নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
মাঠে ধান কাটার কাজ চলছে, এই ‘যুক্তি’তে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ রেখেছিল কাটোয়া মহকুমার অধিকাংশ পঞ্চায়েত। কাজ চালু করার জন্য শেষমেশ বৈঠক করে পঞ্চায়েত কর্তাদের নির্দেশ দিতে হল বর্ধমান জেলা প্রশাসনকে। জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা পঞ্চায়েতকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ১০০ দিনের কাজ শুরু করুন। যাঁদের জবকার্ড আছে, তাঁরা নিজেরাই ঠিক করবেন, কাজ করবেন কি না। আপনারা নিজেরা কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বর্ধমান জেলার ৬টি মহকুমার মধ্যে ১০০ দিনের কাজে বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে কাটোয়া মহকুমা। শ্রম দিবস তৈরি কিংবা আর্থিক ব্যয় দু’দিক থেকেই গত বছরের তুলনায় (নভেম্বর পর্যন্ত) ঘাটতি রয়েছে এ বছর। কাটোয়া ১ ব্লকে শ্রম দিবস তৈরির ক্ষেত্রে আলমপুর, গোয়াই, শ্রীখণ্ড, সরগ্রাম, কাটোয়া ২ ব্লকের সিঙ্গি, করুই, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রাম, মুড়গ্রাম-গোপালপুর, রাজুর, আনখোনা, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের মৌগ্রাম, কেতুগ্রাম ও নিরোল, মঙ্গলকোট ব্লকের ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টির অবস্থাই অত্যন্ত সঙ্গীন। কেন কাজ কম হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগ পঞ্চায়েত প্রধানই কারণ হিসাবে তুলে ধরেন, মাঠে ধান কাটার বিষয়টিকেই।
পিছিয়ে পড়া ওই সব পঞ্চায়েতগুলির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সরাসরি কথা বলেছেন জেলাশাসক। ওই সব পঞ্চায়েত কর্তারাও জানিয়েছেন, কেন তাঁরা শ্রম দিবস তৈরি করতে পারেননি। তবে বেশিরভাগ কর্মকর্তাই জেলা প্রশাসনকে আশ্বাস দিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যে শ্রম দিবস তৈরির ঘাটতি পূরণ করে দেবেন তাঁরা।
জেলাশাসকের সামনে ‘আশ্বাস’ দিলেও কেতুগ্রাম ১ ও মঙ্গলকোট ব্লকের পঞ্চায়েত প্রধানেরা কিন্তু ১০০ দিনের কাজ নিয়ে নিজেরাই বেশ সন্দিহান। ওই দুই ব্লকের অধিকাংশ পঞ্চায়েতই সিপিএমের। ওই সব এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে। সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধানদের দাবি, “কাজ করতে গেলে এলাকায় শান্তি দরকার। গত এক বছর ধরেই এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা। বহু মানুষ গ্রামছাড়া। কী ভাবে কাজ হবে?” তৃণমূল নেতারাও মনে করেন, ১০০ দিনের কাজে সাফল্য আনতে গেলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে হবে।
কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম জানান, সর্বদলীয় বৈঠক করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোট ও ঝিলু ২ পঞ্চায়েতের প্রধানদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর রয়েছে। পুলিশের খাতায় তারা ‘পলাতক’। সেই কারণে ওই দু’টি পঞ্চায়েতে প্রশাসক বসানো হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, এক্স-জমিনদারি বাঁধ সংস্কার থেকে শৌচাগার, ক্ষুদ্র সেচ দফতরের কাজ, সবই ১০০ দিনের কাজে করা যাবে। এর ফলে নতুন করে শ্রম দিবস তৈরি হবে।
জেলা, মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা ছাড়া পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান, সভাপতি ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন ওই সভায়। |