|
|
|
|
আলিমুদ্দিনের নেতারা সবাই ভগবান নন, বললেন গৌতম দেব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
আলিমুদ্দিনের নেতারা সকলেই ভগবান নন! প্রকাশ্যেই এই অভিমত জানালেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার সিপিএমের দার্জিলিং জেলার সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে গৌতমবাবু বলেন, “আমাদের আরও পরিবর্তিত হতে হবে। ভুল-ত্রুটি ঠিক করতে হবে। কাদের মানুষ পছন্দ করছেন না, দেখতে হবে। জেলা থেকে রাজ্য সম্মেলন সর্বত্র খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে কি সকলে ভগবান? তা নয়।”
গৌতমবাবু নিজেও দলের অন্দরে ‘আলিমুদ্দিনের নেতা’ হিসাবেই দলে পরিচিত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু দুই নেতারই তিনি ‘ঘনিষ্ঠ’। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, সিপিএমের জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে এ ভাবে ‘আত্মসমালোচনা’ করে গৌতমবাবু কাদের বার্তা দিতে চেয়েছেন? দলের একাংশ মনে করছে, গৌতমবাবু বলতে চেয়েছেন, এতদিন যে ভাবে আলিমুদ্দিনের নেতারা চলেছেন, আগামী দিনে সে ভাবে চলা যাবে না। বরং জেলা নেতাদের মতামতকে যথাযথ ‘গুরুত্ব’ দিতে হবে। নেতাদের একাংশ আরও মনে করছেন, এ কথা বলে গৌতমবাবু বার্তা দিতে চেয়েছেন মূলত দলের বর্ধমান লবিকে। |
|
শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা
সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে বাম নেতারা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
এই লবির তিন নেতা পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন, কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় কোঙারও দলে ‘আলিমুদ্দিনের নেতা’ হিসাবেই পরিচিত। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের নীতির তাঁরা প্রবল সমর্থক ছিলেন। বিধানসভা ভোটে হারের পর বাম আমলের শিল্প ও জমি নীতি নিয়ে দলের বড় অংশের ক্ষোভ রয়েছে। পাহাড় ও জঙ্গলমহলের সমস্যা মোকাবিলা পথ নিয়েও নানা স্তরে ক্ষোভ রয়েছে। জেলা সম্মেলনগুলিতে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। সে কথা বুঝতে পেরেই গৌতমবাবু আগাম ‘আত্মসমালোচনা’ করেছেন।
সমাবেশে গৌতমবাবু জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেডে দলীয় সমাবেশে ১০ লক্ষ মানুষকে জড়ো করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে সিপিএম। তাঁর কথায়, “নতুন সরকারকে কয়েক মাস সময় তো দিতে হবে! তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে যা করতেন, সেই রেল অবরোধ-চাক্কা জ্যাম-রাস্তায় গোলমাল-অবরোধ আমরা করিনি। আরও কিছুটা সময় দিলাম। ব্রিগেডে দলীয় সমাবেশে ১০ লক্ষ লোকের জমায়েত থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা হবে। হনিমুন পিরিয়ড তত দিনে শেষ হয়ে যাবে।” গৌতমবাবুর দাবি, রাজারহাট থেকে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি, সব ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থ। |
|
শিলিগুড়ির সভামঞ্চে গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র। |
সভায় ছিলেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি, রাজ্য নেতা রবীন দেব, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, সাঙ্গোপাল লেপচা, আনন্দ পাঠক, জীবেশ সরকাররা। ইয়েচুরি কেন্দ্রের আর্থিক নীতি, দুর্নীতির কড়া নিন্দা করেন। দীনবন্ধু মঞ্চে ৩ দিনের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ৪০০ প্রতিনিধি। দলের জেলা সম্পাদক সাঙ্গপাল লেপচাকে বয়সের কারণে সরানো হবে কিনা, সে প্রশ্ন উঠলেও জেলার প্রবীণ নেতাদের অনেকেই তা উড়িয়ে দেন। দলীয় সূত্রের খবর, দার্জিলিং পাহাড়ে জাতিসত্তার আন্দোলন নিয়ে যখন নতুন চিন্তাভাবনা চলছে, তখন পাহাড়ের প্রবীণ নেতাকে সরাতে জেলা কমিটির অনেকেই রাজি নন। বরং তাঁকে রেখেই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে সিপিএমের অবস্থান কতটা ‘সদর্থক’, পাহাড়ে তা প্রচার করে সংগঠন চাঙ্গা করার পক্ষপাতী তাঁরা। |
|
|
|
|
|