পানের মাত্রা একটু বেশি হওয়া বেসামাল পুলিশ অফিসার পরমব্রতকে ধরাধরি করে গাড়িতে তুলছেন গার্লফ্রেন্ড রাইমা। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন রাইমার সহকর্মী। যাঁর সঙ্গে রাইমার আলগা ঘনিষ্ঠতার জেরে প্রেমিক পরম ইদানীং তুমল অভিমানী। যাঁর পরিণামে ডাকসাইটে আইপিএস প্রসেনজিতের বাড়িতে বাড়াবাড়ি রকমের মদ্যপান। পরমকে সামলেসুমলে তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে গাড়ি অবধি ছেড়ে দিতে এসেছেন প্রসেনজিৎ। গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে রাইমাকে লক্ষ্য করে প্রসেনজিতের মোক্ষম ডায়লগ, ‘‘ভাত-ডাল আর বিরিয়ানির মধ্যে তফাতটা জানো? প্রথমটা নেসেসিটি, পরেরটা লাক্সারি।”
স্তম্ভিত নায়িকা থমকান। বুঝতে সেকেন্ডখানেক সময় লাগে জীবনের লম্বা ইনিংসে ক্ষণিকের ‘ফ্লার্টিং’ শেষমেষ বিলাসিতাই। সেটা দিয়ে রোজকার জীবন চলে না। চলে নিরুচ্চার প্রেম দিয়ে। সেটা ভাত-ডালের মতো, রোজকার প্রয়োজন।
যাঁরা মাসকয়েক আগে মুক্তি পাওয়া ‘বাইশে শ্রাবণ’ দেখেছেন, তাঁরা অনায়াসে মনে করতে পারবেন দৃশ্যটা। জানি না মনোজ তিওয়ারি ছবিটা দেখেছেন কি না। তবে দেখুন বা না দেখুন, বৃহস্পতিবারের ইডেনে ৪৫৬ মিনিট ক্রিজে থেকে মনোজের রোমহর্ষক ১৬৩ নট আউট দেখিয়ে দিয়ে গেল, ‘ভাত ডাল’ আর ‘বিরিয়ানি’-র তফাত আত্মস্থ করে ফেলেছে তাঁর ব্যাট। সকালে ঘণ্টাখানেক যখন জুড়িদার হিসেবে সঙ্গে পেলেন নিটোল ছন্দে থাকা সৌরভকে, তখন সহজাত ব্যাটিং। নিজের মতো। সৌরভ-লক্ষ্মী-শুভময় ফিরতে নিমেষে বুঝলেন, এই যাহ, আর তো কেউ নেই যে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। অবনমনের অতল থেকে টেনে তুলবে বাংলাকে। বুঝলেন, যা করার তাঁকেই করতে হবে এবং টেলএন্ডারদের যথাসাধ্য আড়াল করেই করতে হবে। শেষ ঘণ্টাদেড়েক সমস্ত দেখনদারি ছেঁটে ফেলে মনোজ ফিরলেন ‘ভাত-ডাল’-এর ক্রিকেটে। ধৈর্যে, স্থৈর্যে, কান্ডারির কাঙ্খিত ভূমিকায়। |
দলগত স্বার্থের নিরিখে ঠিক যেটা তখন দরকার ছিল। শেষ ঘণ্টায় দিল্লি যখন ঝাঁপাচ্ছে বাংলাকে মুড়িয়ে দিতে, নিয়ম করে ওভারে চার বা পাঁচ নম্বর বলে সিঙ্গলস নিয়ে গেলেন। হাতে ব্যাট নয়, যেন অবনমন বাঁচানোর অক্সিজেন সিলিন্ডার। অবিশ্বাস্য একক সংগ্রাম এখনও জারি, প্রথম ইনিংসে লিড নিতে এখনও দরকার ৩৫। যে রানটা তুলে দেওয়াটাই আপাতত বাংলার পাখির চোখ।
পরপর চারটে সেঞ্চুরি হয়ে গেল এ দিনের নিয়ে, এটা নিছকই শুকনো তথ্য। মনোজ তিওয়ারির ইডেনের ইনিংসের তাৎপর্য অন্য জায়গায়। প্রতিভা থাকলেই তো শুধু হয় না, তাতে শাণ দিতে গেলে মানসিক পরিণতিও লাগে। আর দুটোর মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে মোটামুটি উতরে যাওয়া যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কল্কে পাওয়া দুঃসাধ্য। বিরাট, রোহিত, রায়নাদের পাশাপাশি পাকাপাকি জায়গা মনোজ করতে পারবেন কি না, সেটা সময় বলবে। তবে জাতীয় দলে নিয়মিত খেলতে যে স্থিতধী মস্তিষ্ক আবশ্যিক, সেটা মনোজের ক্রিকেটে যে পাকাপাকি ঢুকে পড়েছে ,সেটার স্বাক্ষর ক্যরিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সেঞ্চুরিতে ছিল। থাকল এদিনও। সেঞ্চুরি করে মাথা ঝাঁকানো নেই, হেলমেট খোলা নেই। নীরবে ফের নতুন করে স্টান্স নেওয়া। টিম না বাঁচলে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি মিথ্যে, এই সংকল্প ধরা থাকল সেঞ্চুরি পরবর্তী ৬৩ রানে।
আজ পারবেন মনোজ? পারবেন বাকি ৩৫ তুলে দিতে? আজ ইডেনে প্রাথমিক লক্ষ্য অবশ্যই থাকবে যাতে দশ বা এগারো নম্বর ব্যাটকে প্রথম আধ ঘণ্টা যত সম্ভব কম বল খেলতে হয়। আজকের পর তো আর মনোজ তিওয়ারিকে আর নতুন করে বলে দিতে হবে না, ‘যদি তো তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা লড়তে হয়!’
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দিল্লি ৩৯২
বাংলা ৩৫৮-৮ (মনোজ ১৬৩ ব্যাটিং, সৌরভ ৫০, শুভময় ৩৬, সঙ্গওয়ান ৪-৯৫)। |