শহর ঘিঞ্জি। আর বিপদ সেখানেই।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আসানসোল দমকলের পরিকাঠামো উন্নয়নেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? ভয়াবহ আগুনের বিপর্যয় থেকে বাঁচানো যাবে শহরকে?
দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ আরও বড় সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রশ্ন, আগুন লাগলে যদি ঘটনাস্থলেই পৌঁছনো না যায়, তাহলে আগুন নিভবে কী করে? অর্থাৎ ঘিঞ্জি শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থাই আগুন নেভানোর কাজে প্রধান প্রতিবন্ধক। অন্তত অতীতের অভিজ্ঞতাই বলেছে সে কথা। সমস্যা এতটাই জ্বলন্ত আর বাস্তব যে পুর কর্তৃপক্ষও তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরাও বুঝে গিয়েছেন, শুধু দমকলে পরিকাঠামোর উন্নতি হলেই চলবে না পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে দিতে হবে তাঁদেরই। অগ্নি নির্বাপক নিয়মনীতির বাধ্যবাধকতায় আনতে হবে ব্যবসায়ীদের।
আসানসোলে মূল বাজার এলাকাই এখন দমকলের কাছে মাথাব্যথার মূল কারণ। আগুন লাগলে ঘটনাস্থল পর্যন্ত গাড়ি পৌঁছতেই পারে না। জিটি রোডের উপরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয়েকশো মিটার ভিতরে টেনে নিয়ে যেতে হয় জলের পাইপ। ইঞ্জিন থেকে পাইপের দূরত্ব বাড়লে আবার জলের চাপ কমে যায়। সম্প্রতি আসানসোলের পাক্কা বাজার এলাকায় একটি গুদামে ভোররাতে আগুন লাগে। দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারেনি সেখানে। নেতাজি সুভাষ রোডে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটি বড় নালার মধ্য দিয়ে পাইপ নিয়ে যেতে হয়েছিল।
|
আমরির ঘটনার পরে শহরের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি দমকল বাজার এলাকার এই পরিস্থিতিও শুধরে নেওয়ার আবেদন করেছে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আমরা প্রথমে নার্সিংহোম, শপিং মল আর বহুতলগুলিতে অভিযান শুরু করেছি। এরপরে মূল বাজার এলাকায় যাব।”
সমস্যায় ধুঁকতে থাকা দমকলে পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশিই দরকার জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা। সেলিম জাভেদের দাবি, শহরের মধ্যে অন্তঃত তিনটি জলাধার থাকা উচিত। বর্তমানে আছে দু’টি। তার মধ্যে আবার একটিতে প্রতি দিন জল মেলে না। বুধা জলাধার থেকে ইঞ্জিনে জল ভরে আনতে হয়। সম্প্রতি রাহা লেন এলাকায় একটি জলাধার দমকলের জন্য বানানো হলেও এই জলাধারের ভালব খোলা হলেই বাসিন্দারা নির্জলা হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে ফিরে আসতে হয় দমকলকে। সেলিম জাভেদের দাবি, “এখানে দমকলের জন্য একটি পৃথক পাইপ লাগানো না হলে এই জলাধার আমাদের কোনও কাজে আসবে না।” তিনি জানিয়েছেন, শহরের বস্তিন বাজার এলাকায় আরও একটি জলাধার বানানোর প্রস্তাব পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে। শুধু আসানসোলেই নয়, বরাকর বাজার এলাকাতেও একটি জলাধার বানাবার প্রস্তাব পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে। সালানপুর ও বারাবনিতেও পৃথক পৃথক জলাধার বানাবার পরিকল্পনা তিনি দিয়েছেন।
আসানসোলের মেয়র তথা এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, জলাধার নির্মাণের মতো যে গুলি একেবারে পুরসভার হাতে রয়েছে সেগুলি দ্রুত হয়ে যাবে। আর আসানসোলের আশপাশের এলাকায় দমকলের পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে এডিডিএ।
তবে নাগরিকদের আশঙ্কা, আমরি-কাণ্ড চাপা পড়ে গেলেই চাপা পড়ে যাবে সব উদ্যোগও।
|