|
|
|
|
পরিস্থিতি তিমিরেই |
আর কি অভিযান করা যাবে, বিদ্যুৎ কর্তারা সংশয়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যুতের মাসুল না বাড়ানোর নীতিতে অনড় থাকায় প্রতিদিন বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির মাথায় চাপছে লোকসানের বোঝা। সেই বিপুল বোঝা কিছুটা লাঘবের জন্য চুরি বন্ধে অভিযানের দাওয়াই দিয়েছিল সরকার। মগরাহাটের ঘটনার জেরে বিদ্যুৎ চুরির বিরুদ্ধে অভিযানেও ইতি ঘটল কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেল!
রাজ্যের নির্দেশেই বিদ্যুৎ বন্ধের অভিযান শুরু করেছিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কিন্তু শুরুতেই যে ভাবে হোঁচট খেতে হল, তাতে অভিযানের ভবিষ্যৎ নিয়েই উদ্বিগ্ন সংস্থার কর্তারা। তাঁদের হিসেব, মাসুল না বাড়ানোয় চলতি আর্থিক বছরে কোম্পানির আর্থিক লোকসান হতে পারে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। আর হুকিং বন্ধ করে লোকসান বাঁচানো যেত সর্বসাকুল্যে ৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সম্ভাব্য ক্ষতির তুলনায় সাশ্রয়ের অঙ্কটি ছিল সামান্য। তবুও সংস্থার আর্থিক হাল দেখে, রাজ্যের নির্দেশে ওই টাকা বাঁচানোর জন্যও তাঁরা জোরদার অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের হিসেব, বিদ্যুৎ চুরি-সহ অন্যান্য কারণে বণ্টন সংস্থার এখন রাজ্যজুড়ে গড়ে লোকসান হয় ২৭ শতাংশের মতো। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করলে, সংস্থার আয় হয় ৭৩ টাকা। কিন্তু এই সমস্যা ছড়িয়ে গিয়েছে অনেক গভীরে। বিদ্যুৎ কর্তাদের বক্তব্য, এমন বহু জেলা রয়েছে, যেখানে ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করলে ঘরে ৪০ টাকাও আসে না। অর্থাৎ ৬০ টাকাই লোকসান হয়ে যায়।
ওই সমস্ত জেলায় আগে পুলিশ-প্রশাসন নিয়ে অভিযান চালিয়েও লাভ হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় সর্বত্রই ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ চুরি হয় বলে বণ্টন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মগরাহাটের যে অঞ্চলে বৃহস্পতিবার পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে অধিকাংশ পরিবারই বিদ্যুৎ ‘চুরি’ করে বলে অভিযোগ।
হুকিং কাটলেই যে সমস্যা মিটবে না তা বিদ্যুৎ কর্তারা জানেন। এ ব্যাপারে তাঁদের অভিজ্ঞতাও খুব ভালো নয়। এক বিদ্যুৎ-কর্তার কথায়, “দেখা যায় পুলিশ আর আমাদের কর্মীরা এলাকা ছাড়ার পর ফের কাটা তার জুড়ে নিয়েছেন স্থানীয় মানুষ।” ওই বিদ্যুৎ কর্তা বলেন, “ফের যখন অতিরিক্ত চাপে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যায়, আমরা গিয়ে দেখি পরিস্থিতি এতটুকুও বদলায়নি। কারণ লাইন কাটার পরও ফের হুকিং শুরু হয়ে যায়।
মগরাহাটের নৈনানের মানুষের অভিযোগ, ৩০০ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেও লাভ হয়নি। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দাবি, গত ছ’মাসে তাঁদের কাছে ১৫টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দরখাস্ত করেছিল। কোম্পানির কর্তারা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার যেখানে অভিযান হয়েছিল, সেখানে সরকারি তথ্যানুযায়ী ৮৫৮টি পরিবার রয়েছেন। তার মধ্যে বণ্টন কোম্পানির বৈধ গ্রাহক ১৬০ জন। বাকি যে সব বাড়ি বা দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে তার কোনওটাই বৈধ নয় বলে অভিযোগ। বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি, মগরাহাট, উস্তি থানা-সহ আশেপাশের অঞ্চলে এত বিদ্যুৎ চুরি হয় যে বছরে তিন থেকে চার বার ওখানকার ট্রান্সফর্মার জ্বলে যায়।
মগরাহাটের ঘটনার পরে রাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার এই হালের জন্য কে দায়ী তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের উপরেই দায় চাপিয়েছেন। বামফ্রন্ট জমানায় হুকিং সমস্যার সমাধান যে করে ওঠা যায়নি, সে কথা মেনে নিয়েই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের হাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই খারাপ হয়েছে। সূর্যবাবু বলেন, “হয় উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বিদ্যুৎ দফতরের ব্যাপারে কিছু জানেন না, অথবা ওঁকে এখনও ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতরের অধীন সরকারি সংস্থাগুলি ২০০৬ সাল থেকে সব সময় লাভ করে আসছিল। গত আর্থিক বছরেও ৯৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। এই লাভ কিন্তু হয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই।”
এখন প্রতি মাসে যে ২৫০ কোটি টাকা করে লোকসান হচ্ছে, সেটা কার বোঝা সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। সূর্যবাবু বলেন, “২০১২-র মধ্যে গোটা রাজ্যে বিদ্যুদয়ন করে ফেলার যে প্রতিশ্রুতি ওঁরা দিয়েছেন, তা পালন করুন এ বার!” রাজ্য সরকারের প্রতি বিরোধী দলনেতার কটাক্ষ, “হুকিং সমস্যার সমাধান বিদ্যুৎ সংযোগই হতে পারে। কেন আবেদন করেও সংযোগ আসেনি, সেটা না-দেখে গুলি চালিয়ে তো সমস্যার সমাধান হবে না!” |
|
|
|
|
|