দিল্লির পথে রওনা দিল পাঁচ ‘বিদ্রোহিণী’ কন্যা
যোধ্যা পাহাড়তলির ভুরমু বা হাড়মাডির মতো অখ্যাত-প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে একেবারে নয়াদিল্লির রাইসিনা হিলস্। রাইসিনা হিলসের রাষ্ট্রপতি ভবনের সঙ্গে পুরুলিয়ার যোগসূত্র আগেই তৈরি হয়েছিল রেখা কালিন্দীদের হাত ধরে। সেই সম্পর্কককে আরও দৃঢ় করেছে জেলার তিন ‘বিদ্রোহিণী’সঙ্গীতা বাউরি, বীণা কালিন্দী ও মুক্তি মাঝি।
রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে সোমবার নয়াদিল্লির পথে রওনা দিল নিজেদের বিয়ে রুখে পড়তে চাওয়া এই তিন কন্যা। তাদের সঙ্গী আরও এমনই আরও দুই ‘বিদ্রোহিণী’। আফসানা খাতুন ও সঙ্গীতা মাহাতো। আফসানা ও সঙ্গীতার কাছে অবশ্য রাষ্ট্রপতি ভবনের অলিন্দ নতুন নয়। এর আগে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি সাহসিকতার পুরষ্কারও নিয়ে এসেছে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ এ দিন বলেন, “রাষ্ট্রপতি এই পাঁচ জনকে ডেকে পাঠিয়েছেন। প্রথমে তিন জনকে ডেকেছিলেন। পরে আফসানা ও সঙ্গীতাকেও দেখতে চান তিনি। বাল্যবিবাহ রোধে ওরা আজ দেশের কাছে দৃষ্টান্ত। আমরা ওদের জন্য গর্বিত।”
জেলাশাসকের কাছে পাঁচ কন্যা। ছবি: সুজিত মাহাতো।
ঝালদা ২ ব্লকের বড়কোলা গ্রামের রেখা কালিন্দীর হাত ধরে বাল্যবিবাহ রোধে লড়াই শুরু পুরুলিয়ার। জাতীয় শিশুশ্রমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল রেখা। সেখানেই প্রতিবাদের ভাষা শেখা। সেই পথ ধরেই একে একে এসেছে আফসানা, সুনিতা, উত্তরা, আরফা, বীণা থেকে শুরু করে আজকের সঙ্গীতা বা মুক্তি। কেউ সরাসরি এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে, কেউ কেউ প্রাক্তন ছাত্রী হিসাবে রুখে দাঁড়িয়েছে নিজেদের বিয়ের বিরুদ্ধে। কেউ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দেশের ‘রোল মডেল’ হয়েছে। কেউ জিতেছে জাতীয় সাহসিকতার পুরষ্কার। জেলার সহকারী শ্রম কমিশনার প্রসেনজিৎ কুণ্ডুর কথায়, “এই লড়াই কিন্তু শুরু হয়েছিল পিছিয়ে পড়া জেলা পুরুলিয়া থেকেই।”
আড়শা থানার হাড়মাডি গ্রামের মুক্তি, পুরুলিয়া মফস্সল থানার লাগডি গ্রামের সঙ্গীতা বাউরি বা বাঘমুণ্ডির ভুরমু গ্রামের বীণাএরা সকলেই নিজেদের পড়ার জেদে অবিচল থেকে বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ রুখে দিয়েছিল। বীণা যেমন পাঁচ-পাঁচ বার পাত্রপক্ষের মুখের উপরে না বলেছিল, তেমনই মুক্তি বলছে, “আমাকে গ্রামের মেলা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এক যুবক। বলেছিল, বিয়ে করবেই। আমি জোর করে বলি, বিয়ে করব না।”
মেয়ে সঙ্গীতার সঙ্গেই দিল্লি যাচ্ছেন বিভূতি বাউরি। তিনি বলেন, “আমি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ ওর জন্যই আমি দিল্লি যাচ্ছি।” জীবনে এ যাবৎ কোনও দিন পুরুলিয়া শহরের বাইরে পা না রাখা, পেশায় রিকশাচালক বিভূতিবাবুও এ দিন মেয়েদের সঙ্গে চেপে বসলেন রাজধানী এক্সপ্রেসে। একই অভিজ্ঞতা বীণা কালিন্দীর মা রমনীদেবীর। তাঁর কথায়, “আমি কখনও পুরুলিয়া শহরই দেখিনি। মেয়ের জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব। ভাল লাগছে। আজ মনে হচ্ছে, ওকে বিয়ে না দিয়ে ভালই করেছি।” মুক্তির বাবা, পেশায় দিনমজুর মেঘু মাঝিও এই প্রথমবার জেলার বাইরে পা রাখবেন। তিনিও ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হবে ভেবে। তিন কন্যা জানিয়েছে, তারা রাষ্ট্রপতির জন্য ছৌ-এর মুখোশ, আদিবাসী নারী-পুরুষের মুখোশ ও গালার চুড়ি নিয়ে যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.