|
|
|
|
চা-শ্রমিকদের পিএফ বকেয়া ৬৩ কোটি টাকা |
বাগানে অভিযানের সিদ্ধান্ত |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
প্রায় এক দশক ধরে উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলির একাংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) টাকা দিতে গড়িমসি করায় বকেয়ার পরিমাণ ৬৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওই টাকা আদায় করতে বাগানগুলিতে হানা দিয়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অভিযানে নেমেছে জলপাইগুড়ির আঞ্চলিক পিএফ দফতর। ডুয়ার্সের ১০ টি চা বাগানের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি বাগানে অভিযান শুরু হবে। দীর্ঘদিন থেকে চা বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশের বিরুদ্ধে পিএফের টাকা জমা না-দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে অবসরের পরে কিংবা অন্য কারণে বাগান বন্ধ হয়ে গেলে গরিব চা শ্রমিকরা তাঁদের প্রাপ্য পিএফ খাতের কোনও টাকা পাচ্ছেন না।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে এমনকী কলকাতার বাসিন্দা কয়েকজনকে গ্রেফতার করেও বকেয়ার পরিমাণ কমেনি। উল্টে বাগান মালিকদের গ্রেফতার করা হলে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন হয়ে পড়ায় ‘পদ্ধতিগত সমস্যার’ সৃষ্টি হয়। ওই সমস্যা এড়াতে এ বার চা বাগানে হানা দিয়ে তৈরি পাতা বাজেয়াপ্ত করা, বাগানের ম্যানেজারের অফিস সিল করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি, অনান্য সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পিএফ কর্তৃপক্ষ।
পিএফ দফতরের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসে দফতরের ‘রিকভারি অফিসার’ বনমালী কুণ্ডুর নেতৃত্বে দু’দিন ডুয়ার্সের ৬টি বাগানে অভিযান চালান পিএফ কর্তৃপক্ষ। বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রায় ৩১ কোটি টাকার সম্পত্তি। ওই অভিযানের পরে ডুয়ার্স জুড়ে চা বাগানগুলিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে কিছু চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাঁদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে ইচ্ছুক বলে পিএফ দফতরকে জানিয়েছে। মালিকপক্ষের একাংশের সদিচ্ছা দেখে কিছুটা সময় দিয়ে ফের অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পিএফ কর্তৃপক্ষ।
পিএফ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর চা বাগান মালিকদের পিএফ খাতে বকেয়ার টাকা বেড়ে চলেছে। শুধু চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মাত্র ৮ মাসে চা শ্রমিকদের পিএফ খাতে বকেয়া টাকার পরিমাণ ৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রায় ৬০টি চা সংস্থা পিএফের টাকা নিয়মিত জমা দিচ্ছে না। কয়েকটি বাগানের ক্ষেত্রে ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পিএফের টাকা বকেয়া ফেলে রাখার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি পিএফ দফতরের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশ আঞ্চলিক দফতরে পৌঁছেছে। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, যে সমস্ত বাগান কর্তৃপক্ষ টাকা বকেয়া ফেলে রেখেছেন দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন না ঘটিয়ে তাঁদের বাগানে অভিযান চালাতে হবে। পিএফের টাকা বকেয়া রাখার অভিযোগে চা বাগান অথবা চা তৈরির কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দিলে দরিদ্র চা শ্রমিকদের রোজগার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কায় সরাসরি বাগান কর্তৃপক্ষকে নাগালে পেতে চাইছে পিএফ দফতর। ঠিক হয়েছে, যে বাগান কর্তৃপক্ষের বকেয়া রয়েছে সেখানে গিয়ে যত বেশি সম্ভব তৈরি চা পাতা বাজেয়াপ্ত করা হবে। ম্যানেজারের অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে। পিএফ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা চাইছি বাগান কর্তৃপক্ষ যাতে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেয়। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়ার থেকেও গরিব চা শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা আদায় করা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। দেখা গিয়েছে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলে কর্তৃপক্ষ বাগান পরিচালন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পিএফের টাকা মিটিয়ে দেন। সে জন্য নিয়মিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” |
|
|
|
|
|