সোমবার প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে রাজ্যে জোট শরিক তৃণমূল ও কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে গণ্ডগোলে জঙ্গিপুর কলেজে আহত হলেন ৩ ছাত্র। শেষ পর্যন্ত বিকেল ৩ টে নাগাদ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সহ পুলিশের বড় কর্তারা গিয়ে কলেজ চত্বর থেকে দু’টি সংগঠনের সমর্থক-সদস্যদের বার করে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশ ওই এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করে। সন্ধ্যায় তৃণমূল সমর্থকেরা ওই ব্যক্তির মুক্তির দাবিতে রঘুনাথগঞ্জ থানায় বিক্ষোভও দেখায়। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, তার খোঁজও চলছিল। তাই তাকে ছাড়া হবে না। ঘণ্টা দু’য়েক পরে বিক্ষোভ উঠে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় কলেজগুলির ভোট হবে সামনের ১৭ ডিসেম্বর। যত তার দিন এগিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনার পারদ চড়ছে বিভিন্ন কলেজে। সম্প্রতি বহরমপুরে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে বারবার গণ্ডগোল হয়েছে। জঙ্গিপুর কলেজেও সেই একই গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। মাস খানেক ধরে দফায় দফায় গণ্ডগোল চলছে এই কলেজে। সেই অশান্তির জন্য কলেজ বন্ধও করে দিতে হয়েছে দু-দু’বার।
জঙ্গিপুর কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২৯টি আসনে। ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল হওয়ার দিন স্থির হয়েছে। সোমবার কলেজে আসেন ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা। দু’পক্ষের সমর্থকদেরই ভিড় ছিল কলেজে। এরই মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে ঢোকেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজন নেতা। |
আর তা থেকেই শুরু হয় অশান্তি-মারপিট। ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ সাহা বলেন, “কলেজে আমাদের সংগঠনের ব্যানার লাগানো ছিল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা এসএফআইয়ের সমর্থকদের সঙ্গে জোট বেঁধে সেই ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছেন। তাঁরা কলেজে বহিরাগতদের নিয়ে এসেছিলেন গণ্ডগোল পাকানোর জন্য। তাতে আমাদের সমর্থকেরা বাধা দিলে তৃণমূলের বহিরাগতেরা আমাদের সমর্থকদের উপরে চড়াও হয়।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লক সভাপতি নাসিম শেখ বলেন, “ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। সেই মিথ্যা অভিযোগ তুলেই ছাত্র পরিষদ কলেজ চত্বরকে অশান্ত করে তুলতে চাইছে।” তাঁর কথায়, “গোটা কলেজ চত্বর জুড়ে ওরা ব্যানার টাঙিয়েছে, পোস্টার সেঁটেছে। আমরা যখন অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে যাই, তখন ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা আমাদের আক্রমণ করে। বারবার একই ভাবে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। এই নিয়ে চার দিন কলেজে এসে আমাদেরই মার খেতে হল” তাঁর দাবি, “অধ্যক্ষ কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। পুলিশও দাঁড়িয়ে দেখছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দিন কলেজ চত্বরে দুই পক্ষই বহু বহিরাগতকে নিয়ে হাজির হয়েছিল। তাদের মধ্যেই দফায় দফায় গণ্ডগোল হয়েছে। মারপিটও হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানা অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে কোনও মুখ খুলতে চাননি। তিনি কেবল বলেন, “নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে উত্তেজনা ও অশান্তি তত বাড়বে।” জঙ্গিপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আনন্দ রায় বলেন, “জঙ্গিপুর কলেজে এই দিন পুলিশ দু’পক্ষকেই কলেজ চত্বর থেকে সরিয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঠিক হয়েছে, যত দিন না কলেজে ভোট শেষ হচ্ছে, তত দিন পুলিশ মোতায়েন থাকবে।” |