নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
চোলাই ধরতে গিয়ে মিলল জাল মদ।
মগরাহাটের বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জুড়ে যে ‘অভিযান’ শুরু হয়েছে, তা থেকে বাদ পড়েনি আসানসোলও। দিনের শেষে ৩৫০ লিটার চোলাই বাজেয়াপ্ত করেছে আবগারি দফতর। সেই সঙ্গে ধরা পড়েছে ৭০ লিটার জাল মদ ও তা বোতলবন্দি করার যন্ত্র। তবে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ দত্ত জানান, আরও কিছু দিন ধারাবাহিক অভিযান চালানো হবে।
চোলাইয়ের খদ্দের সাধারণত নিম্নবিত্ত মানুষ। তাঁদের তুলনায় স্বচ্ছলদের একাংশ দেশি বা বাংলা মদ খান। তবে সকলে নয়। নিম্ন আয়ের নিয়মিত মদ্যপায়ীদের ক্ষেত্রে সামান্য কম দামও গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিপদ জেনেও অনেকে চোলাইয়ের ফাঁদে পা দেন। মধ্যবিত্তের কাছে মদ বলতে মূলত বিদেশি মদ। কিন্তু খদ্দেরদের একটা বড় অংশ জানেনই না, হুবহু আসলের মতো দেখতে বোতলে বিক্রি হচ্ছে জাল মদ (ফেক ফরেন লিকার, সংক্ষেপে এফএফএল)। রং আর গন্ধ আনতে যাতে মেশানো হয় বিভিন্ন অপদ্রব্য।
|
পাঞ্চিং মেশিন। —নিজস্ব চিত্র। |
আবগারি দফতরের পশ্চিমাঞ্চলের সুপার সুজিতকুমার দাস জানান, শিল্পাঞ্চলের অনেক জায়গাতেই জাল মদ তৈরির কাজ কারবার চলছে। তাঁদের অফিসাররা এ দিন বরাকর, লালমাটিয়া, ঢাকেশ্বরী-সহ কিছু জায়গায় অভিযান চালান। সাতটি চোলাই ও জাল মদ তৈরির ঠেক ভাঙা হয়েছে। কাঁচামাল ছাড়াও বাজেয়াপ্ত হয়েছে মদ বোতলবন্দি করার ‘পাঞ্চিং মেশিন’।
সুজিতবাবু জানান, চোলাইয়ে তীব্রতা বাড়ানোর জন্য এক ধরনের স্পিরিট ব্যবহার হয়। রানিগঞ্জ, নিয়ামতপুর, সালানপুরে তার রমরমা কারবার চলছে। গত তিন মাসে প্রায় এক হাজার লিটার স্পিরিট বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সালানপুরের ধাঙ্গুড়ি, নিচুপাড়া, কলাডাবর, ফুলবেরিয়া, পাতালনামো কেশিয়া, রূপনারায়ণপুর, মহিষামুড়া অঞ্চলে চোলাই ও জাল মদের কারবার ঠেক চলছে। আসানসোলের দামড়া, কালিপাহাড়ি, কাচ কারখানা এলাকায় একাধিক ঠেক রয়েছে। বারাবনির একাধিক এলাকা, কুলটির ডিসেরগড়, নিয়ামতপুরের ৪ নম্বর ও কামারবাঁধ এলাকাতেও জমিয়ে কারবার চলছে। বেশ কয়েকটি চোলাই মদের ঠেক চালানোর পিছনে হরি সিংহ ও দিলীপ মণ্ডল নামের দু’জনের জড়িত থাকার খবরও পেয়েছে আবগারি দফতর।
শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি বৈধ মদের দোকানেও বেআইনি স্পিরিট রাখার অভিযোগ তুলেছেন আবগারি দফতরের পশ্চিমাঞ্চল সুপার। তিনি জানান, সম্প্রতি আসানসোলের নিঘা ও দুর্গাপুরের মায়াবাজার অঞ্চলে দু’টি বৈধ মদের দোকান থেকে বেআইনি স্পিরিট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় কম দামে বিদেশি মদ দেওয়ার নামে, কোথাও আসলের দামেই জাল মদ বিক্রি হচ্ছে বলেও আবগারি দফতরের কাছে খবর। কিন্তু সুরাহা কী, তার সদুত্তর মেলেনি। রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হয়নি। |