মালদহ সদর হাসপাতালে শিশু বিভাগের জন্য সদ্য কেনা “অটোক্লেভ মেশিন’ পরীক্ষার সময়ে ফেটে ২ জন স্বাস্থ্যকর্মী জখম হয়েছেন। জখম ওই দুই কর্মীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের শব্দে মালদহ সদর হাসপাতাল কেঁপে ওঠে। বোমা ফেটেছে ভেবে হাসপাতালে রোগী ও রোগীর পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহু রুগী ও রুগীর পরিবারের লোকেরা ছুটোছুটি শুরু করে দেন। পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকে অটোক্লেভ মেশিন বিস্ফোরণের কথা বলে সকলকে আশ্বস্ত করা হয়।
মালদহ মেডিকাল কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “অটোক্লেভ যন্ত্রটি প্রেসার কুকারের মতো। যন্ত্রাংশে ত্রুটি থাকায় সম্ভবত বিস্ফোরণ হয়েছে। তদন্ত হলেই প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে।” হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রী আড়ি দাবি করেছেন, যন্ত্রাংশে ত্রুটি থাকার জন্যঅ এমন হয়েছে। সুপার বলেন, “আমাদের ওই টেকনিসিয়ান আগেও অটোক্লেভ চালিয়েছেন। তাঁর কোনও ভুল হয়নি। মেশিনেই ত্রুটি ছিল। সেটা পাল্টে দিতে বলা হয়েছে।” পাশাপাশি, কেন এমন মেশিন সরবরাহ হয়েছে তা নিয়েও তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন সুপার। মালদহ সদর হাসপাতালে অটোক্লেভ মেশিন বিস্ফোরণে উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক বলেন, “বড় ধরণের দুর্ঘর্টনা ঘটতে পারত। অল্পের জন্য হাসপাতালের বহু লোক বেঁচে গিয়েছেন। যে কোম্পানী ওই মেশিনটি মালদহে সরবরাহ করেছিল তাদের নতুন মেশিন দিতে বলা হয়েছে।” সদর হাসপাতালের সুপার জানান, মেশিনটি পরীক্ষা করার সময়ে জখম টেকনিশিয়ান নবীন মণ্ডল ও সাফাই কর্মী নমিতা মল্লিক বিপন্মুক্ত। মালদহ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে , ৯ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পযর্ন্ত মালদহ সদর হাসপাতালে ১২৮টি শিশু মারা গিয়েছে। মালদহে শিশু মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মালদহ সদর হাসপাতালে সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের পাশে ১২ আসনের সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট তৈরি করা হয়। শুক্রবার রাজ্যের নারী ,শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র নতুন ওই ইউনিটের উদ্বোধন করবেন। নতুন ইউনিটের জন্য ১২টি ওয়ার্মার, ৭ টি ফটোথেরাপি সহ কয়েকটি অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বসানো হয়েছে। সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটের জন্য পাশের ঘরে বসানো হয়েছিল অটেক্লেভ মেশিন। এদিন হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নবীন মন্ডল অটোক্লেভ মেশিনটি চালু করতে গিয়েছিলেন। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ইউনিটের সাফাই কর্মী নমিতা মল্লিক। অটোক্লেভের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হঠাৎ সেটি বিস্ফোরণ ঘটে যায়। ছিটকে পড়ে দুই স্বাস্থ্যকর্মী। প্রসূতি বিভাগ ও অন্যন্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা যান। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে গোটা হাসপাতাল কেঁপে ওঠে। প্রসূতি বিভাগে ভর্তি থাকা সেলিনা বিবি বলেন, “বিকট শব্দে প্রথমে ভেবেছিলাম হাসপাতালে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। ওয়ার্ড থেকে অনেক পালাতে শুরু করে। ভয়ে আমিও সদ্যোজাত শিশুকে বুকে জড়িয়ে ওয়ার্ড থেকে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যকর্মীরা বিপদ নেই বলার পরে শয্যায় ফিরেছি।” |