|
|
|
|
কাল বৈঠক মহাকরণে |
নারী-শিশুকল্যাণে কাজ কই, টাকা আটকে দিল দিল্লি |
অশোক সেনগুপ্ত • কলকাতা |
এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ!
মালদহ হাসপাতালে সাম্প্রতিক শিশুমৃত্যুর ঘটনার তদন্তে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের এক প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিরা ফিরে গেলেন অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে। এখানে থাকাকালীন গ্রামবাসীদের শিবির বসিয়ে তাঁরা জেনে গেলেন, কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্যে চলা বিভিন্ন নারী ও শিশুকল্যাণ প্রকল্পের কাজ কার্যত থমকে রয়েছে এ রাজ্যে! এর ঠিক আগে কেন্দ্রীয় আর একটি প্রতিনিধিদলও একই অভিজ্ঞতা নিয়ে দিল্লি ফিরেছে। এবং বার বার একই কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এ বার পশ্চিমবঙ্গে ওই সব প্রকল্পের টাকা আটকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছে, অর্থ মজুত থাকা সত্ত্বেও প্রকল্পগুলোর এই হাল কেন? শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকার এর ‘যথাযথ’ ব্যাখ্যা দিতে না-পারলে ভবিষ্যতেও কেন্দ্রীয় অর্থ মিলবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দিল্লি।
এ হেন ‘গুরুতর’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় রাজ্য প্রশাসনে রীতিমতো নাড়াচাড়া পড়ে গিয়েছে। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন বলে মহাকরণ-সূত্রের খবর। প্রকল্পগুলির কাজে ‘গড়িমসি’র কারণ যত শীঘ্র সম্ভব খুঁজে বার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর সেই লক্ষ্যেই আগামী কাল, বুধবার মহাকরণে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
মূলত যে দু’টো প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র ক্ষুব্ধ, তার একটি হল বয়ঃসন্ধির কিশোরীদের স্বার্থে গৃহীত ‘সবলা।’ এতে গরিবঘরের ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরীদের পুষ্টিকর খাদ্য, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ইত্যাদি দেওয়ার কথা। এই খাতে গত দুই অর্থবর্ষে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে জুগিয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ১৩টি জেলায় প্রকল্পের কাজ শূন্য! মালদহ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, নদিয়া, কলকাতা ও পুরুলিয়া এই ছ’টা জেলায় নামমাত্র কাজ হয়েছে। একই হাল ‘ইন্দিরা গাঁধী মাতৃত্ব সহায়ক যোজনা’রও। এই প্রকল্পে সন্তানসম্ভবা দরিদ্র মহিলাদের এককালীন চার হাজার টাকা দেওয়া হয়। টাকাটা চলে যায় সরাসরি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কেন্দ্রীয় হুঁশিয়ারির পরে খোঁজখবর নিতে গিয়ে সমাজকল্যাণ দফতর দেখেছে, বাঁকুড়া ও জলপাইগুড়ি জেলায় এর কাজ কিছুটা শুরু হলেও অন্যান্য জেলায় কোনও অগ্রগতি হয়নি। বস্তুত ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে দশ কোটি টাকা দিলেও কাজ না-হওয়ার দরুণ আর টাকা দেয়নি।
শিশু ও নারীকল্যাণের এই সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সঙ্গে রাজ্যের আর্থিক দুরাবস্থার সম্পর্ক নেই। তবু এমন অবস্থা কেন? রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের তরফে কোনও মহল লোকাভাবের কথা বলছে। যেমন দফতরের এক অফিসার বলছেন, “বিধানসভা ভোটের আগে শূন্য পদ পূরণের চেষ্টা হয়েছিল। করা যায়নি। লোক না-নিলে কাজ করা মুশকিল।” যে সমস্যা প্রসঙ্গে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের বক্তব্য, “নিয়ম মেনে শিগগিরই খালি পদে লোক নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।” কোনও মহল আবার কর্মীদের ‘দক্ষতার অভাব’কেও যুক্তি হিসেবে খাড়া করছে। তবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের রিপোর্ট মোতাবেক, মূল গলদটা অন্য জায়গায়। কোথায়? রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ কতটা এগোল, মানুষ তাতে কতটা সাড়া দিচ্ছেন, প্রশাসনকে সে সব জানতে হয় গ্রামে গ্রামে শিবির বসিয়ে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তেমন কোনও চেষ্টা হয়নি। মানুষকে আদৌ বোঝানো হয়নি, প্রকল্পগুলো থেকে তাঁরা কী কী সুবিধে পেতে পারেন।
যার পরিণামে প্রকল্পগুলো ঘিরে এখন অনিশ্চয়তার জাল। |
পদ খালি |
• ব্লক কল্যাণ অফিসার ১১৮
• জেলা প্রকল্প অফিসার ১৯০
• সুপারভাইজার ২,৫৮৪
• অঙ্গনওয়ারি কর্মী ১০,৩১০
• সহায়িকা ১৬,৭১০ |
|
|
|
|
|
|