পেশা পাল্টে বিষ ব্যবসায় খোঁড়া বাদশা-বক্করেরা
ডাকাত এখন চোলাই-ভাটির মালিক। দাগি ছিনতাইবাজ ছিনতাই ছেড়ে চোলাইয়ের ঠেক চালায়। চোর হয়েছে চোলাইয়ের ‘ক্যারিয়ার।’
এ ভাবেই বদলে গিয়েছে পেশা।
আর এই পরিবর্তনে সুবিধা হল, বিনা পরিশ্রমে রোজগার করা যায়। একশো-দু’শো বা এক-দু’হাজার নয়। লক্ষ লক্ষ টাকা! প্রশাসন দেখে না?
অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ চোখ বুজে থাকে। কারণ চোলাই বিক্রি যত বাড়ে, পুলিশের ‘মাসোহারা’ তত বাড়ে বলে বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য শোনা গিয়েছে। অন্য দিকে চোলাই কারবারে ‘প্রশ্রয়’ দেওয়ার জন্য আঙুল উঠেছে আবগারি বিভাগের দিকেও। এলাকাবাসীর অনেকের আক্ষেপ, “ন’মাসে-ছ’মাসে লোক দেখানো ভাটি ভাঙা হয় বটে। যদিও আগাম খবর পেয়ে যাওয়ায় ভাটি-মালিকেরা তখন গা ঢাকা দেয়। ক’দিন একটু চুপচাপ থাকার পরে আবার যে-কে সে-ই!”
পেশা বদলে এসে কারা এখন ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছে গোচারণ-মগরাহাটের চোলাই-সাম্রাজ্যে?
পুলিশ-সূত্রের খবর: মগরাহাটে শ’পাঁচেক চোলাইয়ের ভাটি ও ঠেকের মালিক হল খোঁড়া বাদশা ও তার শাগরেদ বক্কর। আবার গোচারণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কালো সিরাজ, নূর আলম, খোকন সর্দার, ফকির আহমেদ, হারুন ফকির, নজরুলেরা। এরা কারা?
গোচরণে পরিত্যক্ত চোলাইয়ের ভাটি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিষ-মদ কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি শেষ হতেই সিপিএম নেতা তথা ক্যানিং (পূর্ব) কেন্দ্রের বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা বলেছিলেন, “সমস্ত ঘটনা সংগ্রামপুরের পুলিশ-ফাঁড়ির নাকের ডগায় ঘটেছে।” এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরের ওই চোলাই মদের দোকানের মালিক হল বাদশা খোকন।
এবং তার ‘সিপিএম-ঘনিষ্ঠতা’র ইঙ্গিত দিয়ে রেজ্জাকের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এখনও ওর (বাদশা খোকন) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানাইনি। শুনলে আঁতকে উঠবেন! দলীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে দেখুন, কে এই লোক!”
বাদশা খোকনকে পুলিশ এখন খুঁজছে। পাশাপাশি বিষ মদ-কাণ্ডের তদন্তভার রাজ্য গোয়েন্দা -পুলিশ (সিআইডি)-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব চলতে থাকলে পুলিশও ঘাঁটাঘাঁটি করতে ভয় পায়। বিশেষ করে সেটা যদি আবার পূর্বতন সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়।”
পুলিশের খাতায় বাদশা খোকন-সহ ওই চোলাই মদের কারবারিরা দাগি দুষ্কৃতী। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, এরা সব সময়েই শাসকদলের সঙ্গে থেকেছে। বাম জমানায় তারা যেমন সিপিএমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করেছে, এখন একই ভাবে তারা তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে বলে বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, ওদেরই অনেকে এখন তুলনায় ‘নিরাপদ’ পেশা হিসেবে চোলাইয়ের ভাটি বা ঠেক খুলেছে। কেউ বা হয়েছে ‘ক্যারিয়ার।’ ঠিক যেমন ইট-বালি-সিমেন্টের কারবারের নামে ‘সিন্ডিকেট’ খুলে মহানগরেই দুষ্কৃতী-রাজ চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
চোলাই ব্যবসায় লাভ কত?
চোলাইয়ের কয়েক জন পোড় খাওয়া কারবারির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভাটি-মালিক অন্তত ১০০% লাভ রেখে ‘ঠেকে’ মাল পাঠায়। আর ঠেক-মালিক ৩০-৪০ শতাংশ লাভে তা খদ্দেরকে বেচে। ‘ক্যারিয়ারের’ পিছনে ঠেক-মালিকের খরচ পড়ে লিটারপিছু ১০-১৫ টাকা।
প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কী ভাবে ভাটি বা ঠেক চালায় খোঁড়া বাদশা-কালো সিরাজেরা?
মগরাহাটের চোলাই-ভাটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কয়েক জন যুবকের অভিযোগ, মাস গেলে ভাটি বা ঠেকপিছু পুলিশকে দিতে হয় পাঁচশো টাকা। আলিপুরের আবগারি বিভাগেও এ ভাবে ভাটি বা ঠেকপিছু মাসে ৫০০-১০০০ টাকা দিতে হয় বলে জানিয়েছে তারা। যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ বা আবগারির কর্তৃপক্ষ কেউই এ অভিযোগ মানতে চাননি। তবে আবগারির এক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে বিভাগের ডায়মন্ড হারবার জোনের এক সহকারী কমিশনার চোলাইয়ের ব্যবসা বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন। বেশ ক’বার তিনি অভিযানও চালান। তিনি চলে যাওয়ার পরে তেমন কোনও চেষ্টা চোখে পড়েনি বলে আক্ষেপ করেছেন এলাকার অনেক বাসিন্দাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.