|
|
|
|
|
শীতের পাওনা ওম |
বাতাসে শিরশির। একটু একটু করে শীতল হচ্ছে আশপাশ।
শরীর থেকে দিচ্ছে উঁকি ফুলছাপ স্টোল, ফো-ফারের স্কার্ফ,
কান ঢাকা টুপি এবং লেগ-ওয়ার্মারের দল। চিরশ্রী মজুমদার |
বঙ্গজ শীত হাড় কাঁপিয়ে দেয় না ঠিকই, তাই বলে তাকে হেলাফেলাও করবেন না। হতেই পারে, সামনে মাসের দু’একটা দিন সে হঠাৎ করে চমকে দিল। ভিজে ভিজে শিরশিরে হাওয়া, তাপমাত্রা দশের কাছটিতে ঘুরঘুর। কলকাতাই তো, নাকি গিরিডি-মধুপুর? আরে, ঠিক জায়গায় বল রাখলে পাড়াতুতো বোলারকেও তো অ্যালান ডোনাল্ড-গ্লেন ম্যাকগ্রা মনে হয়। খামোখা তার বাউন্সার, মানে ঠান্ডা লাগা সংক্রান্ত অসুখে ভুগবেন কেন? বরং হেলমেট, আর্মগার্ড, লেগগার্ড সব নিয়ে নেমে পরুন। বুঝলেন না? ওই যে, কানঢাকা টুপি, মাফলার, স্কার্ভস এটসেট্রা, এটসেট্রা। আমাদের খেলোয়াড়টি আনাড়ি তো কি? জাতে শীত তো, ফ্যাশন জ্ঞানটি তাই দিব্য টনটনে।
|
শীতের টুপি, শীতকে টুপি |
মাঙ্কিক্যাপকে বাদ দিলে, শীতের বাকি চেনা-জানা টুপিরা হল, ছেলেদের স্কাল ক্যাপ, আর মেয়েদের বিনি। অর্থাৎ থুপি ঝোলানো উলের টুপি। সেটা লাল টুকটুকে হলেই বড়দিনের সাজের বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। এই ধরনের টুপি কানকে সযত্নে ঢেকে রাখে। শীতের প্রকোপ বাড়লেও, চট করে ঠান্ডা লাগে না। নিটেড মেটেরিয়ালের উইন্টার ক্যাপ কিনুন। পশম কিংবা অন্য কোনও গরম তন্তু দিয়ে বোনা। যেমন বেরেট। কান ঢেকে পরার পরও ডিজাইনগুণে এক দিকে অল্প নুয়ে থাকবে। ইউরোপে তরুণ সৈন্যরা এই ধরনের টুপি ব্যবহার করতেন। মেয়েরা আরও এক ধরনের থার্মাল ক্যাপ কিনতে পারেন। এর মাথার অংশটা বেশ ঢাউস হওয়ায়, প্রয়োজন মতো, কান ছাড়িয়েও অনেকটা নামিয়ে আনা যায়। সামনের অল্প একটু কানা থাকে, সেটাকে সামান্য ঘুরিয়ে পরুন। |
মাফলার, স্কার্ফ এবং ইয়ার-মাফ |
অনেক নামী ব্র্যান্ডই টুপি ও মাফলার একত্রে সাজিয়ে রেখেছে। তাতে সুবিধা এই যে টুপির রং ও মেটেরিয়াল-এর সঙ্গে মানিয়ে মাফলারটিও বেশ আকর্ষক। ম্যাচিং খোঁজার ঝামেলা আর থাকে না। অন্যথায় শুধু মাফলারও অঢেল রয়েছে। রয়েছে স্কার্ফও। দু’টোই গলায় নানা কায়দায় জড়ানো যায়। মোদ্দা পার্থক্য এটুকুই যে, মাফলার উলের বা একটু মোটা কাপড়ের, জাঁকালো শীতে কাজে দেয়। আর স্কার্ফ খানিক পাতলা, হালকা শীতকে সামলে দেয়। মাফলার-এ চেক, স্ট্রাইপ ও রংচঙে প্রিন্ট প্রচুর পাবেন। তবে রোজের জন্য একটা ধূসর রঙা উলি মাফলার কিনে রাখুন। ময়লা হবে না, সব পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যাবে।
ব্র্যান্ডেড স্কার্ফে ফুলছাপ বা জ্যামিতির নানা আকৃতি নকশা করা। তবে কলকাতায় বেশি চলে মিক্সড সিল্কের স্কার্ফ। ওতে একটা মিষ্টি ওম পাওয়া যায়, এবং গাজর রং, হালকা বেগুনি, ইত্যাদি রামধনুর সুবাদে বেশ দৃষ্টিনন্দন। এগুলি গলায় এক বার, বা দু’বার জড়িয়ে রাখা যায়। একটি টাইয়ের নটের মতো আলগা ফাঁস বা গিঁটও দিয়ে রাখতে পারেন।
ছেলেদের জন্য আছে বড় বড় স্কটিশ চেক বা বরফি আঁকা স্কার্ফ। দুটো রঙের মিশেল দেখে কিনুন। সাদা-কালো, নীল-ধূসর, ইত্যাদি। পরার সময়ও কায়দা চাই। গলার নীচে ভি অক্ষরের মতো ডিজাইন করা, ওয়ার্ম-শার্ট কিনুন। এ বার বুকের খোলা অংশে, তিনকোনা
করে স্কার্ফটি মেলে রাখুন।
স্টোল স্কার্ফের মতো গলায় জড়িয়েও রাখা যায়, চাদরের মতো ব্যবহারও করা যায়। জিনিসটি নিখাদ ভারতীয়, তাই শৌখিন, কারুকার্যশোভিত স্টোল কিনতে স্টেট এম্পোরিয়ামে চলে যান।
হাওয়া বইলে ইয়ার-মাফ পরুন। পশমের হেডফোন। গান শোনা যায় না, তবে ভাল শীত আটকায়।
|
ফো ফার ও লেদার গ্লাভস |
শব্দ ও স্টাইলটি ফরাসি। ‘FAUX FUR’, অর্থাৎ নকল ফার। আঠেরো ও উনিশ শতকের ইউরোপীয় রাজঘরানার ফ্যাশন। সিন্থেটিক লোম দিয়ে তৈরি স্কার্ফ, জুতো বা ব্যাগ। হঠাৎ দেখলে মনে হয় আদুরে লোমশ পোষ্যটি হাতে, বা গলা জড়িয়ে রয়েছে। খুব নাটুকে রেট্রো সাজ, খোদ হলিউডও বেজায় ভেবে-চিন্তে ব্যবহার করে। তবে ইদানীং কলকাতায় পাওয়া যাচ্ছে, ফ্যাশন-পাগল ললনারা বৎসরান্তের পার্টি-পার্বণের জন্য ভেবে দেখতে পারেন।
একই কথা ফ্যাশন গ্লাভসের বিষয়েও প্রযোজ্য। জংলা সবুজ, চেরি বা মেরুন রঙা লেদারের গ্লাভস চেন, পাথর, সিক্যুইন বিবিধ সাজে সজ্জিত। বিধিসম্মত সতর্কীকরণ হল, রকস্টার-পপস্টার গোছের সাজ-‘অ্যাটিটিউড’ বিনা একেবারেই বেমানান। হ্যান্ড ওয়ার্মার্স ও লেগ ওয়ার্মার্স
এই শীত-ফ্যাশন এসেছে ব্যালে নর্তকীদের অনুকরণে। যেমন ধরুন মোজা, কিন্তু পায়ের পাতার অংশটি নেই। ওটিই লেগ-ওয়ার্মার্স। পশম, উটের লোম বা সাধারণ সুতির তৈরি, বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে পাওয়া যাবে। ধরুন লম্বা ঝুলের পুলওভার পরলেন, সঙ্গে লেগিংসের বদলি স্ট্রাইপড লেগ ওয়ার্মার্স, আর পায়ে পেনসিল হিল পাম্প জুতো। আগে বলা থার্মাল ক্যাপ ও লেদার গ্লাভস-এর সঙ্গে দুর্দান্ত মানাবে।
অনুরূপে হাতের জন্য পাবেন নানা দৈর্ঘ্যের হ্যান্ড ওয়ার্মার্স। লেগ-ওয়ার্মার্স ভীষণ স্টাইলিশ, কিন্তু হ্যান্ড ওয়ার্মার্স আবার একটু ক্যাম্পাস সাজ। ছোট হাতার জ্যাকেট বা গরম পোশাকের সঙ্গে পরলে ঠান্ডায় আরাম পাবেন। এই টুকরো ফ্যাশনে তালুর অংশটি থাকে না বলে, গ্লাভস পরবেন না যেন, জবরজং দেখাবে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, শহরে আন্তর্জাতিক পোশাক বিপণি (এই তালিকায় মাল্টিব্র্যান্ডেড আউটলেট নেই) ভিন্ন এই ধরনের পোশাক পাওয়া কঠিন। বিশেষত, এই শহরে ট্রেন্ডটি একেবারেই নতুন, তাই কোনও কোনও দোকানি হ্যান্ড ওয়ার্মার্সকে রিস্ট বা এলবো ব্যান্ড-এর সঙ্গে মিশিয়ে ফেলছেন। বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। |
|
|
|
|
|