কবরের লাশ তুলে মর্গে
বিষমদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ কেন, প্রশ্ন সব স্তরেই
য়না-তদন্ত করা হয়নি। বিষমদে মৃত্যুর পরে বুধবার রাতেই আত্মীয়েরা তড়িঘড়ি কবর দিয়ে দিয়েছিলেন দেহগুলি। বৃহস্পতিবার সরকারের এক ঘোষণা শুনে সেই লাশই মাটি খুঁড়ে তুলে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে গিয়েছেন বাড়ির লোকেরা।
কী সেই ঘোষণা?
রাজ্য সরকার বুধবার বিধানসভায় ঘোষণা করেছে, বিষমদে মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদও। আর ওই ঘোষণা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মগরাহাট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তেই কবর দেওয়া অনেক লাশ তুলে আনা হয়েছে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে। কারণ, ক্ষতিপূরণ পেতে গেলে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
জেলার এক পুলিশকর্তা জানান, বুধবারেও অনেক পরিবারই ময়না-তদন্ত না-করিয়ে প্রিয়জনের মৃতদেহ নিয়ে চলে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দেখা যায়, তাদের মধ্যেই অনেকে ময়না-তদন্তের জন্য আবার দেহ নিয়ে হাজির হয়েছেন। কবর থেকে তুলে ময়না-তদন্তের জন্য আনা হয়েছে, এই ধরনের প্রায় ৩০টি মৃতদেহ তাঁরা পেয়েছেন বলে জানান ওই পুলিশকর্তা।
ক্ষতিপূরণ নিয়ে ওই এলাকায় যখন জোর আলোচনা চলছে, তখন তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে অর্থ দফতরের অন্দরমহলে। দফতরের অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, কোষাগারের যখন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনো’র অবস্থা, তখন বেআইনি চোলাই খেয়ে যাঁদের মৃত্যু হল, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কেন?
অর্থ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবার-পিছু দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে রাজ্যের কোষাগার থেকে তিন থেকে চার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
বাঙুর হাসপাতালে অসুস্থদের পরিজন। বৃহস্পতিবার। ছবি:রাজীব বসু
অনেকের বক্তব্য, যে-কোনও মৃত্যুই দুঃখের। কিন্তু এই ধরনের ঘটনায় মৃত্যুর সঙ্গে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল বা স্টিফেন কোর্টের মতো অগ্নিকাণ্ডে অসহায় মৃত্যুর কোনও তুলনা হয় না। তাই ক্ষতিপূরণের নামে এই টাকা দেওয়ার নজির তৈরি করা ঠিক হচ্ছে না। কারণ, বিষমদে মৃত্যুর কারণে এক বার ওই টাকা দেওয়া হলে ভবিষ্যতেও এই ধরনের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে সরকার। চোলাই মদে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মহলে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে, তা হয়তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও গিয়েছে। মমতা বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বলেন, “যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের কেউ রিকশা চালাতেন, কেউ ঠেলা চালাতেন, কেউ বা হকারি করতেন। তাঁদের পরিবার তো কোনও অন্যায় করেনি।” মৃতদের অন্ত্যেষ্টির জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে পরিবার-পিছু ১০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মমতা।
বিষমদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ কেন? মহাকরণে এই প্রশ্নটিকে পাশ কাটিয়ে যান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি বলেন, “বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী যা বলার বলে দিয়েছেন, নতুন করে আমার বলার কিছু নেই।” অর্থমন্ত্রী মুখ না-খুললেও অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, ক্ষতিপূরণ দিতে যত টাকা খরচ হবে, সেই টাকা ওই এলাকার উন্নয়নে লাগানো যেত।
চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু, তার জন্য রাজ্যের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে রীতিমতো ‘হতাশ’ অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তাঁদের স্পষ্ট কথা, এই ধরনের একটি ঘটনায় সরকারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেই ঠিক হয়নি। তিন কোটি টাকাতেও এমন অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ করে ফেলা যায়, যা হয়তো দীর্ঘদিন ধরে সামান্য কিছু অর্থের অভাবে থমকে রয়েছে। বরং এই ঘটনার পরে রাজ্য সরকারের ভাবা উচিত ছিল, কী ভাবে গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যক দেশি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া যায়। তাঁদের ব্যাখ্যা, এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়ত, বিষমদ খেয়ে মৃত্যুও ঠেকানো যেত। রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এক শ্রেণির মানুষের বক্তব্য, চোলাই মদের কারবারিরা রাজ্যকে এক পয়সাও কর দেয় না। উল্টে গ্রামবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে তারা দিনের পর দিন বিষাক্ত চোলাই খাইয়ে চলেছে হাজার হাজার মানুষকে। যাদের দোষে এতগুলো মানুষের মৃত্যু হল, সাধারণ মানুষের দেওয়া করের টাকা থেকে তাদের দায় কেন মেটাবে রাজ্য সরকার?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.