আইনি কারবারের সুযোগ দিয়ে বা দেশি মদের দোকানের সংখ্যা বাড়িয়ে রাজ্য সরকার যে বিষ মদের সমস্যা মোকাবিলার কথা ভাবছে না, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় বৃহস্পতিবার তাঁর বিবৃতিতে মমতা বলেছেন, “এরা (চোলাই কারবারিরা) সরকারকে কোনও ধরনের কর দেয় না। আমি জানি, এই ব্যবসাকে আইনি করে দেওয়ার প্রস্তাব আমার কাছে আসবে। কিন্তু নৈতিক দিক থেকে তা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কেউ কেউ আমাদের রক্ষণশীলও বলছেন। ঠিকই, আইনি করে দিলে এই ব্যবসা থেকে লাভ হবে সরকারেরই। কিন্তু চরিত্র বিক্রি করে দেওয়া যাবে না!”
কিন্তু ঘটনা হল, চোলাই মদের ব্যবসাকে আইনি করে দেওয়ার কোনও প্রস্তাব কোনও মহল থেকেই আসেনি। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য হল, দাম মোটামুটি এক হওয়া সত্ত্বেও দেশি মদের দোকানের অপ্রতুলতার জন্য গরিব লোকেরা ‘বাধ্য হয়ে’ চোলাই খান। সেটা বন্ধ করতে সরকারের উচিত ‘ছুঁৎমার্গ’ ছেড়ে আরও দেশি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া। তাতে এক দিকে যেমন সরকারের আয় বাড়বে, তেমনই মগরাহাটের মতো মর্মান্তিক ঘটনা কমার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে যে আগের বামফ্রন্ট সরকারের মতো তাঁর সরকারেরও সায় নেই, সেটা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।
|
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কিন্তু এ দিন বেআইনি চোলাই মদ রুখতে সরকারি লাইসেন্সকৃত দেশি মদের দোকান ও জোগান বাড়ানোর প্রস্তাব ঘরোয়া ভাবে শাসক দলের কাছে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সর্বদল বৈঠকের ঘোষণা করার পরেই এই ব্যাপারে সর্বসম্মত ‘প্রস্তাব’ তৈরির জন্য শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে ‘ট্র্যাক-টু’ প্রক্রিয়া শুরু হয়। মদ খাওয়া বন্ধ করানোর মতো ‘অবাস্তব’ কোনও কর্মসূচি হাতে নিলে যে তা বলবৎ করা যাবে না, মুখ্যমন্ত্রী থেকে বিরোধী দলনেতা, সকলেই তা জানেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “কে কী খাবে, তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সরকার সেখানে নাক গলাতে পারে না।”
কিন্তু ক্ষমতায় থাকার সময় দেশি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে ‘রক্ষণশীল’ ছিলেন সূর্যকান্তবাবুরা। এখন তাঁরা অবস্থান বদলালেও মমতা অনড়। সূর্যবাবু অবশ্য পরে বলেন, তিনি বলেন, “ঘরোয়া ভাবে কী বলছি, সেটা বড় কথা নয়। সরকার সর্বদল বৈঠক ডাকছে। তারা কী চাইছে, তা তো তাদেরকেই আগে জানাতে হবে। সেখানে তারা কী প্রস্তাব দেয়, তা দেখেই আমরা যা বলার বলব।” |