নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান |
জুতো আছে তো হেলমেট নেই। ঘটনাস্থলে যেতে হয় ধার করা গাড়িতে চড়ে। গাড়ির জ্বালানির জন্য ধার করতে হয় পেট্রোল পাম্পে। যার নিজেরই পরিকাঠামোর এমন দশা, সেই দফতরই রয়েছে বর্ধমান শহরের নানা নার্সিংহোম, শপিং মল, সিনেমা হল, বহুতল ইত্যাদির অগ্নি নির্বাপণের দায়িত্বে। বর্ধমানে নিজেদের দফতরের এমন বেহাল পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন দমকলের ওসি (সদর) তপন মুখোপাধ্যায় নিজেই।
বর্ধমান শহরে কৃষ্ণসায়রের উল্টো দিকের ছোট একটি জায়গায় ১৯৪৮ সালে এই দমকল কেন্দ্রটি গড়া হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে শহরের কেষ্টপুরের কাছে জিটি রোডের পাশে তিন একর জায়গায় দমকল কেন্দ্রের নতুন বাড়িটি তৈরি হয়। তাতে অবশ্য পরিকাঠামোর সমস্যা মেটেনি দমকলের। এমন দশা নিয়েও প্রায় ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার আগুন নেভানোর গুরুদায়িত্বে রয়েছে এই দফতর। ওসি তপনবাবু বলেন, “কাছাকাছি বলতে একমাত্র ভাতারে দমকল কেন্দ্র রয়েছে। তাই আমাদের বর্ধমান, রায়না, গলসি, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ, জামালপুর, মেমারি, গুসকরা, এমনকী মন্তেশ্বরেও আগুন নেভাতে যেতে হয়। ফলে অনেক জায়গায় গিয়ে কটূক্তি, হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। মানুষ প্রশ্ন তোলেন, এত দেরিতে কেন পৌঁছেছে দমকল?” |
কর্মী সংখ্যাও অপ্রতুল। থাকার কথা ছ’জন অফিসারের। রয়েছেন পাঁচ জন। লিডার-সুপারভাইজার পদে আছেন ৮ জন। থাকার কথা ৯ জনের। সংখ্যার দিক দিয়ে সব চেয়ে করুণ অবস্থা যাঁরা সরাসরি আগুনের মোকাবিলা করেন, সেই ফায়ার অফিসারদের। থাকার কথা ৩৬ জনের, রয়েছেন ২৮ জন। ফলে কর্মীদের ‘ওভারটাইম’ চালু রয়েছে এই দফতরেই। নেই কোনও মহিলা কর্মীও। তপনবাবু বলেন, “আগুন লাগলে বিপন্ন মহিলাদের বাঁচাতে মহিলা দমকল কর্মীর প্রয়োজন। এক সময় কথা হয়েছিল, এই কেন্দ্রে কয়েক জন অন্তত মহিলা কর্মীকে চাকরি দেওয়া হবে। কিছুই তো হল না।”
নেই অনেক সাজ-সরঞ্জামও। দফতরের তরফে জানানো হয়, প্রয়োজন রয়েছে মিডিয়াম ট্যাঙ্কার ও পোর্টেবল ট্যাঙ্কার, ৬ চাকার একটি জলের ট্যাঙ্কার, যেটি শহরের অলিগলিতে ঢুকতে পারবে। শহরের বহুতলে আগুন নেভানোর জন্য ১০-১২ চাকার ‘টার্নটেবিল ল্যাডার’ প্রয়োজন। এ ছাড়াও চাই পোটের্বল পাম্প, মিডিয়াম পাম্প। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেমন ভূমিকম্পে বাড়ির মধ্যে আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধারের জন্য দরকার হাইড্রলিক আয়রন কাটার। কাঠের ঘরে আগুন লেগে কেউ আটকে পড়লে উদ্ধারের জন্য দরকার ‘হাইড্রলিক ট্রি ব্রাঞ্চ কাটার’। লোহার লাইন বা ‘লোয়ারিং লাইন’ ধরে দরকারে যাতে দমকলের ইঞ্জিন সরাসরি উঠে যেতে পারে উঁচুতে। আগুন লাগা বাড়ি থেকে উদ্ধার করে বাসিন্দাদের ছাদ বা উঁচু কোনও জায়গা থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য দরকার ‘জাম্পিং নেট’। দরকার, বাড়ির মধ্যে থেকে মানুষকে বাঁচাতে কর্মীদের গ্যাস-মুখোশ। দরকার অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থাও। কিন্তু বর্ধমানে এ সবের কিছুই নেই দমকলের কাছে।
সমস্যা রয়েছে গাড়ির জ্বালানি নিয়েও। যে কোনও সময়ে যাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো যায় সে জন্য দমকলের ইঞ্জিনে প্রচুর তেল রাখতে হয়। কিন্তু দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন পাম্পে ধারে তেল নিতে হয়। এখন আর ধারে তেল দিতে চায় না পাম্পগুলি। রাজনৈতির নেতাদের সাহায্যে তেল মেলে। ওসি তপনবাবুর প্রশ্ন, “এ সব সমস্যা পেরিয়ে কী আমাদের পক্ষে সব সময় ঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো সম্ভব?” |