ভর্তি থাকা এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুতে গাফিলতি ও মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালাল ক্ষিপ্ত জনতা। শুক্রবার শহরের কাছেই বামচাঁদাইপুরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে গোলমাল। পরিস্থিতি সামলাতে র্যাফ নামাতে হয়। তবে রাত পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
যার মৃত্যু হয়েছে, পবিত্র সাহা (১১) নামের রায়নার বুজরুকদিঘি হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির সেই ছাত্র বুধবার দুপুরে কাইতির কাছে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। স্কুলের কাছেই বর্ধমান-আরামবাগ রাস্তায় মোরামের স্তুপ থেকে গড়িয়ে সে ট্রাকের চাকার তলায় চলে যায়। মাথার পিছনে ও শরীরের কয়েক জায়গায় আঘাত লাগে। স্কুলের শিক্ষকেরা তাকে জি টি রোডের ধারে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন তাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করার পরেই গোলমাল বাধে। |
মোতায়েন পুলিশ ও র্যাফ। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
পবিত্রর বাবা মলয় সাহা সেহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম উপপ্রধান। তাঁর অভিযোগ, “আমার ছেলের স্ক্যান রিপোর্টে কোনও বড় চোট পাওয়া যায়নি। আলট্রাসোনোগ্রাফিতে দেখা যায়, লিভারে আঘাত লেগেছে। কিন্তু কোনও চিকিৎসা শুরু না করে প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে জানানো হয়, পেটে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ওই অস্ত্রোপচারের পরেই ও মারা যায়। কিন্তু তার পরে আইসিসিইউ-তে দেহ রেখে দিয়ে এ দিন সকালে বলা হয়, ছেলে মারা গিয়েছে।”
বেসরকারি হাসপাতালের সিনিয়র ম্যানেজার মৃণালকান্তি গুহ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ছেলেটি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসেছিল। আমরা যত দ্রুত পেরেছি অস্ত্রোপচার করেছি। এই অস্ত্রোপচার যে যথেষ্ট ঝুঁকির, তা আগাম জানিয়ে ওর বাবাকে দিয়ে দু’বার বিশেষ ‘রিস্ক বন্ড’ও লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। ছেলেটি অস্ত্রোপচারের ধকল সামলাতে পারেনি। এতে আমাদের গাফিলতি কোথায়?”
মলয়বাবুর আত্মীয়-পরিজন ও অনুগামীদের অভিযোগ, পবিত্র কার্যত ‘বিনা চিকিৎসা’য় মারা গেলেও আইসিসিইউ-তে ১২ ঘণ্টা দেহ রেখে দেড় লক্ষ টাকার বিল চাওয়া হয়েছে। মলয়বাবু অবশ্য বলেন, “এই অভিযোগ ঠিক নয়। ছেলেটি অস্ত্রোপচারের পরেই মারা যায়নি। তাই আইসিসিইউ-তে আমরা ওকে বাঁচানোর যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি।” সকালে পবিত্রর মৃত্যু সংবাদ শুনেই সেহারাবাজার থেকে বেশ কিছু লোকজন দু’টি ট্রাক ভাড়া করে হাসপাতালে চলে আসেন। বিক্ষোভ শুরু হয়। হাসপাতালের কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। হাসপাতালের জানলার কাচ ভাঙে। |
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পবিত্রর বাবা। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ। |
খবর পেয়ে প্রথমে বর্ধমান থানা থেকে পুলিশ গিয়েছিল। পরে বেগতিক বুঝে র্যাফ নামানো হয়। শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর বাড়ির লোকেদের ‘আর্থিক ছাড়’ দেওয়ার কথা বলার পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। দুপুর ২টো নাগাদ পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে মৃতের পরিজনেরা হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে চলে যান। তবে রাত পর্যন্ত তাঁরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি।
বর্ধমান থানার আইসি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুরুতে যতই গোলমাল হোক, হাসপাতাল ও ছাত্রের বাড়ির লোকেদের মধ্যে সম্ভবত বোঝাপড়া হয়েছে। যেমন, হাসপাতাল চিকিৎসার সমস্ত খরচ ফেরত দেবে এবং ভাঙচুরের ঘটনায় কোনও মামলা রুজু করবে না। ছাত্রের বাড়ির লোকজনও হাসপাতালে বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন না। সম্ভবত সে কারণেই কোনও পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি।” |