|
|
|
|
|
পুলিশের হম্বিতম্বি সত্ত্বেও
ছাত্রের পাশেই অধ্যক্ষ |
|
কথায় কথায় সংঘর্ষ। পুলিশকে ডাক। ঘেরাও বা ধর্মঘট। কিন্তু কলেজ বলতে
এই
ছবিটাই
চিরকালীন নয়। গুরু-শিষ্য সম্পর্কের উজ্জ্বল ইতিহাসের কথা শোনাচ্ছেন
অনল আবেদিন। |
স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশ তখন উত্তাল। ১৯৩৭ সাল। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের তখন অধ্যক্ষ জ্যোতিষচন্দ্র মিত্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কলেজের ছাত্র সংসদ ওই বছরই প্রথম নিখিলবঙ্গ ছাত্র ফেডারেশনের দখলে যায়। ছাত্র সংসদের প্রথম সম্পাদক হন বিজয়কুমার গুপ্ত। বিজয়বাবুর বন্ধু ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী শৈলেন অধিকারী। তিনি তখন ব্রিটিশ সরকারের চোখে ‘অপরাধী’। জ্যোতিষচন্দ্র এক দিন বিজয়বাবুকে গিয়ে বলেন, “পুলিশ বলে গিয়েছে, স্বদেশী করার ‘অপরাধ’-এ শৈলেন অধিকারীকে আর কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না।” সতীর্থের সংকটমোচন করতে পরদিনই শৈলেনবাবুকে নিয়ে বিজয়বাবু ছুটলেন উপার্চাযের কাছে। উপাচার্য লিখে দিলেন, শৈলেন অধিকারী কলেজে যাবে ও ক্লাস করবে। শৈলেনবাবু যথারীতি ক্লাস করতে শুরু করেন। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ তাতে দমবে কেন? কলেজে পুলিশ হাজির। বিজয়বাবুর পুত্র বিষাণ গুপ্ত বলেন, “পুলিশ অফিসার হম্বিতম্বি শুরু করতে অধ্যক্ষ তখন তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমি আপনার নয়, উপাচার্যের নির্দেশই মানব।” শিক্ষক যে অনায়াসে মানুষের মনে নানা ভেদাভেদও ভুলিয়ে দিতে পারেন, তারও প্রমাণ রয়েছে আর একটি ঘটনায়। গত শতাব্দীর ষাটের দশকের কথা। বহরমপুর গার্লস কলেজে তখন কিংবদন্তী অধ্যক্ষা প্রীতি গুপ্তা। তাঁর সহ-শিক্ষক ছিলেন সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সমন্বয়ের অন্যতম পথিকৃত রেজাউল করিম। বহরমপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল হাসনাত হলেন প্রয়াত রেজাউল করিম সাহেবের দাদার ছেলে। আবুল হাসনাত জানান, “বহরমপুর গার্লস কলেজের হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা শিবরাত্রির উপোস করেছে। প্রথা মেনে পরদিন এক জন ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা-সহ খাইয়ে তবেই ছাত্রীরা উপোস ভাঙতে পারবে। কিন্তু তাদের বাড়িতে তো বহরমপুরের বাইরে। ফলে ব্রাক্ষণের খোঁজে ছাত্রীরা অধ্যক্ষা প্রীতি গুপ্তার শরণাপন্ন হয়। প্রীতি গুপ্তা তখন ছাত্রীদের বলেন, ‘আমি তো এক জন ব্রাহ্মণকেই চিনি। তিনি রেজাউল করিম সাহেব। তাঁর মতো ব্রাহ্মণ আর কই!’ জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছায়া গুপ্ত ওই গার্লস কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী। তিনি জানান, “রেজাউল করিম সাহেবকে মিষ্টি-জল খাইয়ে হস্টেলের ছাত্রীরা সে বার নিজেদের উপবাস ভাঙে।” |
(চলবে) |
|
|
|
|
|