চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
অনেক ভাঙনের মধ্যেও রয়ে যায় ঐতিহ্য-চেতনা
সিমা গ্যালারিতে এখন চলছে যে প্রদর্শনী তার শিরোনাম ‘অদ্ভুতম : রস ইন ইন্ডিয়ান আর্ট’। ৩৯ জন প্রবীণ ও নবীন সমকালীন শিল্পীর মোট ৪৩টি কাজ নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতীয় শিল্পের আত্মপরিচয় এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নিবিষ্ট সন্ধানের কিছু প্রয়াস রয়েছে। এই ‘আত্মপরিচয়’-এর ধরন সময় ও বাস্তবতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পালটায়। এই বিবর্তনের ধরনকে অনুধাবনের চেষ্টাও এই প্রদর্শনীর আর একটি উদ্দেশ্য। ১৫ বছর আগে ১৯৯৬ সালে ‘সিমা’য় আয়োজিত হয়েছিল ‘চমৎকারা : মিথ অ্যান্ড ম্যাজিক ইন ইন্ডিয়ান আর্ট’ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি লন্ডনে গিয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক মহলে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল। সেই প্রদর্শনীতে একটি ঝোঁক ছিল বাস্তবতা বা স্বাভাবিকতার রূপান্তরের মধ্য দিয়ে শিল্পে কী ভাবে ‘অতিশয়োক্তি’ বা ‘বক্রোক্তি’ প্রাধান্য পায়, তা বোঝার। সেই প্রয়াসেরও সূচনা ছিল ১৯৯৫তে ‘ফ্যানটাসি’ শীর্ষক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে।
‘ফ্যানটাসি’ বা কল্পরূপ ‘অতিশয়োক্তি’র একটি ধরন। অভিব্যক্তিবাদ বা এক্সপ্রেশনিজম, সুররিয়ালিজম বা ম্যাজিকরিয়ালিজম-এ এই ‘অতিশয়োক্তি’ই নানাভাবে ব্যঞ্জিত হয়। ‘অদ্ভুতম’ শিরোনামের আলোচ্য প্রদর্শনীতেও অধিকাংশ কাজে এই দিকটির চর্চা প্রাধান্য পেয়েছে। প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত নন্দনদর্শনে অবশ্য যে কোনও সফল দৃশ্যকলা দর্শকের মধ্যে যে নান্দনিক প্রতিক্রিয়া জাগায় তাকে চিহ্নিত করতেই ব্যবহৃত হয় ‘বিস্ময়’ বা ‘অদ্ভুত’ অভিধা। ‘অতিশয়োক্তি’কে অনুধাবন করা। আর এই ‘অতিশয়োক্তি’ কি করে ‘বিস্ময়’ বা ‘অদ্ভুত’-এর বোধ সঞ্চারিত করা, সেটাকেও বোঝা। এই দুটি মাত্রার রসায়নের ভিতর দিয়ে জেগে ওঠে আর একটি প্রশ্ন। আজকের বিশ্বায়িত পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক আত্মপরিচয়ের কি কোনও প্রাসঙ্গিকতা আছে? ১৯৯৬এর ‘চমৎকারা’ প্রদর্শনীতে ‘আত্মপরিচয়’ নির্মাণের যে প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, আজকের ‘অদ্ভুতম’ সেটা অনেকটাই পাল্টেছে। কিন্তু অনেক ভাঙনের মধ্যেও এই ঐতিহ্য-চেতনা কিভাবে সন্তর্পণে কাজ করে যায়, তার কিছু দৃষ্টান্ত এই প্রদর্শনীতেও রয়েছে।
সিমায় আয়োজিত প্রদর্শনীর একটি ছবি
এই প্রদর্শনীর অন্যতম প্রধান একটি আকর্ষণ মধু ও হাজরা চিত্রকরের আঁকা মেঝেতে বিছানো লৌকিক পটচিত্রটি। এই ছবির আঙ্গিকে লৌকিক ঐতিহ্যের প্রবহমানতা রয়েছে। বিষয়ের মধ্যে এসে যাচ্ছে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের নানা অনুষঙ্গ। ময়ঙ্ককুমার শ্যামের ‘আ ট্যাঙ্গেলড ওয়েব’ ক্যানভাসটিতে অনুভব করা যায় আদিমতা কী ভাবে আধুনিকতাকে আত্তীকৃত করছে। ছবিটির বিষয় মাকড়সার জাল বোনা। অ্যাক্রিলিক ও কালি-কলমের নিবিড় বুননে গড়ে তোলা ছবিটিতে ঐতিহ্যের রূপান্তর স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। এই ঐতিহ্যকে ১৯৬০ ও ৭০ দশকের শিল্পী কেমন করে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহার করেছেন তার দৃষ্টান্ত টি. বৈকুণ্ঠম বা এস. নন্দগোপাল।
তাঁদের ছবিতে ঐতিহ্য আত্তীকরণে যে সরলতা রয়েছে, ১৯৪০ দশক পরবর্তী অনেক শিল্পীর আত্তীকরণ প্রক্রিয়াই তত সরল নয়। এস. এইচ. রাজা-র ‘র‌্যাডিয়েশন’ অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটির আঙ্গিক পাশ্চাত্য উদ্ভূত। কে. জি. সুব্রহ্মণ্যমের ‘দ্য ইনার ব্রিথ’ শীর্ষক ছবিটি দক্ষিণ ভারতীয় ঐতিহ্যকে আধুনিকতার বুননে সঞ্জীবিত করার অসামান্য দৃষ্টান্ত। ভি. এস. গাইতোণ্ডে বা জে. স্বামীনাথনের ছবির বিমূর্ততায় ঐতিহ্যের যে অপ্রত্যক্ষ প্রক্ষেপ রয়েছে, সেই মূল্যবোধ ১৯৬০-এর দশকের শিল্পীদের প্রকাশেরও বিশেষ মাত্রা ছিল। গণেশ পাইন, যোগেন চৌধুরী বা অর্পিতা সিংহের ছবি এ দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের কাজে সাম্প্রতিক বাস্তবতার জটিল বিন্যাসের মধ্যেও ঐতিহ্যের সূক্ষ্ম অভিঘাত কেমন করে কাজ করে তার দৃষ্টান্ত আবির কর্মকার বা সুমিত্র বসাকের কাজ। আবিরের বহুমাত্রিক রচনার ‘এভরি ওয়ান ওয়াজ সো হ্যাপি দেন’। একটি উৎসবের অনুষঙ্গে যে সঙ্গীত ব্যবহৃত হয়েছে এখানে, তাতে ‘অদ্ভুত’ যেমন আছে, তেমন আছে রূপান্তরিত ঐতিহ্য। সুমিত্রর ১২টি ক্যানভাসের গড়ে ওঠা বড় ছবিটি ‘পক্ষী রূপী ধর্ম’ আত্মপরিচয় সন্ধানের জটিলতাকে প্রজ্ঞাদীপ্তভাবে তুলে আনে। শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়ের এমব্রয়ডারির ছবি ও সুরেখা-র ভিডিও-র মধ্যে ব্যবধান অনেক। কিন্তু দুটোই ‘অদ্ভুত’-এর মধ্য দিয়ে ঐতিহ্য সন্ধানের দু’রকম প্রয়াস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.