সর্ষের মধ্যেই ভূত। গত ২৮ নভেম্বর জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ি যাওয়ার পথে গাড়ি থামিয়ে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ২০ লক্ষ টাকা লুঠ হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার, নিরাপত্তা রক্ষী, চালক ও এক মহিলা-সহ ৭ জনকে। এঁরা ডাকাতির গল্প ফেঁদেছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
সোমবার জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে দুই ব্যাঙ্ককর্মী-সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আরও দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই তারা ধরা পড়বে।” ওই ঘটনায় ব্যাঙ্কেও আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কও বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ জানায়, ধৃত ক্যাশিয়ারের নাম সমরেশ ভট্টাচার্য। নিরাপত্তা রক্ষীর নাম চন্দ্রমোহন রায়। ধৃত অন্য পাঁচ জন হলেন সফিকুল ইসলাম, দীননাথ বর্মন ওরফে চিত্ত এবং তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীদেবী, রমেশ ওঁরাও এবং অজিত দে। ধৃতদের কাছ থেকে মোট ৪ লক্ষ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, হলদিবাড়ির সফিকুল হলেন গাড়ির মালিক তথা চালক। দীননাথ, সাবিত্রী ও অজিত টাকিমারি চরের বাসিন্দা। রমেশের বাড়ি রংধামালিতে। |
পুলিশের দাবি, ডাকাতির ঘটনা তদন্তে নেমে ৪৮ ঘণ্টার মাথায় দীননাথ ও সাবিত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করে অন্যদের নাম মেলে। একে একে সকলকে ধরা হয়। দীননাথ ও সাবিত্রীর নামে পুলিশের খাতায় পুরনো অভিযোগ রয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার ৫০ বছর বয়সী সমরেশবাবু আদতে হাওড়ার বালির বাসিন্দা। তাঁর বাড়িতে স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। আগে তিনি কলকাতার খিদিরপুর শাখায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। পদোন্নতির সুবাদে তিনি ২০১০ সালের অগস্ট মাসে হলদিবাড়িতে বদলি হন। এলাকাতেই তিনি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সমরেশবাবুই ব্যাঙ্কের টাকা হাতানোর ছক কষেছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ সন্দেহ, চন্দ্রমোহনবাবুর সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’র ভিত্তিতে রংধামালি, টাকিমারির দলটির সঙ্গে যোগাযোগ হয় সমরেশবাবুর। প্রাক্তন সেনাকর্মী চন্দ্রমোহনবাবু ছাড়াও গাড়ির মালিক তথা চালক সফিকুলও লুঠের ষড়যন্ত্রে সামিল হয় বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সম্প্রতি সফিকুল গাড়িটি কেনেন। তার এখনও রেজিস্ট্রেশন হয়নি। অন্য দিন চালক গাড়ি চালালেও ওই দিন সফিকুল নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তা নিয়েই পুলিশের সন্দেহ হয়।
গত ২৮ নভেম্বর সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের হলদিবাড়ি শাখা থেকে গাড়ি নিয়ে জলপাইগুড়ি সদর শাখায় টাকা নিতে যান কর্মীরা। ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে যাওয়ার সময়ে জলপাইগুড়ি শহর থেকে প্রায় ৯ কিমি দূরে কোতোয়ালি থানার সর্দারপাড়া এলাকায় ৫ সশস্ত্র দুষ্কৃতী মোটর বাইক নিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা লুঠ করে পালায়। তদন্ত নেমে, টাকা নিয়ে যাওয়ার সময়ে ব্যাঙ্কের কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক অসঙ্গতির প্রমাণ পায় পুলিশ। প্রথমত, যে গাড়িটি করে টাকা নিতে হলদিবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি আসা হয়েছিল, তা ব্যাঙ্কের গাড়ি নয়। নম্বরবিহীন একটি গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল। ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে না জানিয়ে, টাকা নিতে যাওয়ার সময়ে যে ট্রাঙ্ক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি ব্যাঙ্কে না রেখে পাশের এক সাইকেল মেরামতির দোকানে রাখা ছিল। জলপাইগুড়ি থেকে টাকা নিয়ে ফেরার সময়ে চালককে গাড়ি চালাতে না দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার সমরেশ ভট্টাচার্য। ব্যাঙ্কের যে নিরাপত্তা কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ঘটনার দিন তাঁর কাছে অস্ত্র ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, হলদিবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ির রওনার সময়েই ব্যাঙ্কের গাড়ির পাশে মোটর বাইক চড়ে পাঁচ দুষ্কৃতী সঙ্গ নেয়। ফেরার সময়ে দুষ্কৃতীরাই কার্যত ব্যাঙ্কের গাড়িটিকে ‘পাহারা’ দিয়ে সর্দারপাড়া এলাকায় নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, ব্যাঙ্কের দুই কর্মী পুরোটাই জানতেন। ঘটনার পরে গাড়িতে থাকা ব্যাঙ্কের কর্মী এবং চালকের বয়ানে নানা অসঙ্গতি পেয়েই পুলিশ তাঁদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “জেরার প্রথম পর্বেই নানা অসঙ্গতি দেখে ব্যাঙ্কের দুই কর্মীকে সন্দেহ করা হয়। পরে কয়েক জন ধরা পড়তেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। তার পরেই ব্যাঙ্ককর্মীদের গ্রেফতার করা হয়।” |