধু মাদারিহাটের তিনটে চা বাগান নয়, জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে তুলসিপাড়া, লঙ্কাপাড়া, হান্টাপাড়া, রামঝোড়ার মতো চা বাগানগলিতেও। স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে বিভিন্ন চা বাগান মিলিয়ে প্রায় তিনশো জন জ্বরে আক্রান্ত। তবে সকলেরই শরীরে চিকনগুনিয়ার উপসর্গ নেই। যাদের ক্ষেত্রে চিকনগুনিয়ার রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছে তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে। বাকি আক্রান্তদেরও ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি-সহ নানান পরীক্ষার কাজ চলছে। চিকনগুনিয়ার রিপোর্ট পাওয়ার পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডুয়ার্সের সব চা বাগানেই সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিতে ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সব বাগানগুলিতে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে। সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এডিস ইজিপ্টি নামে বিশেষ প্রজাতির মশার কামড়ে চিকনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই প্রজাতির মশাগুলি রাতের বেলায় জঙ্গল বা স্যাঁতসেতে এলাকায় থাকে। দিনের বেলায় মানুষকে কামড়ায় বলে জানা গিয়েছে। সে কারণে দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর এবং মূলত চা বাগান বা মাঠে কাজ করতে গেলে সারা শরীর পোশাকে মুড়ে ফেলার বিষয়ে সচেতনতা প্রসারের কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যাথা, চোখ জ্বালা করা, হাতে পায়ে লাল হয়ে জ্বালা করা এবং সারা শরীরে চুলকানি এই রোগের লক্ষণ হতে পারে বলে স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “কলকাতা থেকে এসএমএসে চিকনগুনিয়ার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছ। যে চা বাগানগুলিতে রোগের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে সেই বাগানগুলিতে বেশি করে প্রতিষেধক পাঠানো হয়েছে।” স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানানো হয়েছে, এই রোগ নিরাময়ের কোনও বিশেষ ওষুধ নেই। সাধারণ প্রতিষেধক চা বাগানগুলিতে পাঠানো হয়েছে। |