ক্রিজে তাঁর সাড়ে সাত ঘণ্টার মরণপণ লড়াই সত্ত্বেও এখনও বিপন্মুক্ত নয় বাংলা। টেলএন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে আজ শুক্রবার বাংলাকে বাঁচাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। সারাদিন ব্যাট করেও অক্লান্ত। পাখির চোখ বলতে আরও ৩৫ রান। বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বললেন মনোজ তিওয়ারি।
প্র: দেখে মনে হচ্ছিল জীবন বাজি রেখে ব্যাট করছেন। টেলএন্ডারকে বাঁচাতে ওভারে পঞ্চম বা ষষ্ঠ বল ছাড়া রান নিচ্ছিলেন না...অন্তত কুড়িটা সিঙ্গলস চা-বিরতির পরে নিলেন না?
মনোজ: খুব কঠিন কাজটা। কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম কোন বলটায় রান নেব বা নেব না। আসলে আমাদের ব্যাটিংয়ের টেলটা একটু লম্বা। তা-ও বলব, ইরেশ খুব ভাল খেলেছে। অনেকক্ষণ ক্রিজে ছিল। তার পর বীরপ্রতাপ এসেছে। আমি যথাসম্ভব ওকে আড়াল করা চেষ্টা করেছি। সিনিয়র হিসেবে সেটাই আমার কাজ।
প্র: সকালে ওইরকম দুর্দান্ত শুরু করার পরে সৌরভ আউট হয়ে যেতে হঠাৎ চাপ হয়ে যায়নি?
মনোজ: দাদি দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিল। এক কথায় অসাধারণ। হঠাৎ আউট হয়ে গেল। এ রকম ক্রিকেটে হয়েই থাকে। বহুবার বহু ইনিংসে বাংলাকে বাঁচিয়েছে। দাদি আউট হওয়ার পরে আরও ব্যাটসম্যান ছিল। আমি জানতাম, আমাকে থাকতেই হবে। কোনও রকম ভুল চলবে না। দু’একটা উইকেট আমরা ওদের দিয়েছি ঠিক। তবে আমি বলব ‘সফ্ট ডিসমিশাল’। কোনও ব্যাটসম্যান সঙ্গে থাকলে আজই আমরা লিডটা পেয়ে যেতাম। |
প্র: চেন্নাইয়ে সেঞ্চুরির পরে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে যাতে ক্র্যাম্প না হয়, তাই আরও বেশি জল খাবেন। ইডেনে তো সারা দিন ব্যাট করার পরেও একবারও আপনাকে ক্লান্ত মনে হল না?
মনোজ: চেন্নাইয়ের আবহাওয়া এক রকম ছিল। কলকাতার আর এক রকম। এখানে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করতে আমার অসুবিধে হয়নি।
প্র: সেঞ্চুরি করার পরে হেলমেট খুলে ব্যাট তোলে সব ব্যাটসম্যানই। আপনি শুধু ব্যাট তুললেন, তা-ও খুব দায়সারা ভাবে?
মনোজ (হাসি): হ্যাঁ, সেঞ্চুরি করার পর আমিও হেলমেট খুলি। হেলমেটে চুমু খাই। সেটাই সাধারণত করে থাকি। আজ করিনি, কারণ সেঞ্চুরি করেই আমার কাজ শেষ হয়ে যায়নি। আমার কাজ হল বাংলাকে বাঁচানো। কাল যদি আমরা লিড পাই, যদি আমি বাংলাকে বাঁচাতে পারি, তবেই হেলমেট খুলব।
প্র: লিড পাবেন?
মনোজ: কেন নয়? আমি আত্মবিশ্বাসী। উইকেটটা কঠিন নয়। দ্বিতীয় নতুন বলটারও অনেক ওভার হয়ে গিয়েছে। আমাদের দু’জন টেলএন্ডার আছে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে ওদের ক্রিজে থাকতে হবে। আরও ৩৫ রান করতে হলে মাথা ঠাণ্ডা রাখা খুব দরকার।
প্র: এই মরসুমে শেষ চারটে ইনিংসে আপনার রান ১৩২, ২৬৭, চেন্নাইয়ে ১০৪ নট আউট, এখানে ১৬৩ নট আউট। জীবনের সেরা ফর্মে আছেন?
মনোজ: মরসুম শুরুর আগে আমি টার্গেট রেখেছিলাম, এই মরসুমে হাজার রান করবই। সেই লক্ষ্য রেখেই এগিয়েছি। চেন্নাই ম্যাচের আগে জানতাম, ওটাই আমার শেষ সুযোগ। রান না করলে বিরাট, রোহিত, সুরেশদের সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে আমি থাকতে পারব না। আর শহরে ফিরে বলেছিলাম, অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজে যাই বা না যাই, বাংলাকে বাঁচানোটাই লক্ষ্য। সেই চেষ্টাটাই করেছি।
প্র: এর আগে ২০০৭-এর রঞ্জি ফাইনালেও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ওয়াংখেড়েতে ৯৩ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু বাংলাকে জেতাতে পারেননি। সেই ইনিংসের পাশে এই ইনিংস কোথায় থাকবে?
মনোজ: সেই ইনিংসটা ভাল ছিল, কিন্তু আমরা ট্রফি জিততে পারিনি। এই ইনিংসটা এখনও চলছে, কাজ শেষ হয়নি। কাল বাংলাকে বাঁচাতে পারলে হয়তো এই ইনিংসটাকে এগিয়ে রাখব।
প্র: চেন্নাইয়ের ইনিংসটার আগের রাতে ইন্টারনেট খুলে ইউ টিউবে মোটিভেশনাল ভিডিও দেখেছিলেন। আজ রাতে সে রকম কিছু দেখবেন নাকি?
মনোজ: না না, আজ আর ভিডিও দেখব না। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। আজ ভিডিও নয়, আমার একটু বডি মাসাজ দরকার। |