শিশু বিভাগে ৪ জন মহিলা সাফাইকর্মীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করার প্রতিবাদে হাসপাতালের সমস্ত কাজ বন্ধ করে কর্তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল কংগ্রেস অনুমোদিত মালদহ স্পেশাল হেলথ ওয়াকার্স ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার মালদহ জেলা সদর হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। তার জেরে হাসপাতালের সাফাই থেকে শুরু করে সমস্ত পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে যায়। ওই ঘটনায় বিরক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। মন্ত্রী বলেন, “আমি বাইরে রয়েছি। কারা হাসপাতালে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করছে আমি জানি না। তবে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন অন্যায়। শুক্রবার মালদহে ফিরে বিষয়টি দেখব।” তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান দুলাল সরকারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দুলালবাবু বলেন, “মালদহ জেলায় কতগুলি তৃণমূল কংগ্রেসের শাখা আছে আমি জানি না। যে কেউ দলের ঝান্ডা ধরে বলছে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। যা চলছে তাতে জেলায় আর রাজনীতি করা যায় না। সে জন্য আমি জেলা রাজনীতি নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছি না।” পাশাপাশি, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি মানব বন্দোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, কাজ বন্ধ করে কোনও আন্দোলন করা যাবে না বলে দলনেত্রীর নির্দেশ রয়েছে। তাংর কথায়, “এ ধরনের আন্দোলন সংগঠন বিরোধী। এর পরেও কেউ কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করে থাকলে আমরা সেখানে নেই। তবে আমাদের দাবি, যাঁরা বতর্মানে হাসপাতালে ঠিকা শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্য থেকেই ওই অস্থায়ী নিয়োগ করতে হবে। বাইরে থেকে কাউকে নেওয়া চলবে না।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু বিভাগের অসুস্থ সদ্যোজাতদের দেখাশোনার জন্য চারজন মহিলা সাফাই কর্মীর প্রয়োজন। যে ঠিকাদার সংস্থা হাসপাতালে সাফাই ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছে তাদেরই চারজন মহিলা সাফাই কর্মী দেওয়ার জন্য বলা হয়। ঠিকাদার সংস্থা যাঁদের পাঠিয়েছে তাঁদের কলকাতায় পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার পরে শিশু বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে। তার পরেই ঠিকাদার সংস্থার অন্যান্য ঠিকা শ্রমিকরা সকাল থেকে হাসপাতালের সমস্ত কাজ বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন। সদর হাসপাতালের সুপার হিমাগ্রি আড়ি বলেন, “বিধি মেনেই কাজ হয়েছে। তার পরেও কাজ বন্ধ করে আন্দোলন হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” যে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছিলেন তাঁরা জেলা নেতৃত্বের বিরক্তির কতা জানতে পেরে দুপুর ২টো নাগাদ ফের কাজে যোগ দেন। আন্দোলনকারী ঠিকা শ্রমিকদের সংগঠন মালদহ স্পেশাল হেলথ ওয়াকর্স ইউনিয়নের সহ সভাপতি তথা টাউন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বজিত সাহা বলেন, “ঠিকাদারের অধীনে মালদহ সদর হাসপাতালে প্রায় দেড়শ ঠিকা শ্রমিক ১০-১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। তাঁদের বাদ দিয়ে ঠিকাদার সংস্থা বাইরে থেকে ৪ জন শ্রমিককে শিশু বিভাগের কাজে পাঠিয়েছে। তার প্রতিবাদে হাসপাতালে কাজ বন্ধ করে সুপার, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।” জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক, সুপার আগামী দিনে হাসপাতালে কর্মরত ঠিকা শ্রমিকদের থেকেই নতুন বিভাগে কাজে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্বজিতবাবু জানান। হাসপাতালের ঠিকা শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে যতজন কাজ করছে কাউকেই সরানো হয়নি। স্বাস্থ্য দফতর আরও চারজন মহিলা সাফাই কর্মী চায়। আমি বাইরে থেকে চারজন সাফাই কর্মীকে দিয়েছি। তাতেই আমরাই নিযুক্ত ঠিকা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে নামেন।” |