চোলাই যাঁরা খান, প্রাণের ঝুঁকি আছে জেনেই খান। কিন্তু না জেনে বিপদের শিকার হচ্ছেন তাঁরাই, যাঁদের হাতে বিদেশি মদের বোতলে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে জাল মদ।
সম্প্রতি চোলাই ধরতে গিয়েই আবগারি অফিসারদের হাতে আসছে জাল মদ। জেলা আবগারি দফতর সূত্রের খবর, চোলাইয়ের রমরমা রুখতে নিয়মমাফিক অভিযান হয়। মাসে প্রায় তিনশো অভিযান চলে বর্ধমান, কালনা, কাটোয়া মহকুমায়। অন্তত কাগজে-কলমে। কিন্তু আগে চোলাইয়ের ঠেকগুলিতে এত বিপুল পরিমাণ জাল বিদেশি মদ মিলত না।
সাধারণত অতি নিম্নবিত্ত মানুষই চোলাইয়ের খদ্দের। তাঁদের মধ্যে যাঁরা একটু স্বচ্ছল, তাঁদের একাংশ সরকার অনুমোদিত দেশি বা বাংলা মদ খান। কিন্তু সকলে নয়। কেননা ওই আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে ৫-১০ টাকার ফারাক অনেকটাই, বিশেষত যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন তাঁদের কাছে। কম টাকায় ভরপুর নেশা করার জন্য জেনে-শুনেও বিপুল সংখ্যক মানুষ চোলাই বা চুল্লুর ফাঁদে পা দেন।
কিন্তু এর উপরের স্তরে, মধ্যবিত্তের কাছে মদ বলতে মূলত বিভিন্ন বড় বাণিজ্যিক সংস্থার তৈরি বিদেশি মদ (ফরেন লিকার) অর্থাৎ রাম, হুইস্কি, ভদকা, জিন, ব্র্যান্ডি ইত্যাদি। চাইলে দোকান থেকে রসিদও পাওয়া যায়। কিন্তু খদ্দেরদের একটা বড় অংশ জানেনই না, হুবহু আসলের মতো দেখতে বোতলে তাঁকে বিক্রি করা হতে পারে জাল মদ। আবগারি দফতরের পরিভাষায় ‘ফেক ফরেন লিকার’ (এফএফএল)। রং এবং স্বাদ-গন্ধ আনার জন্য যার মধ্যে মেশানো থাকে বিভিন্ন অপদ্রব্য। এই সব রাসায়নিকের প্রভাবে শারীরিক ক্ষতির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। টানা খেলে চোখ, স্নায়ু, কিডনি চিরতরে নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
আবগারি দফতরের সূত্রের খবর, বর্ধমান শহর থেকে শুরু করে মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী, কাটোয়া, খণ্ডঘোষ, কেতুগ্রাম সর্বত্র অবাধে বিক্রি হয়ে চলেছে এফএফএল। হুবহু আসলের মতো দেখতে করার জন্য জাল বোতল, স্টিকার সবই পাওয়া যায়। মূলত কলকাতা থেকেই সে সবের ‘সাপ্লাই’ আসে। গত ৮ এপ্রিল থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টি অভিযানে প্রায় ৭৫০ লিটার নকল বিদেশি মদ উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যা ১১। পলাতকের সংখ্যাও প্রায় তাই। বিশেষত পূর্বস্থলীতে এর রমরমা। অনেক সময়ে চোলাইয়ের ঠেকেও তুলনামূলক সস্তায় হাতবদল হচ্ছে এই জাল মদ।
কখনও আসলের দামে একেবারে আসল বলেই। সরাসরি কিছু দোকান থেকে এই কারবার চালানো হচ্ছে বলে আবগারি দফতরের কাছে খবর রয়েছে। আবার কখনও সস্তায় ‘চোরাই মাল’ দেওয়ার নামে জাল মদ বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা আবগারি দফতরের এক অফিসারের কথায়, “কয়েক মাস আগে বিদেশি মদের দাম এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। ফলে নকল মদেরও বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। কম দামে বিলিতি মদ দেওয়ার নামে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খদ্দেরকে এফএফএল বিক্রি করছেন। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, মানুষও বিপদে পড়ছেন।”
কিন্তু সব জেনেও বিপদ আটকানো যাচ্ছে না কেন, তা রহস্যই। |