নতুন জোটের ধাক্কায় ধরাশায়ী ডেম্পো
ডেম্পো ১ (ক্লিফোর্ড)
ইস্টবেঙ্গল ২ (পেন, টোলগে)
বার্সেলোনার ঘরের মাঠের জার্সির রং লাল-নীল। ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ।
পাঁচ দিন আগের মাদ্রিদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের যুবভারতীর কিন্তু কোনও অমিল নেই।
আই লিগের ‘এল ক্লাসিকো’ নাগাড়ে জেতার পর ট্রেভর মর্গ্যানও কি ভারতীয় ফুটবলের পেপ গুয়ার্দিওয়ালা হলেন?
তারকা হিসাবে লিওনেল মেসিদের হাজার মাইলের মধ্যে নেই টোলগে ওজোবে। পেন ওরজির সঙ্গে ইনিয়েস্তার তুলনা করাটাও বাড়াবাড়ি।
মিল-অমিলের বা তুলনার তর্ক-বিতর্ক সরিয়ে রেখেও নব্বই মিনিটের পর কিন্তু মনে হচ্ছে স্প্যানিশ লিগের ফটো কপিই হয়তো দেখে ফেললেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার পঁয়তাল্লিশ দর্শক।
বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল শীর্ষে থাকা রিয়াল। এ দিনও শুরুতে সে রকমই এগিয়ে যায় ডেম্পো। ক্লিফোর্ড মিরান্ডার বুদ্ধিদীপ্ত গোলে। মাদ্রিদ শেষ রক্ষা করতে পারেনি। পারল না আই লিগের শীর্ষে থাকা গোয়ার ক্লাবও। গত শনিবার মেসি-জাভি-ফাব্রিগাসদের দস্যিপনায় মাথা নুইয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন মোরিনহো। যাঁকে ফুটবল বিশ্ব জানে ‘স্পেশ্যাল ওয়ান’ হিসাবে। এ দিন পেন-মেহতাব-টোলগেদের দৌরাত্ম্যেই হেরে মাঠ ছাড়তে হল আর্মান্দো কোলাসোকে। ডেম্পোকে এ দেশের যাবতীয় ট্রফি এক, দুই, তিন, চার বার জেতানোর কারিগর তো তিনিই। আর কে এ দেশে আছেন তাঁর ধারে-কাছে! তিনিও তো ভারতীয় ফুটবলের ‘স্পেশ্যাল ওয়ান’!
যুবভারতীতে টোলগে।
এ দিনের জয়ে ইস্টবেঙ্গল শীর্ষে যায়নি। এখনও তাঁরা তিন। পয়েন্টের বিচারে মোহনবাগানের সঙ্গে এক বিন্দুতে। নয় ম্যাচে দুই প্রধানেরই পয়েন্ট ১৯। এ সবই ঠিক। কিন্তু যে ভাবে এ রকম হাইভোল্টেজ ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল পকেটে পুরে নিল তা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। ডেম্পো নামক টুর্নামেন্টের কঠিনতম হার্ডল পেরোনোর পর মর্গ্যান ব্রিগেড কি তা হলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সোনালি রেখা দেখতে শুরু করল? ব্রিটিশ রক্ত আছে বলে কোনও যুদ্ধ জেতার পরই উচ্ছ্বসিত হন না ইস্টবেঙ্গল কোচ। এ দিনও হননি। “৯ ম্যাচে গতবার ছিল ২৩ পয়েন্ট। এ বার ১৯। চ্যাম্পিয়ন তো অনেক দূর। বলতে পারেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাস্তা আমার মতো সব দলের কাছেই খুলে গেল,” বলে দেন অতি সতর্ক মর্গ্যান। সদ্য সাফ কাপ জেতা জাতীয় কোচ স্যাভিও মেদেইরা স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোনোর সময় কিন্তু আশাবাদী। বললেন, “যে ভাবে ইস্টবেঙ্গল এগোচ্ছে বা জিতছে, তাতে ওরা চ্যাম্পিয়ন হতেই পারে।”
জাতীয় দলের সাত ফুটবলার টিমে। পাঁচ-ছয় বছর একসঙ্গে খেলার একাত্মতাটাই রসদ। দেশের সবথেকে ব্যালান্সড দল বলা হচ্ছে তাদের। সেই ডেম্পোকে কোন অঙ্কে রিংয়ের বাইরে পাঠিয়ে দিলেন মর্গ্যান? চুম্বকে উঠে আসছে চারটি কারণ। এক) ডেম্পোর ইঞ্জিন ক্লাইম্যাক্স লরেন্স মাঠে না থাকায় মাঝমাঠের দখল নিতে সুবিধা হয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের। দুই) মণিপুরের অনূর্ধ্ব উনিশ অকুতোভয় স্ট্রাইকার লেনকে নিয়ে মর্গ্যানের ফাটকা পুরোপুরি কাজে লেগে গেল। তিন) মেহতাব হোসেন টিমে ফেরায় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে চাপ কমে গিয়েছিল। দুই সাইডব্যাক কার্যকর ভুমিকাও নিতে পেরেছিলেন। তাঁদের ক্রসগুলো সাপের ফণার মতো ছোবল মারছিল ডেম্পো বক্সে। চার) আই লিগের সর্বেচ্চ গোলদাতা র্যান্টি মার্টিন্সকে অকেজো করে দিয়েছিলেন ওপারা। এর বাইরেও আর একটা কারণ আছে-- ইস্টবেঙ্গলের পিভট হয়ে পেন ওরজির মাঠ জুড়ে মশালের আলো ছড়িয়ে দেওয়া। যা দেখে মুগ্ধ চুনী গোস্বামী বলছিলেন, “আজ পেনকে দেখে আমার নুর মহম্মদের কথা মনে পড়ছিল। একই রকম খেলার স্টাইল। মাঠ জুড়ে খেলে। বাইরে, ভিতরে অপারেট করতে পারে। পায়ে ভাল ড্রিবল আছে।”
ধুরন্ধর মর্গ্যান ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেওয়ার পর পেনকে ব্যবহার করতেন ফ্রি প্লেয়ার হিসাবে। কড়া ট্যাকলার কাম পাসার মেহতাবকে দুই স্টপারের সামনে রেখে পেনকে পাঠাতেন টোলগে-রবিনদের সঙ্গে। পেন্ডুলামের মতো দুলতেন তিনি। মেহতাব না থাকায় সেটা এতদিন হচ্ছিল না। ড্রেসিংরুমের রসায়নও হয়তো ছায়া ফেলেছিল পেনের খেলায়। ময়দানে গুঞ্জন অ্যালান গাও আসার পর ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ এই ফর্মুলায় পেন-টোলগে নতুন জোট বেঁধেছেন। তার সুফল পাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। এ দিনের দুটো গোলের পিছনেও সেই নতুন জোট। পেন যে গোলটা করলেন তার শেষ পাস কার? টোলগের! টোলগে যে জয়ের গোলটা করলেন তার পাসটা কে দিয়েছিলেন? পেন! মঝেমধ্যে লেনের সঙ্গে ওদের ট্রায়োও কাজে লাগল। সদ্য গোঁফ গজানো লেন যদি গোল নষ্ট না করতেন তা হলে ম্যাচটা তো ৪-১ হয়।
ক্লাইম্যাক্স না থাকায় ডেম্পোর সমস্যা হচ্ছিল। ক্লিফোর্ড মিরান্ডা, অ্যান্টনি পেরিরারা সেই জায়গাটা পুরণ করতে পারেননি। র্যান্টি নির্বিষ হয়ে যাওয়ায় আর্মান্দোর কোনও অঙ্কই কাজে লাগেনি। টিম বাসে ওঠার সময় চার বার আই লিগ জেতা কোচ বলে গেলেন, “আমরা এখনও শীর্ষে। লিগের বহু মাচ কিন্তু বাকি।” পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মর্গ্যান কি শুনলেন কথাটা? বুঝতে পারলাম না। কারণ কয়েক হাজার লাল-হলুদ সমর্থক যে তখন ‘ভারতের গুয়ার্দিওয়ালা’-কে ঘিরে উৎসবে মেতেছেন!

ইস্টবেঙ্গল: সন্দীপ, নওবা, ওপারা, গুরবিন্দার, সৌমিক(রবার্ট) , ভাসুম, পেন, মেহতাব, খাবরা, লেন (বলজিৎ), টোলগে (সঞ্জু)।

জয়ের নাচ। বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে।

এখন আই লিগে

খেলা জয় ড্র হার গোল পয়েন্ট
ডেম্পো ২৫-৬ ২১
চার্চিল ১১-৭ ২০
ইস্টবেঙ্গল ২১-৭ ১৯
মোহনবাগান ২০-১৩ ১৯
প্রয়াগ ইউনাইটেড ১৭-৭ ১৭

ছবি: উৎপল সরকার




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.