প্রায় তিন দশক পরে হরিয়ানার জাঠ দুর্গ রাতিয়া বিধানসভা কেন্দ্রটি সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনে জিতেছে কংগ্রেস। ‘ঐতিহাসিক’ এই জয়ের পরে দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্ন, যে অণ্ণা-শিবির দেড় মাস আগে হিসার লোকসভার উপনির্বাচনে কংগ্রেসের হারের কৃতিত্বের তলানিটুকু পর্যন্ত নিতে চেয়েছিল, এখন তারা কী বলবে?
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্কের হাওয়ায় হরিয়ানার উপনির্বাচন সে ভাবে নজর কাড়েনি। কিন্তু তার ফলাফলে রীতিমতো উজ্জীবিত কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, শুধু মাত্র ৩০ বছর পরে রাতিয়া দখলই নয়, হরিয়ানার হিসার লোকসভার আওতায় আদমপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে হারলেও কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়েছে। রাতিয়া বিধানসভা কেন্দ্রটি ছিল হরিয়ানার জাঠ মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার দুর্গ। তিন দশক পর সেই দুর্গের পতন ঘটিয়েছে কংগ্রেস। সে কারণেই এই ফলাফল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে হরিয়ানার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বি কে হরিপ্রসাদের কথায়, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে যে কৃষকরা ভাল দাম পাবেন, সে কথা হরিয়ানার উপনির্বাচনে তুলে ধরেছিল কংগ্রেস। ফলে কেন্দ্রের এই নীতিতে যে কৃষকদের সায় রয়েছে, এই ফলাফল থেকে সেই উপসংহার টানাই যায়।” এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অণ্ণা-শিবির আজ অবশ্য কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। অণ্ণা ও তাঁর সঙ্গীরা লোকপাল নিয়ে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
হরিয়ানায় দলিত-নিগ্রহ থেকে শুরু করে খাপ পঞ্চায়েত সমস্যা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা সরকারের ভূমিকায় কিছুটা অসন্তুষ্টই ছিলেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড তথা সনিয়া গাঁধী। সে দিক থেকে দুই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ছিল হুডার মর্যাদার প্রশ্ন। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য উপনির্বাচনের ফলকে সেই ‘সীমিত প্রেক্ষাপটে’ দেখছেন না। বরং দুর্নীতি, অণ্ণাদের আন্দোলন, খুচরো বিতর্কের মতো ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেখতে চাইছেন। শুধু হরিয়ানা নয়, হিমাচল প্রদেশেও বিজেপির একটি আসন উপনির্বাচনে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। দলের নেতাদের আশা, অণ্ণারা যা-ই বলুন, শেষ পর্যন্ত যে প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যাবে, এ জয় যেন তারই ইঙ্গিত।
হরিপ্রসাদদের বক্তব্য, হিসার লোকসভা কেন্দ্র ছিল হরিয়ানার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ভজনলালের আসন। ভজনলালের মৃত্যুর পর সেখানে তাঁর পুত্র কুলদীপ বিষ্ণোই উপনির্বাচনে সহানুভূতি ভোট পেয়েছেন। তা ছাড়া জাঠ, অ-জাঠ মেরুকরণও হয়েছিল। তার পরেও কুলদীপের ওই জয়কে অণ্ণা হজারে ও তাঁর সঙ্গীরা নিজেদের ‘জয়’ বলে কৃতিত্ব নিতে দ্বিধা করেনি। কংগ্রেসের বক্তব্য, এর থেকেও মজার হল, অণ্ণাদের তুষ্ট করে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চায় বলে বিজেপিও এ নিয়ে কোনও প্রতিবাদ করেনি! এমনকী তারা এ কথাও বলেনি যে, এটা হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস ও বিজেপি জোটের জয়। হিসার লোকসভা কেন্দ্রের আওতাতেই রয়েছে আদমপুর বিধানসভা কেন্দ্র। আদমপুরে বিধায়ক ছিলেন কুলদীপ বিষ্ণোই। হিসার উপনির্বাচনে তাঁর জয়ে আদমপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি শূন্য হয়। সেই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে কুলদীপের স্ত্রী রেণুকা জিতলেও মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে সেখানে ১২ হাজার ভোট বেড়েছে কংগ্রেসের।
|