পুর্ণেন্দুকে ‘বয়কট’ স্থানীয়দেরই
স্বপন হত্যায় ধৃত পেশাদার খুনি
কেষ্টপুরের তৃণমূল নেতা স্বপন মণ্ডল হত্যার সঙ্গে যুক্ত আরও এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম শেখ আবদুল্লা। পুলিশ জানায়, আবদুল্লা পেশাদার খুনি। পুলিশের দাবি, স্বপনকে খুন করার জন্য তাকে ‘সুপারি’ দেওয়া হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার এসপি চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “কামারহাটি এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লার কাছ থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় রিভলভার, ৬ রাউন্ড গুলি এবং একটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন পাওয়া গিয়েছে।” স্থানীয় বিধায়ক পূণেন্দু বসু সোমবার কেষ্টপুরে একটি অনুষ্ঠানে গেলে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে বয়কট করেন। এর ফলে দলে ‘ঐক্য’প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও বড় ধাক্কা খেল।
গত ২৭ নভেম্বর কেষ্টপুর মোড়ে ভরদুপুরে খুন হন স্বপনবাবু। ওই ঘটনার পরে পুলিশ এলাকার দুষ্কৃতী বিশ্বজিৎ ওরফে টুলকোকে গ্রেফতার করে। পরে ধরা হয় রাধাকান্ত ঘোষ নামে এক অস্ত্র সরবরাহকারীকে। পুলিশ জানায়, তাদের জেরা করে ধরা হয় এলাকার তৃণমূল নেতা পার্থ সরকারকে। পুলিশের দাবি, পার্থই ওই হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারী। এই গ্রেফতারের পরেই এলাকার তৃণমূল কর্মী-নেতারা প্রকাশ্যেই দলের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এলাকার বিধায়ক তথা শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর গোষ্ঠীর চাপেই পুলিশ পার্থকে গ্রেফতার করেছে। পূর্ণেন্দুবাবু অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
রাজারহাটে পূর্ণেন্দু। নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ কর্তারা দাবি করেছিলেন, টুলকোই গুলি চালিয়ে স্বপনকে খুন করে বলে জেরায় কবুল করেছে। পুলিশ জানায়, টুলকোর কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র। তাকে জেরা করেই মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে পার্থকে ধরা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের ওই দাবির মধ্যে যে অসঙ্গতি রয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শী রঞ্জিত ও সুকুমারের বয়ান থেকেই তার ইঙ্গিত মিলছিল। ওই দু’জনেই জানিয়েছিলেন, টুলকোকে তাঁরা ভালই চেনেন। সে দিন সে ঘটনাস্থলেই ছিল না। স্বপনকে খুন করে তিন অপরিচিত যুবক। তাদের এক জনের হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এ দিন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সহ আবদুল্লাকে গ্রেফতারের পরে ঘটনাপ্রবাহ পুলিশের বক্তব্যের সেই অসঙ্গতির দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। এ ব্যাপারে রাজারহাটের তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত দেবনাথ বলেন, “আবদুল্লাকে ধরার পরে প্রমাণ হল, পার্থকে বিনা দোষে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবদুল্লাকে জেরা করলেই ওই ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারীর নাম জানা যাবে।” এ ব্যাপারে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “টুলকো বা এদের কাউকে আমি চিনি না। তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আইন নিজের পথেই চলবে।”
পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি রাজারহাটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাপা দিতে দলের ‘ঐক্যবদ্ধ’ ছবি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু বাস্তবে তা যে এখনও হয়নি, তা সোমবার পূর্ণেন্দুবাবু অনুষ্ঠানে প্রকট হয়ে গিয়েছে। এ দিন ওই অনুষ্ঠান কার্যত বয়কট করেছেন এলাকার তৃণমূল কর্মী-নেতারা।
স্বপন হত্যার ৮ দিন পরে, সোমবার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কেষ্টপুরে যান পূর্ণেন্দুবাবু। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাস খানেক আগে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঝুপড়িবাসীদের নতুন ঘর তৈরি করে দিয়েছে রাজ্য। এ দিন ঝুপড়িবাসীদের ওই নতুন ঘর বিতরণের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এলাকার তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের বড় অংশই অনুষ্ঠানে হাজির হননি বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তাঁদের অভিযোগ, পূর্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে ছিলেন দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার কর্মীরা। দলবিরোধী কাজের জন্য রাজারহাট এলাকার যে তৃণমূল কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেই নেতাকেও পূর্ণেন্দুবাবুর অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে দেখা যায়। অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি স্থানীয় তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত দেবনাথকেও। জয়ন্তবাবু বলেন, “এই অনুষ্ঠানের কথা আমরা কিছুই জানি না।” এ ব্যাপারে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি পূর্ণেন্দুবাবু। তবে স্বপন হত্যার প্রসঙ্গে এ দিন তিনি বলেন, “কেষ্টপুরে গত ৭ দিন ধরে যে কাণ্ড চলছে তা উন্নয়ন-বিরোধী।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.