|
|
|
|
জনমত না গড়ে অভিযানে বিপত্তি, বলছেন নিরুপম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিদ্যুৎ চুরি সম্পূর্ণ বন্ধ করা ‘কার্যত অসম্ভব’ হলেও, জনমত তৈরি করে তা অনেকটাই কমানো যায় বলে মনে করেন প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী নিরুপম সেন। সেই কৌশল নিয়ে তাঁর আমলে বিদ্যুৎ চুরি অনেকটাই কমানো গিয়েছিল বলে দাবি নিরুপমবাবুর। আবার প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রীর এ-ও উপলব্ধি, চুরি রোখার একটা ভাল উপায়, সুযোগ থাকলে আবেদনকারীকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেওয়া।
বামফ্রন্ট আমলে একটা সময়ে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বণ্টন সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হত ৪০ শতাংশের মতো। লাইন কেটে, পুলিশ নিয়ে অভিযান চালিয়েও, বিশেষ সুরাহা হত না। কিন্তু পরে বিদ্যুৎ চুরি নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে আসার পাশাপাশি জেলা স্তরে ব্যাপক জনমত তৈরি করে, সেই ক্ষতির হারই ধাপে-ধাপে ২৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল বলে দাবি নিরুপমবাবুর। এর জন্য তিনি জেলা পরিষদগুলিকেও কাজে লাগিয়েছিলেন বলে প্রাক্তন মন্ত্রী জানান।
কী সেই কৌশল? প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “স্থানীয় প্রশাসন, পঞ্চায়েত সদস্য, বিধায়ক, সাংসদ, প্রত্যকের সাহায্য নিয়ে জনমত তৈরি করে অনেকটাই সুফল পাওয়া যায়। এটাই আমার অভিজ্ঞতা।” নিরুপমবাবু বলেন, “ওই উদ্যোগে বিদ্যুৎ কর্মীদেরও সামিল করতে হয়। গ্রামবাসী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করে, বিভিন্ন মহলের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জেলায় জেলায় সভা করে, আমি বিদ্যুৎ চুরি অনেকটাই কমাতে পেরেছিলাম।”
নিরুপমবাবুর এই যুক্তি খানিকটা হলেও মেনে নিয়েছেন বণ্টন সংস্থার কর্তাদের একাংশ। তাঁরাও মনে করছেন, পয়লা ডিসেম্বর থেকে অভিযানে নামার আগে, রাজ্য জুড়ে জোরদার প্রচার চালানোটা উচিত ছিল। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে একটা পরিকল্পনা করে ধীরে সুস্থে অভিযানে নামলে, হয়তো মগরাহাটের ঘটনা এড়ানো যেত। সেটা না করে, একটু বেশি তাড়াহুড়োই করা হয়েছে বলে মনে করছেন কর্তাদের একাংশ।
গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ চুরি প্রসঙ্গে নিরুপমবাবু বলেছেন, নানা কারণেই গ্রামের বহু পরিবার হুকিং করে। কারওর বিল দেওয়ার ক্ষমতা নেই বলে করেন। আবার সঙ্গতি থাকলেও কেউ চুরি করে থাকে। কারণ সরকারের বিদ্যুৎ চুরিটাকে অনেকেই দোষের মধ্যে ধরেন না। বিদ্যুৎ চুরি করলে, কাউকে চোরও বলা হয় না। এটা খানিকটা সচেতনতারও অভাব বলে মনে করেন নিরুপমবাবু। তবে তাঁর মতে, চুরি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যুৎ কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ বণ্টনে পেশাদারিত্ব এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে।
এক বিদ্যুৎ কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে, তাঁরা বার বার বিধায়ক, সাংসদদের কাছে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন করেন। তাতে যে একেবারেই সাড়া পাওয়া যায়নি তা নয়। তবে ভোট ব্যাঙ্কের ভয়ে অনেক সময়ই নেতারা মানুষকে চটাতে চান না। তাই হুকিং দেখেও, কেউ বিদ্যুৎ চুরিতে বাধা দিতে চায় না। শুধু পুলিশ নিয়ে গিয়ে বা আইনের ভয় দেখিয়ে যে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা যায় না, তা মেনে নিচ্ছেন বিদ্যুৎ কর্তারাও। তাঁদের মতে, এর জন্য দরকার মানুষের সচেতনতা। আর তা বাড়াতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাহায্য প্রয়োজন।
নিরুপমবাবু জানান, তাঁর আমলে চুরি রুখতে সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থার সঙ্গে বণ্টন কোম্পানির একটি চুক্তি হয়েছিল। তবে তাঁর মতে, “বিদ্যুৎ চুরি বন্ধের অন্যতম দাওয়াই হল, সুযোগ থাকলে আবেদনকারীকে চটজলদি বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেওয়া। মনে রাখতে হবে বহু মানুষ আবার বিদ্যুৎ না পেয়েই চুরি করে থাকেন।”
নিরুপমবাবুর মতোই দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগই হুকিং সমস্যা মোকাবিলার অন্যতম পথ বলে মনে করেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। শুক্রবার সূর্যবাবু বলেন, “বাম আমলে হুকিং সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রচার চালানোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল। শুধু বললেই তো হয় না, দ্রত সংযোগ দেওয়াই একমাত্র সমাধান।” তবে বাম আমলে যে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্প সর্বত্র বাস্তবায়িত করা যায়নি, তা মেনে নিয়েছেন সূর্যবাবু। |
|
|
|
|
|