মাটির উপরে মেট্রোর লাইন তৈরিতে নারাজ বিমানবন্দর |
বিমানবন্দরে নামার সময়ে পাইলটের নাকের ডগা দিয়ে যদি মেট্রো ছুটে যায়, তা হলে তাঁর মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই মাটির উপরে স্তম্ভ গড়ে মেট্রোর লাইন তৈরির অনুমতি দিতে চান না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বুধবার কলকাতায় এসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে এমন কথাই জানিয়ে গেলেন চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবাল। তাঁর কথায়, “বিমানবন্দর এলাকায় মেট্রোকে চলতে হবে মাটির তলা দিয়েই।” মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি বি মূর্তি পাল্টা জানিয়েছেন, মাটির তলা দিয়ে মেট্রো নিয়ে গেলে খরচ ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে। সেই টাকা আপাতত মেট্রো রেলের নেই। অতিরিক্ত এই টাকা রেল বোর্ডের কাছ থেকে চাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মূর্তি। ফলে, কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন ও আধুনিক টার্মিনাল ২০১২ সালের মে-জুন মাসের মধ্যে চালু হয়ে গেলেও মেট্রো রেল পরিষেবা এখনই চালু হচ্ছে না।
দমদমের নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর ঘুরে মেট্রোর যাওয়ার কথা ছিল বারাসত পর্যন্ত। ১৮ কিলোমিটার লম্বা এই রুটের জন্য প্রাথমিক ভাবে খরচ ধরা হয়েছিল ২৯১৮ কোটি টাকা। বেদপ্রকাশ বলেন, “মেট্রো তো শহর থেকে বিমানবন্দরে এসে শেষ হয়ে যাবে না। ওঁদের (মেট্রো কর্তৃপক্ষের) পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমানবন্দরের এক দিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বেরোবে মেট্রো। একেই কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে ভিআইপি রোড থেকে উড়ালপুল এসে মিশছে। মাটির উপরে মেট্রোর লাইন পাতার জন্য আরও একটি জায়গা দেওয়া মুশকিল। তা ছাড়া, কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যাও রয়েছে।”
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, রানওয়েতে নামার পথ ও তার আশপাশের আকাশ জুড়ে একটি সুড়ঙ্গ কল্পনা করে নেওয়া হয়। বিমান পরিবহণের ভাষায় যাকে বলে ‘ফানেল’। কাল্পনিক সেই সুড়ঙ্গের সামনে কোনও ধরনের বাধা রাখা যায় না। বিমানবন্দরের এক অফিসার বলেন, “কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে মেট্রো লাইন যদি সেতুর উপর দিয়ে যায়, তা হলে মধ্যমগ্রামের দিক থেকে আসা বিমানগুলির নামার সময়ে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।” নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি দিল্লিতে চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হয় মেট্রো কর্তৃপক্ষের। এখন দমদম স্টেশন থেকে সাধারণ ইএমইউ ট্রেনের একটি লাইন রয়েছে বিমানবন্দর পর্যন্ত। সেই লাইনটি যশোহর রোড থেকে সেতুর উপরে উঠে বিমানবন্দরে গিয়ে শেষ হয়েছে। সারা দিনে হাতে গোনা তিন-চারটি ট্রেন চলে সেখানে। যাত্রীর সংখ্যাও খুব কম। পি বি মূর্তি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, ওই ট্রেন বন্ধ করে দিয়ে লাইনটি মেট্রোর জন্য ব্যবহার হবে। পাশে আরও একটি লাইন তৈরি করা হবে।” কিন্তু বেঁকে বসেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বেদপ্রকাশ বলেন, “আমরা জানিয়ে দিয়েছি, মেট্রোকে মাটির তলা দিয়েই আনতে হবে। বিমানবন্দরের মেট্রো স্টেশন থেকে নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং পর্যন্ত চলমান সিঁড়ি বা চলমান পথ আমরাই তৈরি করে দেব।” |